প্রশাসন

শ্রমিকলীগ নেতা সুফিয়ান একই কর্মস্থলে ২১ বছর!!

রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত লাইনম্যান সুফিয়ানুর রহমান অদৃশ্য শক্তির ইশারায় যুগের পর যুগ টিকে আছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চল লাকসামে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে ইলেকট্রিক খালাসী পদে লাকসাম কাজে যোগদান করেন। আজ ২০২৫ সালের মে মাসের ২৮ তারিখ তার চাকুরীর বয়স হিসেব করলে দেখা যায় ২০ বছর ৪ মাস। তার মানে ২১ বছর চলছে তার কর্মজীবন একই যায়গায়।
২০১১ সালে প্রথম পদোন্নতি পেয়ে সহকারী ওয়ারম্যান এবং ২০১৬ সালে লাইনম্যান গ্রেড-২ পদে দ্বিতীয় পদোন্নতি পায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ (রেজিঃ নং বি-৩২০) এর নেতা হওয়ার সুবাদে পদোন্নতি পেয়েও তার স্থান ত্যাগ করার প্রয়োজন হয়নি। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী,পদোন্নতি হলে কিংবা একই স্থানে তিন বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই।
২০১৬ সালের কমিটিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ লাকসাম শাখার কমিটিতে সুফিয়ানুর রহমানকে “আন্তর্জাতিক সম্পাদক” পদে মনোনীত করে।
তথ্য অনুসন্ধান করে জানাযায়,ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ লাকসাম এর আওতাধীন লাকসাম -আখাউড়ার গঙ্গাসাগর, লাকসাম -ফেনীর মহুরীগঞ্জ এবং লাকসাম -নোয়াখালী স্টেশন পর্যন্ত রেলওয়ের বাসা-বাড়ি ও স্টেশনের বৈদ্যুতিক রক্ষনাবেক্ষন দায়িত্বে নিয়োজিত লাকসাম রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ। এসকল জায়গায় কাজ দেখভাল করেন লাইনম্যান গ্রেড-২ সুফিয়ান।
লাইনম্যান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে রয়েছে একগুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, মিটার বাইপাস, বাসা দখল, ১০বছর অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার, ষ্টোরের মালামাল চুরি করে বিক্রি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি।
এত অনিয়মের অভিযোগ থাকা স্বত্বেও প্রশাসন কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে একই স্থানে চাকুরী করে যাচ্ছে এই দাপটে শ্রমিক লীগ নেতা লাইনম্যান সুফিয়ানুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, লাকসাম রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত খালী বাসা রয়েছে আনুমানিক ৩০-৩৫টি। এসকল বাসা-বাড়ির সিলগালা ও তালা ভেঙে অবৈধভাবে বহিরাগত লোকজন দখল করে বসবাস করে আসছে। রেলওয়ের পক্ষ হতে “দিনে উচ্ছেদ রাতে বসবাস” এই শ্লোগানে উচ্ছেদের নামে লক্ষ টাকা খরচের ভাউচার দেখিয়ে ব্যাক্তিগত পকেট ভারী করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এসব খালী বাসায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাইনম্যান সুফিয়ান ও ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ লাকসাম কিশোর চন্দ্র দেব বর্মা সরকার কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে মাস শেষে লুফে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এছাড়াও রয়েছে মিটার বাইপাস ,লাকসাম রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ ব্যারাকে মিটার বিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানাযায়, লাইনম্যান সুফিয়ান কে কুমিল্লা স্টেশন পদায়ন দেখিয়ে কুমিল্লা স্টেশন সংলগ্ন মালী কলোনি, রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত খালী বাসা আনুমানিক ১০-১৫টিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ,স্টেশন সংলগ্ন বিভিন্ন দোকানে মিটার বাইপাস করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে সুফিয়ান লক্ষাধিক টাকা। এসকল কাজের মুল হোতা ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ লাকসাম কিশোর চন্দ্র দেব বর্মা। লাকসাম -কুমিল্লার স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে কিশোর -সুফিয়ান নৈরাজ্য।
