এক্সক্লুসিভ

দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ ১৪ লাখ টন ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংকটে আতঙ্ক জ্বালানি তেলের বাজার

মোঃ জুবাইরঃ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য মতে দেশে বর্তমানে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে জ্বালানি তেলের মজুত ১৪ লাখ টন । যা দিয়ে আমাদের দেশের তেলে চাহিদি মেটানো সম্ভব ৪৫ দিনের।

এদিকে ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিলে নতুন সংকটে পড়বে দেশ। সংঘাত শুরুর পর পর থেকে  জ্বালানি তেলের কোনো জাহাজ দেশে না আসায় সংকটের আকাশে কালো মেঘ ধানা বেঁধেছে। যদিও চলতি ২৮ জুন বাংলাদেশে এক লাখ ক্রুড অয়েল বোঝাই  একটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। হরমুজ প্রণালি অতিক্রম করে জাহাজটির দেশে আসা নিয়ে  দুশ্চিন্তায় কারণ থাকলেও আশার বাণী শুনিচ্ছে‌ বিপিসি।

দেশে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল, মেরিন ফুয়েল, বিমানের জ্বালানিসহ মোট তেলের চাহিদা রয়েছে গড়ে ৭২ লাখ টনের মতো। এ চাহিদার মাত্র ৮ শতাংশ পূরণ হয় স্থানীয় উৎস থেকে। বাকি চাহিদা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। বিপিসি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে সৌদি আরবভিত্তিক সৌরি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (অ্যাডনক) কাছ থেকে। এর বাইরে আটটি দেশ থেকে জিটুজি চুক্তি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিপিসি পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তীব্র হতে থাকায় দেশের জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বিপিসির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জন্য ৫৯ লাখ ১০ হাজার টন পরিশোধিত এবং ১৪ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা করে বিপিসি। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। বিপিসির আমদানি করা জ্বালানির মধ্যে বেশির ভাগই ডিজেল। সংস্থাটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি করে ৬৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৩ টন। এতে বিপিসির খরচ হয় ৫৫ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধিত তেল ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, জেট ফুয়েল আমদানিতে ব্যয় করা হয় ৪২ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ৪ হাজার ১০৩ কোটি ও মেরিন ফুয়েল আমদানিতে ১০৭ কোটি টাকা খরচ হয়। আর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয় মোট ৯ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। 

এই তেল দিয়ে মাত্র ৪৫ দিনের চাহিদা মেটাতে পারে বাংলাদেশ। 

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘তেলের মজুত সক্ষমতা বাড়াতে বেশ কিছু প্রকল্প চলছে। নানা কারণে এগুলো সময়মতো শেষ করতে পারিনি। তবে বড় সব প্রকল্প শিগগির বাস্তবায়িত হবে। এটি করা গেলে আমদানি খরচ কমবে। কমে যাবে মজুত ঝুঁকিও।’ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সরবরাহ সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সৌদি ও দুবাইয়ে তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো কোনো সমস্যা হবে না বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তা ছাড়া আমরা পরিশোধিত জ্বালানি তেল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আমদানি করি। সৌদি ও দুবাই থেকে শুধু অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আনা হয়। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জাহাজ ভাড়া বেশ বেড়ে যাবে।’ 

 বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মনিলাল দাশ বলেন, এক লাখ ক্রুড অয়েল বোঝাই আমাদের একটি জাহাজ ২৮ জুন বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। হরমুজ প্রণালি অতিক্রম করে জাহাজটির দেশে আসা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে সেই বাধা অতিক্রম করেছে জাহাজটি। এক লাখ টন ক্রুড নিয়ে আরেকটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে ২২ জুলাই।

উল্লেখ্য, দেশে বিভিন্ন ধরনের তেল গড়ে ৪৫ দিনের মজুত থাকে, যার গড় পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ টন। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল পরিশোধন করার সক্ষমতা বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন। সে হিসাবে সৌদি আরব থেকে বছরে ৬-৭ লাখ টন আনা হয়। আবুধাবি থেকেও একই পরিমাণ ক্রুড অয়েল আমদানি করা হয়। ১৪ জাহাজে করে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। এ ছাড়া পরিশোধিত তেল আমদানি করতে আটটি দেশের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে চুক্তি আছে বিপিসির।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button