৯ বছরেও হয় নি, লালমাই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন! অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলাবাসী

মোঃ জাহাঙ্গীর আলমঃ কুমিল্লা লালমাই উপজেলায় ৯বছরেও স্থাপন হয় নি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন! উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৯ মার্চ প্রশাসনিক পুর্নর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১১৩তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ৮টি এবং লাকসাম উপজেলার ১টি ইউনিয়ন নিয়ে লালমাই উপজেলা গঠিত হয়।
উপজেলা গঠনের পর থেকে এখানে নতুন-নতুন আবাসিক ও দোকানপাট, মিল-কারখানা গড়ে উঠে। কিন্তুক উপজেলা অঞ্চলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে।
এদিকে উপজেলা পরিষদ ও থানার অস্থায়ী কার্যালয় ছাড়াও পল্লী বিদ্যুতের একটি জোনাল অফিস রয়েছে উপজেলা সদরের বাগমারায়। ২০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১ডজন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে উপজেলায়। রয়েছে মেঘনা গ্রুপের একটি শিল্প কারখানা। ফার্নিচারের ৪টি ফ্যাক্টরিসহ শতাধিক উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাঁচ শতাধিক বহুতল ভবন রয়েছে। দুটি স্নাতক কলেজ, ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৪টি মাদ্রাসা ও ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে । এসব স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা অঞ্চলের বড় বড় কয়েকটি বাজার রয়েছে, তারমধ্যে বাগমারা বাজার,ভূশ্চি বাজার, হরিশ্চর বাজার, হাজতখোলা বাজার, গৈয়ারভাঙ্গা বাজার, আলীশ্বর বাজার, আনন্দ বাজার, দূর্গাপুর বাজার। এমতাবস্থায় এখানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করা সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে।
২০২৩সালের ১২ জানুয়ারি লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারস্থ কলাপট্টি ও পালপট্টিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সদর দক্ষিণ ও লাকসাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ততক্ষণে আগুনে বাজারের ১৬টি দোকানের সবকিছু পুড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায়। অপরদিকে, ২০২২সালে উপজেলার ভুশ্চি বাজারেও এমন অগ্নিকান্ড ঘটেছে। যেখানে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে। ২০১৮সালে বাগমারা জিরো পয়েন্টে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে সেই সময় প্রায় কয়েক কোটি টাকা সম্পদ অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সম্প্রতিক উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের মাতাইনকোট গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী সুজন মিয়ার নতুন বাড়িতে গ্রামের লোকজন পানি ছিটিয়ে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয় ঘর ও আসবাবপত্র। এতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বলে পরিবারটির দাবি।
বাগমারা ব্যবসায়ী মো.তাজুল ইসলাম জানান, ‘আমরা অনেকবার দাবি জানিয়ে আসছি, উপজেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন মহলের কাছে এখানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করার জন্য কিন্তুক আজও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই।’
লালমাই উপজেলা যুব উদ্যোক্তা যুব সেবা ফাউন্ডেশন জেএসএফ’র সভাপতি রুবেল হোসেন বলেন, ”এ অঞ্চলের মানুষ হুমকি মুখে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন না থাকায়, যেকোনো মুর্হূতে এখানে বড় ধরনের দূর্ঘনা ঘটতে পারে তাই আমাদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে লালমাই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করতে হবে।”
উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক মো.নোমান হোসেন জানান, ‘ এ অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করার মতো লোক থাকলে এ পরিবেশ সৃষ্টি হতো না, দীর্ঘদিন দেশে দায়িত্বশীল সরকার না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করব, কিভাবে এখানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন অতি তাড়াতাড়ি করা যায়। ‘
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “লালমাই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের জন্য এখনও সরকারের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। চেষ্টা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জন্য।”