জানাযায়, সুফিয়ানের নিজের নামে বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে তা ব্যবহার করেছে টানা ১০ বছর। নিজের নামে রেলওয়ের বরাদ্দকৃত কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে লাকসাম রেলওয়ে সরকারি রেষ্ট হাউজের পাশে (টি/৭-সি) বাসার সিলগালা ভেঙে দখল করে সপরিবার নিয়ে থেকেছেন। এই প্রসঙ্গে গত ৯অক্টোবর/২০২৩ সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়েছে।
নিউজ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার নামে বরাদ্দকৃত বাসা হতে অবৈধ গ্যাস সংযোগটি রাতের আঁধারে আবুল কালামের ছেলে কামাল কে দিয়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এই বিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর/২০২৩ রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক পূর্ব, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক চট্টগ্রাম, বিভাগীয় প্রকৌশলী/১ সহ বিভিন্ন দপ্তরে সুফিয়ানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এলাকাবাসী।
অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করে প্রতিবছর সরকার কে ফাঁকি দিয়েছে ১২হাজার ৯শ ৬০ টাকা। ১০বছর ব্যবহার করার ফলে ১লাখ২৯ হাজার ৬০০ টাকা ফাঁকি দিয়েছে ক্ষমতার দাপটে। যথার্থ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক লীগ ও সুফিয়ান এর ক্ষমতার দাপটে অভিযোগ ও সরকারি গ্যাস অপব্যবহারের অভিযোগ নিষ্পত্তি করে দেয় ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী/কার্য্য লাকসাম। তার নামে বাসা বরাদ্দ হওয়ার পর হতেই গ্যাস ব্যবহার করছে কিন্তু তার বেতন ভাতা হতে গ্যাস বিল কর্তন করা হয়নি।পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেই বের হবে গ্যাস সংযোগ এর মুল রহস্য।
তথ্য সূত্রে জানা যায়,ঈদুল ফিতর/২০২৫ ইং এর আনুমানিক এক সপ্তাহের পর লাকসাম বিদ্যুৎ বিভাগের ষ্টোরে রক্ষিত বিভিন্ন স্টেশনে পুরাতন বৈদ্যুতিক অকেজো ফিটিংস মালামাল (ইলেকট্রিক ওয়্যার) প্রায় আনুমানিক ২শ কেজি ২ বস্তা তার লুট করে রাতের অন্ধকারে বিক্রি করে সুফিয়ান বাহিনী। যার আনুমানিক মূল্য ১লাখ টাকা। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছে চোরে তালা ভেঙে চুরি করেছে। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তড়িৎ গতিতে
ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী/কার্য্য লাকসামকে দিয়ে ভাঙ্গা কাঠের দরজা সরিয়ে এসএস এর দরজা ফিটিং করিয়েছে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কিশোর চন্দ্র দেববর্মার নির্দেশে। এসকল অবৈধ বিদ্যুতের আয়ের টাকা দিয়েই সুফিয়ানের আপন দুই বড় ভাইকে রেলওয়ে মেকানিক্যাল বিভাগে সিলেট জেলায় চাকরি দিয়েছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ লাকসাম কিশোর চন্দ্র দেব বর্মা কে পুঞ্জি করে একক আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে এই সুফিয়ান।
অনুসন্ধানে জানাযায়, লাকসাম বিদ্যুৎ অফিসে নতুন/পুরাতন কোন কর্মচারী পোস্টিং নিয়ে যোগদান করতে আসলেই তার গতিবিধি প্রখর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সুফিয়ান সিন্ডিকেট। কোন কর্মচারী ছূটি/বিশ্রামে যেতে চাইলে সুফিয়ান সিন্ডিকেট এর অনুমতি লাগে। কখন কাকে কোথায়? ডিউটি করাবে সুফিয়ান নিজেই একক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।
সুফিয়ানের উপর কোন সিনিয়র কারিগর কিংবা মিস্ত্রি পদায়ন থাকলে কিশোর সুফিয়ান সিন্ডিকেট কোন মূল্যায়ন করেন না বরং তাদের উপর আধিপত্য খাটায়।
এ সকল বিষয় সুফিয়ানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গণ্য করেন ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ লাকসাম কিশোর চন্দ্র দেববর্মা।
লাকসাম রেলের কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভিজিট করতে আসলে সেখানে চলে সুফিয়ানের কর্তৃত্ব।
বর্তমানে লাকসাম বিদ্যুৎ অফিসে কিশোর সুফিয়ান অত্যন্ত কৌশলী আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button