অপরাধ

মাহবুব-ইসমাইল-সাংবাদিক-পুলিশের মাদক ও নারীর ভয়ংকর সিন্ডিকেট

‎রাজধানী ঢাকায় মাহবুব ও চট্টগ্রামে ইসমাইলের নেতৃত্বে ইয়াবা-নারীর ভয়ংকর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দেশে আইন শৃঙ্খলার ঢিলেঢালা অবস্থাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার ইয়াবা বেচাকেনার বিরাট নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছে বাধাহীনভাবে। একইসাথে চলছে নারীদের নিয়ে আরো জঘণ্য অপকর্ম। ইয়াবা পাচার, সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও দেহ বেচাকেনা, প্রতারণা ও পাচারের ঘটনা ঘটিয়েও তারা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এক সপ্তাহ ধরে চালানো অনুসন্ধান সূত্রে বেরিয়ে এসেছে ইয়াবা সম্রাট মাহবুব ও ইসমাইলের বহুমুখী অপরাধ অপকর্মের নানা অজানা কাহিনী। প্রায় অর্ধশত সদস্য নিয়ে রাজধানী ও চট্টগ্রাম জুড়ে তাদের মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেটের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কোস্টগার্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বেশকয়েকজন সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী নামধারী ব্যক্তিরাও জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ‎তাদের ইয়াবা সাম্রাজ্য সচল রাখতে রয়েছে অর্ধ শতাধিক নারীর ভিন্ন আরেক জগত। রাজধানীর মেরাদিয়া, বনশ্রী, খিলগাঁও, সায়েদাবাদ, গুলশান শাহজাদপুর ও মালিবাগ এলাকায় পৃথক পৃথক ফ্ল্যাটে নারী ও মাদকের ভয়াবহ পয়েন্ট গড়ে তোলা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, মাদক অধিদপ্তরসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সকল ইউনিটের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাসের পর মাস বেপরোয়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। প্রশাসনের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিটের কাছে মাহবুব-ইসমাইল সিন্ডিকেটের তথ্য থাকলেও কিছুই করতে পারছেন না তারা। অথচ প্রতি সপ্তাহেই কক্সবাজার-টেকনাফ-চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে দশ সহস্রাধিক ইয়াবার চালান আসছে এই সিন্ডিকেটে।

‎রাজধানীতে গজিয়ে ওঠা নারী দেহ বাণিজ্যের ফ্ল্যাট, আবাসিক হোটেল, ম্যাসেজ পার্লার, শীষা বারসহ শতাধিক পয়েন্টে এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা বাধাহীন ভাবে ইয়াবার পাইকারী ও খুচরা সরবরাহ দিয়ে চলছে।মাহবুব সিন্ডিকেটের প্রথান আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় মেরাদিয়া এলাকার লায়লা বানুর ফ্ল্যাটটি।সেখানে লায়লা, সাবরিনা, মিতু, আঁখিসহ প্রায় এক ডজন নারী ইয়াবার মূল চালান নিয়ন্ত্রণে সদা ব্যস্ত সময় কাটায়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া আরো প্রায় বিশ জন তরুণি সেসব ইয়াবা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পৌছে দেয়ার দায়িত্বে থাকে বলেও জানা গেছে। এসব তরুণিদের ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গকে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেট হোতা মাহবুবের বিরুদ্ধে। গুলশান শাহজাদপুর এলাকার সুবাস্তু টাওয়ারে রয়েছে মাহবুবের আরেকটি বড় অপরাধ ঘাঁটি। সেখানে কলি ও রুপাদের ফ্ল্যাটে রাত দিন চলে নারী দেহ বেচাকেনার অবাধ অপকর্ম, আর হাট বাজারের মতো চলে মাহবুবের ইয়াবা সরবরাহ। এই ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে ইসমাইল সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে মাহবুবের প্রধান ডিলার হিসেবে তার নাম জানা গেছে। এছাড়া বাড্ডার আফতাবনগরে ইয়াবা ডিলার হিসেবে রয়েছে রিয়াদউল্লাহ, বনানী এলাকায় ইয়াবার বড় ডিলার জিয়াউল আমির পাপ্পু ওরফে বনানীর পাপ্পু। তিনি থাকেন বনানীর ১১ নম্বর সড়কে। সেখানে আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ি হচ্ছেন প্রিন্স। বাবা একজন সিনিয়র সচিব হওয়ায় স্থানীয় থানা, পুলিশ, প্রশাসন থোরাই কেয়ার করেন তিনি। গুলশানের শ্যানোন, রিয়াসাত, রিসালাত, নিকেতনে তাসওয়ার, বনানীর বাবর ও পিংকু চৌধুরী,মহাখালী ডিওএইচএস এর ড্যানিয়েল, হাতিরপুল মোতালেব প্লাজার ফারহান, আদনান হুদা সাদ, এলিফেন্ট রোডের ইউনুস, ধানমন্ডির নিয়াজ, সীমা, হকি বাবু, আরাফ, সাগীর, মোহাম্মদপুরে পেদা শামীম, ফাহিম, সোহাগ, রাকিব, হৃদয়, গোর্কি মারুফ, শেরশাহ সুরী রোডের জাহাঙ্গীর, আবু সাঈদ নাইম, লালমাটিয়ার আলাউদ্দিন পিংকু, বাড্ডার সুমি, বাড্ডা কুমিল্লা পাড়ায় ইয়াবা ডন আন্টু ওরফে লেংড়া আন্টু, বৈঠাখালী আনন্দনগর এলাকার আনোয়ার, হোসেন মার্কেট-ময়নাবাগে রাব্বী, ইমরুল, উত্তর বাড্ডার আকীক ও পোস্ট অফিস গলির বরিশাইল্যা দীপু, রেজাউল, কালাচাঁদপুরের লোটন, উত্তরায় ইয়াবা জামিল, মুগদা খালপারের ‘খাটো বাচ্চু’ অন্যতম ডিলার হিসেবে পরিচিত। ৪৮/সি, উত্তর মানিকনগরে আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেনের বাড়িতে নিযু তার স্ত্রী, শ্যালিকা মুন্নি ও শ্বাশুরি বড় আকারের ইয়াবা গুদাম গড়ে উঠেছে। বারিধারার ডিলার হিসেবে রয়েছে চান্দী, আসলাম, জাহিদ, সুফল, নাহিদ।

‎এরা ছাড়াও মাহবুব সিন্ডিকেটের হয়ে মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকার বাসিন্দা ইমরান ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রল করে থাকে। এদিকে সাইফুল ইসলাম টিপু ওরফে বেকা টিপু নিয়ন্ত্রণ করেন রামপুরা ও মালিবাগ এলাকার ইয়াবা বাণিজ্য। বনশ্রী এলাকায় মাহবুবের একাধিক নারী বিক্রেতার সিন্ডিকেট সচল রয়েছে। আর এই বিশাল সিন্ডিকেটকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালিত করছে নামধারী সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের সহযোগীতায় কিছু অসাধু কর্মকর্তারা ।

দর্শক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। পরের পর্বে দেখতে চোখ রাখুন অপরাধ বিচিত্রার পাতায়…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button