এক্সক্লুসিভ

নতুন ২০০ টাকার নোটে “জুলাই বিপ্লব”: শিশুদের গ্রাফিতিতে এক অসমসাহসিক সময়ের প্রতিচ্ছবি

ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বাজারে ছেড়েছে একটি নতুন ২০০ টাকার নোট, যার ডিজাইনে যুক্ত করা হয়েছে কিছু শিশুর আঁকা গ্রাফিতি। কিন্তু এই নোট শুধু একটি মুদ্রা নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি সময়ের স্মারক, একটি আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি, এবং শহীদ শিশুদের প্রতি এক শ্রদ্ধার নিদর্শন।

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব ছিল একটি অভূতপূর্ব গণআন্দোলন, যেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ১১২ জন শিশু। যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত নয়, বরং একটি বেসামরিক রাজনৈতিক আন্দোলনে শিশুদের এইভাবে শহীদ হওয়ার ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসেই বিরল। এই ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণেই শিশুদের আঁকা ছবি নতুন ২০০ টাকার নোটে স্থান পেয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে লেখক ও আন্দোলনকর্মী সাদিক খান লিখেছেন,
“নোটটা আমার কাছে সৌন্দর্য মাপার মাপকাঠি না, নোটটা আমার কাছে নষ্টালজিয়া।”
তিনি বলেন, জুলাইতে আন্দোলনের সময় স্কুল পড়ুয়া অনেক শিশু তাদের কোমল হাতে দেয়ালজুড়ে এঁকেছিল স্বপ্ন, প্রতিবাদ আর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সেই ছবিগুলোই আজ নতুন টাকায় জায়গা পেয়েছে।

সাদিক খান আরও লিখেন,
“বরং হাসিনা এতোটাই ফেরাউন ছিলো যে স্কুলের পোলাপাইন, যারা মানচিত্র আঁকতে শিখে নাই, তারাও নেমে গেছিলো আন্দোলনে। একটা জেনারেশন, মানচিত্র আঁকতে শেখার আগে প্রাণ দিতে শিখে গিয়েছিল।”

নতুন নোটে ব্যবহৃত গ্রাফিতিগুলো কোনো পেশাদার শিল্পীর আঁকা নয়, বরং আন্দোলনের সময় পথে নামা শিশুদের কাঁচা হাতে আঁকা দেয়ালচিত্র। সেই কাঁচা আঁকাই আজ হয়ে উঠেছে সাহসের প্রতীক, নন্দনের নতুন সংজ্ঞা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন, এই নোট তাদের জন্য শুধুমাত্র মুদ্রা নয়, বরং জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি বহনকারী এক মূল্যবান নিদর্শন।
“দেশের জন্য মরতে নামা সাহসী সন্তানদের চে বড় সৌন্দর্য, বড় নন্দন একটা দেশের জন্য আর কিছু নাই,” — লিখেছেন সাদিক খান।

তবে এই উদ্যোগের কিছু সমালোচকও আছেন, যারা বলছেন শিশুদের আঁকা এসব ছবি নোটে না দিয়ে দেশের ঐতিহাসিক কীর্তি বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা যেত।
কিন্তু বিপরীতে, যারা রাস্তায় ছিলেন, যারা হারিয়েছেন আপনজন, তারা এই ছবিগুলোকে দেখছেন “একটা সময়কে ধরা”র প্রয়াস হিসেবে।

এ যেন মুদ্রার মাধ্যমে ইতিহাস লেখা—যেখানে টাকা শুধু বিনিময়ের মাধ্যম নয়, বরং জাতির শোক, সাহস, ও সংগ্রামের এক নীরব ক্যানভাস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button