জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নাছিমা (১৯) নামের এক গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার নাছিমা এখন ঢাকার শের-ই- বাংলা নগর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
ভিকটিম ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন/চার মাস আগে পারিবারিক ভাবে বগুড়া জেলার আদম দীঘি থানার খাট্র দুর্গাপুর গ্রামের মৃত জসিম উদ্দীনের পুত্র মতিউর রহমান ডালিম এর সাথে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুরের রায়নগর গ্রামের নাছিরের মেয়ে নাছিমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পরই হঠাৎ ৫০ হাজার টাকা ও ডিসকোভার হোন্ডা বাবার বাড়ী থেকে আনার জন্য গৃহবধু নাছিমাকে চাপ সৃষ্টি করে শশুর বাড়ির লোকজন। এই সুয়োগে স্বামী ডালিম ও পরিবারের লোকজনের কথামত প্রায় সময় মারধর করত নাছিমাকে। পরে এ অবস্থা দেখে অনেকটা নিরুপায় হয়ে নাছিমার পরিবার ধারদেনা করে ২ দফায় ৫০ হাজার টাকা তার জামায়ের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এতেও দাবি পূরণ হয় না যৌতুক লোভী পরিবোরের। তবুও কথায় কথায় চলে শারীরিক নির্যাতন। স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভক্তির দুর্বলতায় দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করে গৃহবধূ নাছিমা। নির্যাতনকে কেন্দ্র করে সংসার ভাঙার ভয়ে এলাকার মাতব্বরদের দিয়ে সালিশ বৈঠক করেও স্বামী সংসারে জীবন কাটাতে পারলোনা অসহায় গৃহবধূ নাছিমা। নাছিমার ঘরসংসার করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও যৌতুকের দাবী মিটাতে না পারার কারণে নাছিমার সুখের সংসার আজ ফাঁটা বেলুনেরমত চুপসে যাচ্ছে। যৌতুক লোভী ডালিম শুধু যৌতুক দাবীই করেন না সে নাছিমার কাছ থেকে ৪র্থ বিয়ের অনুমতি দানের জন্য প্রায় চাপ সৃষ্টি করতো এবং না দিলে তাকে চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় দিবে বলে হুমকিও দিতো।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩শে আগস্ট/১৭ইং সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে ডালিম স্ত্রী নাছিমার সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডিসকোভার ১৫০ সিসি হোন্ডা আনতে বলে বাবার বাড়ি থেকে। এতে অপরাগতা প্রকাশ করায় চূড়ান্ত নির্যাতন চালায় পাষন্ড স্বামী ডালিম। শুরু হয় ওড়না দিয়ে হাত, পা বেঁধে বেধড়ক মারপিট, চুল ধরে টেনে হেঁচড়ে পা ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা এবং সর্বশেষ নিজের মুখের থুথু মাটিতে ফেলে আবার জিব্বা দিয়ে চাঁটানো। এতে এক পর্যায়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গৃহবধূ নাজমা। এঘটানায় এলাকাবাসী নির্যাতিতা নাছিমার বাবার বাড়িতে খবর দিলে নাছিমার মা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে নওগাঁয় হাড় বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবু হেনা সেলিম এর কাছে নিলে ডাক্তার নাছিমার পায়ের অবস্থা আশংঙ্কা জনক হওয়ায় রাজশাহী পপুলার হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেয়। পরে রাজশাহী পপুলার হাসপাতালে নিলে কর্ত্যবরত ডাক্তার তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রেরক করেন। নির্যাতিতা নাছিমা বর্তমানে ঢাকার শের-ই- বাংলা নগর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) ৪র্থ তলার জি- ৪৭ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্যাতিতা নাছিমার বাবা জানান, ডালিম নাছিমা আক্তারকে বিয়ে করার পূর্বে আরো দুইটি বিয়ে করে। ওই বিয়ের খবর গোপন রেখে নাছিমাকে আবার বিয়ে করে। বিয়ে করার পর যৌতুকের জন্য শুরু হয় নির্মম নির্যাতন।
এব্যাপারে নির্যাতিতা নাছিমা আক্তার জানান, বিয়ের কিছু দিন পর থেকে শাশুড়ী, ননদ, ভগ্নিপতি ও স্বামী ডালিম আমাকে বাবার বাড়ী থেকে যৌতুক সরূুপ ৫০ হাজার টাকা ও ডিসকোভার হোন্ডা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো এবং প্রায় আমাকে মারপিট করতো। আমি প্রায় বাবার বাড়ী থেকে যা পারতাম তাকে এনে দিতাম। এছাড়া দুই দফায় ৫০ হাজার টাকা এনে দিয়েছি। ঘটনার দিন আমার ননদের স্বামী ননদ ও শাশুড়ী আমাকে বেধর মারপিট করে এবং আমার স্বামী ডালিম আমাকে তার মাজার বেল্ট দিয়ে ইচ্ছেমত মারধর করে বাড়ির সাদ থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেরার জন্য টেনে হেঁচড়ে সাদে উঠাইতে লাগলে আমি বাঁচার তাগিদে ডাক চিৎকার দিলে আমার স্বামী সাদের সিড়িতে থাকা সিমেন্ট এর বস্তা আমার ডান পায়ে ফেলে দেয়। যার কারণে আমি অজ্ঞান হয়ে পরি। আমি ওর দিষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।