রাজনীতি

নতুন বাংলাদেশের দিকনির্দেশনা: নাহিদ ইসলামের “জুলাই ঘোষণাপত্র” দেশজুড়ে আলোড়ন

ডেস্ক রিপোর্টঃ ২০২৪ সালের ভয়াল জুলাই বিপ্লব–যা বাংলাদেশে স্বৈরাচার পতনের ঐতিহাসিক ক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত—তার প্রায় এক বছর পর ১৯ মে ২০২৫, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল ও কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক শক্তিশালী বিবৃতিতে তিনি চার দফা জাতীয় রূপরেখা প্রকাশ করেন:

🔻 জুলাই ঘোষণাপত্র
🔻 জুলাই সনদ
🔻 স্থানীয় সরকার নির্বাচন
🔻 গণপরিষদ নির্বাচন

নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণাকে “নতুন প্রজাতন্ত্রের পথনকশা” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন,

“স্বৈরাচার পতন হয়েছে, কিন্তু মুক্তি এখনো অসম্পূর্ণ। আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক পূ生র্গঠন, জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া, এবং প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতামূলক কাঠামো গড়ে তোলা। এই চার দফা তার ভিত্তি।”


🟥 জুলাই ঘোষণাপত্র: দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা

এই ঘোষণাপত্রে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণ করে বলা হয়,

“এরা শুধু স্বৈরাচার পতনের কারিগর নন, বরং নতুন রাষ্ট্রের স্থপতিও।
এই ঘোষণায় আওয়ামী লীগকে “রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা, দলটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং আন্তর্জাতিক মানের অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলগত বিচারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয় যা প্রকাশ হবার কথা ছিলো ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ এ কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার অভাব ও সরকারের হস্তক্ষেপে ১৫ দিন অর্থাৎ জানুয়ারি ১৫,২০২৫ এর মধ্যে প্রনয়নের আশ্বাস দেওয়া হলেও ৫ মাস পার হতে চলল যা এখনো প্রনয়ন করা হয় নাই।


🟥 জুলাই সনদ: নতুন রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি

নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন যে, জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সাংবিধানিক কাঠামোতে রূপ দিতে হলে একটি “জুলাই সনদ” প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে থাকবে—

  • গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিকতা ও বিচারনিরপেক্ষতা
  • সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা
  • বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা
  • প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে “নাগরিক অধিকার” বিষয় বাধ্যতামূলক করা

🟥 স্থানীয় সরকার নির্বাচন: জনশক্তির বিকেন্দ্রীকরণ

জুলাই সনদের ভিত্তিতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হয়।

“গণতন্ত্র কেন্দ্রীভূত থাকলে দুর্নীতি ও দমননীতি জন্মায়, আর বিকেন্দ্রীকরণেই জবাবদিহিতা আসে”—বলেন নাহিদ।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে কেবল নির্দলীয় নাগরিক, যাতে জনগণ সরাসরি পরিচিত প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে পারে।


🟥 গণপরিষদ নির্বাচন: নতুন সংবিধানের জন্মভূমি

নাহিদ ইসলাম আরও জানান, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ একটি নির্দলীয় গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানানো হবে, যা নতুন সংবিধান রচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে।
এই গণপরিষদে প্রতিনিধিরা দলে নয়, বরং অঞ্চলভিত্তিক ও পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব করবেন।

“এবার সংবিধান হবে জনগণের হাতে, পার্টির হাতে নয়।” – বলেন নাহিদ।


🔎 রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। কেউ একে বলছেন “বাংলাদেশের নতুন গণতান্ত্রিক চুক্তি”, কেউ বলছেন “আদর্শিক পুনর্জাগরণ”। তবে ক্ষমতাসীন বাহিনী এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন,

“নাহিদ ইসলাম মূলত এক পোস্টেই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সংবিধান, নির্বাচন এবং রাষ্ট্র কাঠামোর খসড়া রূপরেখা তুলে দিয়েছেন। এটি উপেক্ষা করা রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে।”


📌 উপসংহার

২০২৫ সালের ১৯ মে হয়তো ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে লেখা থাকবে। “জুলাই বিপ্লব”–এর সাহসী উত্তরাধিকার আজ একটি সুসংগঠিত আন্দোলনের পথে রূপ নিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, রাষ্ট্রীয় শক্তি তা দমন করতে চায়, নাকি সেই পরিবর্তনের অংশ হতে চায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button