যে দেশে বিপ্লব হয়েছে, সে দেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না: সচিব নাসিমুল

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, বিপ্লব যে দেশে হয়, সেদেশে ‘পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না’।
তবে বাংলাদেশে সরকার ‘অতটা অমানবিক’ হতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালিত হচ্ছে।
“আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি, তার অনেকগুলো চলমান রয়েছে। আগামীতে তার কিছুটা আমরা রিভিউ করতে যাচ্ছি। তার একটা যেটা কালকে হয়েছে ডেভিল হান্ট অপারেশন।
“যেখানে যৌথভাবে সকলে ফোকাসড ওয়েতে কিছু কাজ করবে। যেসব কাজের মধ্যে দেশের স্টেবল অবস্থাকে আনস্টেবল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে আমরা নিউট্রালাইজ করব। এর জন্য আইনানুগ পন্থায় যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা নেব।”
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশে শনিবার থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের এ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের সমন্বয়ে এ অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন।
রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এস এ অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে দেশে বিপ্লব হয়েছে সে দেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না। অতটা অমানবিক হতে পারেনি সরকার। আমরা কিছুটা রিফর্ম করেছি। কিছুটা রিয়ালাইজ করেছি যে কিছু লোক ভয়ে (গত সরকারের কর্মকাণ্ড সমর্থন) করেছে, প্রেশারে করেছে, বিভিন্ন কারণে করেছে। কিছু ডাইহার্ড ছিল তারা পালিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে।”
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কেন প্রয়োজন হল জানতে চাইলে সচিব বলেন, “এখন দেখা গেল র্যানডম শুরু হয়ে গেছে দেশকে আনস্টেবল করার চেষ্টা। এই জিনিসটা যেন না থাকে। যাতে মানুষের মনকে উদ্বেলিত না করে, সেজন্য এই প্রচেষ্টা। আরেকটু ফোকাসড ওয়েতে।”
অপারেশন ডেভিল হান্টের নেতৃত্বে কারা থাকবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে নাসিমুল গনি বলেন, “এটা পুলিশ অ্যাকশন। এটা পুলিশের কাজ হচ্ছে। আর্মি হেল্প করছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ও যৌথবাহিনীর অভিযান একসঙ্গে চলছে।”
তবে অভিযান শুরুর পর কত জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি।
অভিযানের নামকরণ নিয়ে এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র সচিব ভাষ্য, “প্রত্যেকটা অপারেশনের একটা কোড নেইম হয়। ফোকাস করার জন্য। পুলিশের এবং ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতাই ডেভিল হান্ট অপারেশনে প্রয়োগ করা হচ্ছে।”
অপারেশনে পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, “এদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।”
অভিযানের কর্ম পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “আগে যে আকারে আইন প্রয়োগ করা হত, আমরা ওই পথে হাঁটতে পারব না। আমাদেরকে আইনের স্পিরিট নিয়ে কাজটা করতে হবে।
“আইন প্রয়োগের সাথে যারা জড়িত আছেন, যেমন পুলিশ বাহিনী, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটর, উনাদের সাথে একত্রে বসব, কীভাবে আমরা সুষ্ঠুভাবে আইনটা প্রয়োগ করতে পারি।”
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পাওয়া নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “অনেক লোক মনে করেছে ওই সময় বের হলে আমার অসুবিধা হবে। কিন্তু এখন যারা সাজা খেটে বের হয়েছে তারা ২৫ বছর ২০ বছর জেলে থেকেছে। হতে পারে সন্ত্রাসী এখনও হতে পারে হয়ত। যদি সেরকম কোনো অ্যাকশন হয় তাহলে ধরব।”
স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “আমাদের দেশে যে পরিবর্তন এসেছে আইন-শৃঙ্খলা ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণেই সেনাবাহিনী সারাদেশে মোতায়েন করা হয়। পুলিশ বাহিনীর মোরাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মানসিক দুর্বলতা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়েছে। বিভিন্ন থানা পুড়ে গেছে এ সমস্ত কারণেই সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে।”
এসব কাজ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিটি বাহিনী প্রস্তুত করা হয়েছে বলে সচিবের ভাষ্য।
মানবাধিকার এবং পরিবেশ নিয়ে মঙ্গলবার একটি কর্মশালা হবে, সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, “এই মানবাধিকার কারণেই আমাদের আন্দোলনটি হয়েছিল।”
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদস্যদের ‘ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন’– এমন খবর শোনার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন এক সাংবাদিক। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করছে, তা তিনি জানতে চান।
জবাবে সচিব বলেন, “আমরা দেখছি।” তবে সঙ্গে এও বলেন, “সব কথা বলা যাবে না।”