চট্টগ্রাম বিভাগ

স্বৈরাচার দোসর সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল গংদের খুঁটির জোড় কোথায় ?

মুহাম্মদ জুবাইর: জেলা প্রশাসকের উচ্ছেদের পরেও কোন ইশারায় পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় প্রতিস্থাপন করে বিদ্যুৎ চালিত অবৈধ প্রাণঘাতী রাইড

বিনোদন বঞ্চিত চট্টগ্রামবাসী পরিবার–পরিজন নিয়ে  দু’দন্ড প্রশান্তিতে বসার জন্য হরহামেশা ছুটে আসেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায়। ছুটির দিনগুলোতে অবসাদ কাটাতে এখানে সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। ঈদের সময়ে  পর্যটকদের আগমন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে পতেঙ্গার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অপার সৌন্দর্য গিলে খাচ্ছে ভাসমান দোকান ও অবৈধ রাইড শেয়ার। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে পর্যটকদের পা রাখার ঠাঁই নেই পতেঙ্গা সৈকতে। অপরদিকে অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ার তথা নৌকা, নগরদোলা ও চরকী ক্রমেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায়। 

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে ও পর্যটকদের ভ্রমন নিরাপত করতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন অনূমোদনহীন এইসব অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ার তথা নৌকা, নাগরদোলা ও চরকী উচ্ছেদ করে কিছুটা পর্যটকদের প্রশান্তির খোরাক যোগালেও উচ্ছেদের চার মাস পর ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে স্বৈরাচারের দোসর রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল ও বড় মিয়া গং বিগত এক সপ্তাহ পূর্বে পূণরায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় প্রতিস্থাপন করেন ছয়টি অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ার তথা নৌকা, নগরদোলা ও চরকী । পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতাকে মাসোয়ারা 

 দিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েচ্ছেন তারা। 

এরিসাথে স্বৈরাচারের দোসর রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল ও বড় মিয়া গং অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ার চালানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে হাত করে বিগত ৩ জুল রাত দশটায় একটি বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের বিধান অনুযায়ী যেখানে বৈধ মালিকানা জায়গা ছাড়া মিটার স্থাপন করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়! সেখানে অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ারের জন্য কিভাবে স্বৈরাচারের দোসর রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল ও বড় মিয়া গং বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন করে তা এখন জনমনে অন্যতম জিজ্ঞাসা। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের উচ্ছেদের পর আবারো বীরদর্পে প্রাণঘাতী অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ার প্রতিস্থাপন করে তা ভাবনার বিষয়। 

ঈদের আগের দিনে সরজমিনে দেখা যায়, স্বৈরাচারের দোসর রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল ও বড় মিয়া গং অবৈধ ইলেকট্রনিক রাইড শেয়ার তথা  নৌকা, নাগরদোলা ও চরকীউচ্ছেদকৃত স্থানে পূণবহাল? সৈকতের ওয়াকওয়ের অনেকটা এলাকা জুড়ে বৈদ্যুতিক  নৌকা, নাগরদোলা ও চরকী এতটাই ঝূঁকিপূর্ণ যে যেকোন সমন ঘটতে পারে প্রাণহানি। 

ঘূনিয়মান এইসব অবৈধ রাইড ঈদে আগত লাখো পর্যটকের চলাফেরায় বাঁধাঘস্থ করবে ঠিক তেমনি শিশু কিশোরদের মরণফাঁদ হিসেবে কাজ করবে বলে জানান অনেক পর্যটক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বৈরাচারের দোসর রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল ও বড় মিয়া ঈদে অনেকটা নিজেদের পকেট ভারী করতে পতেঙ্গা থানাকে ম্যানেজ করে  স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় এইসকল অবৈধ রাইড সৈকত এলাকায় ফিরিয়ে আসেন। রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল তাদের তিনটি করে বৈদ্যুতিক নৌকা, নগরদৌলা ও চরকী জন্য রুবেলের মাধ্যমে  পতেঙ্গা থানাকে প্রতি সপ্তাহে বিশ হাজার টাকা করে তিন জনে ষাট হাজার টাকা মসোয়ারা প্রদান করেন। এরিসাথে স্থানীয় প্রভাবশালী  নেতাকে  তিন জন প্রতি সপ্তাহে দশ‌ হাজার টাকা করে ত্রিশ হাজার টাকা প্রদান করেন। যদিও পতেঙ্গা থানা ও স্থানীয় প্রভাবশালী ঐ নেতা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন। 

এই ব্যাপারে রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল, নেজাম, কামাল ও বড় মিয়ার সাথে মুঠোফোন কথা হলে তারা স্বৈরাচারে দোসর নন এবং কখনো স্বৈরশাসকের সাথে কোন ধরণের সম্পর্ক ছিল না বলে জোড় দাবী করলেও উচ্ছেদের পর নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজেদের উদ্যোগে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবৈধ রাইড স্থাপনের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। 

এই ব্যাপারে রুবেল ওরফে সোর্স রুবেল বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় দুইটি বৈদ্যুতিক রাইডের অনুমোদন দেন। আমাদের রাইগুলোর অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও তা জেলা প্রশাসন থেকে কোন অনুমোদন দেননি। আমাদের রাইডগুলো চার মাস পূর্বে অননুমোদিত বলে জেলা প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ করে। চলতি সপ্তাহে আমরা নিজ উদ্যোগে উচ্ছেদকৃত রাইডগুলো পূর্ন স্থাপন করি।

এবিষয়ে নেজাম প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আমরা ব্যবসায়ী ঈদকে সামনে রেখে কোনরকম অনুমোদন না নিয়ে নিজ উদ্যোগে আমরা রাইডগুলো স্থাপন করি। এতে কোন রকম দুর্ঘটনা হলে সমস্ত দায়ভার আমাদের। বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন নিয়ে বলেন আমরা যথাযর্থ নিয়ম মেনে মিটার স্থাপন করেছি।

কামাল ও বড় মিয়া মুঠোফোনে প্রতিবেদককে এই বিষয়ে কোন রকম কথা না বলে প্রতিবেদককে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে তাদের সাথে দেখা করতে বলে ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার দায়িত্ব আমাদের না এটা ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্ব। তিনি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে কোন রকম মাসোয়ারা নেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানান। 

এবিষয়ে পতেঙ্গা টুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জএ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান খান মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান সৈকত এলাকায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের কাজ। এখানে বৈধ  অবৈধ স্থাপনা নিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই।  এটা জেলা প্রশাসকের কাজ। আর সৈকত এলাকা থেকে  কোন মাসোয়ারা আমরা গ্রহণ করি না।

এবিষয়ে পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েক মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, চার মাস পূর্বে আমরা এইসব অবৈধ বৈদ্যুতিক রাইড উচ্ছেদ করি। সম্প্রতি তারা আবারও উচ্ছেদকৃত বৈদ্যুতিক রাইডগুলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবৈধভাবে পুনঃ স্থাপন করেছে যা আমাদের নজরে এসেছে। এইগুলো গত সপ্তাহে আবারো উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও বৃষ্টির জন্য উচ্ছেদ করতে পারিনি। শ্রীঘ্রই এইগুলো উচ্ছেদ করা হবে। প্রাণঘাতী হলে আমি এখুনি ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button