📰 টাকায় প্রতিকৃতি: সম্মান নাকি কাল্ট?

ডেস্ক রিপোর্টঃ “টাকাতে ছবির ব্যবহার মানুষকে কাল্ট বানায়, যা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে”—এই কথাটি এখন শুধু একটি মত নয়, বরং একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বার্তা। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক দেশে রাষ্ট্রীয় মুদ্রায় নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতিকৃতি ছাপার প্রবণতা রয়েছে। উদ্দেশ্য: শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, ইতিহাস সংরক্ষণ। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় অন্যরকম।

---

🧠 ছবির জাদু থেকে ‘পুজা’—কাল্ট সংস্কৃতির উত্থান

নোটে বা মুদ্রায় কোনো ব্যক্তির ছবি মানে, প্রতিদিন কোটি মানুষের চোখে সে ছবি যাওয়া, তার সামনে হাত ধরা, দাম মাপা, মূল্য গণনা। এটিকে একরকম অবচেতন ‘দৈনন্দিন পূজা’ বলা যায়। এই প্রতিকৃতি ধীরে ধীরে “মানবিক নেতা” থেকে “ঈশ্বরসদৃশ চরিত্রে” রূপান্তরিত হয়—যা কাল্টের জন্ম দেয়।

---

🌀 কাল্ট যখন বিপদ হয়ে ওঠে

কাল্ট মানে কোনো ব্যক্তিকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। ফলাফল হয় বিপরীত:

• ইতিহাস বিকৃতি ঘটে
• নতুন প্রজন্ম গঠনমূলক আলোচনা থেকে দূরে থাকে
• ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে
• অবশেষে, যখন সেই ব্যক্তি বা তার আদর্শ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখন সেই নোটের প্রতিকৃতি বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে—অর্থাৎ, মানুষ ক্ষোভে বা বিদ্রোহে সেই ছবির বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়।

---

🇧🇩 বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিকৃতি বিতর্ক

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মুদ্রায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে। বিগত সরকারপন্থী মহলে এটিকে ‘ঐতিহাসিক সম্মান’ বলা হলেও, বিরোধী রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের একাংশ এটিকে “রাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্বপূর্ণ স্মৃতি নির্মাণ” বলেছিলেন।

বিশেষত, যখন আগের সরকার তার জনপ্রিয়তা হারায়, তখন এই প্রতিকৃতি অনেকের কাছে ক্ষমতার প্রতীক, এমনকি প্রতিবাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়।

---

🔁 যেভাবে বুমেরাং হয়

• একসময় যে ছবিকে রাষ্ট্রের প্রতীক বলা হয়, পরবর্তীতে অনেক মানুষ সেটিকে শাসনের প্রতীক বলে ঘৃণা করতে শুরু করে।
• ইতিহাস দেখায়, বহু দেশে কাল্টভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থাকে বিদ্রোহের সময় জনতা জ্বালিয়ে দিয়েছে বা ছিঁড়ে ফেলেছে।
• কাল্ট যখন ভেঙে পড়ে, তখন সেই প্রতিকৃতি নেতার পবিত্রতা নয়, বরং তার ‘ভুলের প্রতীক’ হয়ে যায়।

ব্যক্তির ছবি দিয়ে ইতিহাস নয়, কাজ, নীতি ও প্রতিষ্ঠান দিয়ে ইতিহাস গড়া উচিত। কারণ, ব্যক্তি নশ্বর, কিন্তু প্রতিষ্ঠানই জাতির স্থায়িত্বের ভিত্তি।