জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ চোঁখে চশমা, হাতে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, ফার্মেসীর ভিতরে চেম্বার, চেম্বারে রোগীর দীর্ঘ লাইন, রোগীদের দেখেশুনে লিখছেন প্রেসক্রিপশন, দিচ্ছেন দিক নির্দেশনা। অনেক সময় করেছেন কাঁটাছেড়াও। বেশভূষা সহ কথা বলার ঢংগে মনে হবে এ কোন ডিগ্রীধারী ডাক্তার। জানাগেছে, জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুরে ভূয়া ডাক্তার কবিরাজের ছড়াছড়ি, যেন দেখার কেউ নেই। এসব হাতুড়ে ডাক্তার, কবিরাজ ও ভুয়া ডাক্তারের কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পেতে গিয়ে নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকদিনের ট্রেনিং নিয়েই ডাক্তার সেজে প্রাইভেট চেম্বার খুলে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রোগী দেখছেন অনেকেই। শুধু তাই নয় ভুয়া চিকিৎসকদের অনেকেই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহকারী (কম্পাউন্ডার) হিসেবে কাজ করতে করতে নিজেই চিকিৎসক বনে গেছেন। কেউ বা আবার দীর্ঘদিন ধরে ফার্মেসিতে ঔষধ বিক্রি করতে করতে বনে যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আবার অনেকেই শুধুমাত্র ড্রাগ লাইসেন্স নিয়েই নিয়মনীতির তোয়াকা না করে চেম্বারে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি করছে দেদারছে। এসব ভুয়া ডাক্তাররা অবৈধ ফার্মেসী দিয়ে ডাক্তারি করায় ফার্মেসী খাতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অর্ধশতাধিক অবৈধ ফার্মেসীতে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি চিকিৎসা দিচ্ছে এসব ভুয়া ডাক্তার। এসব ডাক্তারদের মধ্যে অনেকে আবার স্থানীয় প্রসাশন ও প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছে ডাক্তারগিরি।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিলকপুর বাজারের জনৈক এক ডাক্তার নাম না প্রকাশের শর্তে জানায়, তারা স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে ওষুধের ব্যবসা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। তাদেরকে ওষুধ সরবরাহ দিচ্ছে বিভিন্ন অখ্যাত কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা। ওষুধ প্রশাসনের শর্ত অনুযায়ী ফার্মেসীতে একজন করে স্বীকৃত ফার্মাসিস্ট দিয়ে সনদপ্রাপ্ত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ বিক্রয়ে বাধ্য বাধকতা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া ও উপজেলার মোহনপুর বাজার, জাফরপুর তিনমাথা, রাইকালি বাজার, চন্দনদীঘি মোড়, কাশিড়া হাট, গোপিনাথপুর বাজার ঘুরে দেখা যায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লাইসেন্সহীন ফার্মেসীতে ফার্মাসিস্ট ছাড়াই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বেশী মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ফার্মেসীতে। অবৈধ আয়ের মাধ্যমে রাতারাতি আলাদিনের যাদুর চেরাগ পাওয়ারমত আশা করে অনেকেই এখন ফার্মেসী বাণিজ্যে নেমে পড়ায় দিন দিন ফার্মেসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল বিএমডিসি’র নিবন্ধন ব্যতিত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এ্যালোপেথি চিকিৎসা করা বা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় দিতে পারবে না। কেউ এ রকম করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩ বছর কারাদ- অথবা এক লক্ষ টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-নীয় করা হবে। কিন্তু এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দেদারচ্ছে রং বেরংয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে নামের পিছনে বড় বড় ডিগ্রি লিখে সাধারণ মানুষদের ধোকা দিচ্ছে ভুয়া ডাক্তারা।
অপরদিকে নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার শ্রীরামপুর বাজারে কোন প্রকার ট্রেডলাইসেন্স, টিন সাটিফিকের্ট, ডাগ লাইসেন্স এমনকি ডাক্তারী সনদ ছাড়াই বিস্মিল্লাহ্ হোমিও হল খুলে ভুয়া ডাক্তার মোছাঃ পান্না কর্তৃক চিকিৎসার নামে অপ-চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। অথচ ডিএইচ এম এসও এলএইচএমসি পাশ করেও এই অপ চিকিৎসকের সাথে পাল্লা দিতে পাচ্ছে না অনেক লাইসেন্সধারী ডাক্তাররা। জানাগেছে, ভূয়া হোমিও চিকিৎসক পান্না বিসমিল্লাহ্ হোমিও হল খুলে সাধারন রোগীদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করে আসছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন না থাকলেও তিনি সাধারন একটি হোমিও চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষন নিয়ে মানুষের সকল প্রকার জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করছেন। এখন সচেতন শ্রীরামপুরবাসীর প্রশ্ন একটি সাধারণ হোমিও চিকিৎসক হয়ে তিনি কি করে সকল প্রকারের চিকিৎসা করেন। এব্যাপারে পান্নার সাথে তার মুঠোফোন ০১৭৩৬২৩৪৬৮৬ যোগাযোগ করা হলে তিনি এপ্রতিবেদকে জানান, আমি নতুন চেম্বার দিয়েছি কাগজপত্র এখনও ঠিক করতে পারিনি তবে আমার বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় কোন প্রকার সংবাদ লিখবেন না। লিখলে আপনার ফল ভাল হবেনা বলে হুমকি দিয়ে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। পান্নার খপ্পরে পড়া জনৈক এক যুবক জানান, বিসমিল্লাহ্ হোমিও হলের চিকিৎসক পান্নার নিকট তার যৌন সম্যার জন্য গেলে সে ৭ দিনের মধ্যে ভাল করার গ্যারিান্টি দিয়ে ২ হাজার টাকা নিয়ে কয়েক ডাম ঔষধ দেয়। যা খেয়ে যৌন শক্তি ফিরিয়ে পাওয়াতো দুরের কথা আরো উল্টে যৌন ক্ষমতা হারাতে বসছে ওই যুবক। ওই বাজারে শুধু পান্না নয় পান্নারমত আরো কয়েক জন এলোপ্যাথিক ভুয়া ডাক্তারও রয়েছে যার মধ্যে উন্নতম লুৎফর রহমান। তিনি এক সময় তার নিজ বাড়ি গনিপুরে বসে ও হাটে হাটে ফেরি করে এলোপ্যাথিক ঔষধ বিক্রি করতেন। এখন তিনি শ্রীরামপুর বাজারে স্থায়ী ডাক্তার। লুৎফর রহমান গ্রাম-গঞ্জের সাধারন মানুষকে ঠকিয়ে কালো টাকার পাহাড় গড়েছেন। অবিলম্বে এসব ভূয়া ডাক্তার ও লাইসেন্স বিহিন ফার্মেসীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।