রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপি নয় বরং আওয়ামী লীগই রাজনীতি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি নয় বরং আওয়ামী লীগ রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি করতে চায় বলেই এখন তারা প্রস্তাব দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর বাংলাদেশের বিজিবি যৌথভাবে টহল দিয়ে অভিযান চালাবে। কিন্তু কোথায় এবং কার বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হবে। যাদেরকে হত্যা, ধর্ষণ করা হচ্ছে, যাদের শিশুদের মেরে ফেলা হচ্ছে। যেখানে গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে সেখানে বিজিবি থাকবে?
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মামুন হাসান, ঢাকা মহানগর যুবদল ( উত্তর ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন জুয়েল, যুবদল (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন প্রমুখ।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমস্যা সমাধানের কথা বলতে হবে আলোচনা করতে হবে। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের মনোভাব আমরা ঠিক বুঝতে পারি না। মূলত পুরোপুরি নতজানু হয়ে গেলে নিজস্বতা না থাকলে এবং অন্যের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকলে সাধারণ এই ধরণের সিদ্ধান্তগুলো নেয়।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছি- রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকারের এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। এবং মিয়ানমার সরকারকে বলছি অবিলম্বে তারা যেন রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা বন্ধ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়া ও ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও এরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। দেরিতে হলেও কিছুটা খুশি উনি রোহিঙ্গাদের দেখতে এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে গেছেন। এতদিনে বোধদয় হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি বোধদয় হয় নাই, সুযোগ পেলেই বিএনপিকে দোষারোপ করে বসেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার গতকাল সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেয়া উচিত। অথচ তারা একবারও রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার যে গণহত্যা চালাচ্ছে তার জন্য নিন্দা জানাননি। তাই আমরা যারা রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার নিন্দা জানায়নি তাদের প্রতি নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব বলেন, আপনারা নির্বাচন নির্বাচন বলে খুব ঢোল বাজাচ্ছেন। নির্বাচন এই দেশে আমরাও চাই। কারণ ২০১৪ সালে আপনারা যে নির্বাচন করেছেন তা এদেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন। আর সামনে যখন নির্বাচনের সময় আসছে তখন আপনা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন কথা বলতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের কথা খুব স্পষ্ট যে, আপনারা সংবিধান পরিবর্তন করেছেন। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছেন। এক সময় এদেশের মানুষ আপনাদের দেয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রস্তাব মেনে নিয়ে ছিল। তিনবার সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার পর শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য গোটা বাংলাদেশকে অশান্তি, অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চিয়তার দিকে টেলে দিচ্ছেন। তাই আজ যত সংঘাত সমস্যা তৈরি হচ্ছে তার মূলে রয়েছে নির্বাচন।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আশা করি আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সহায়ক সরকারের যে প্রস্তাব আমরা দিতে যাচ্ছি খালেদা জিয়া দেবেন সেই প্রস্তাব মোতাবেক একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অন্যায় ইতিহাস এবং জনগণের কাছে দায়ি থাকবেন। জনগণ ক্ষমা করবেনা।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রোঙ্গিহা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হলেও বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টির মাধ্যমে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।