আজ ২১ অক্টোবর ২০২৪ বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রেক্ষাপটে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনগণের খাদ্য, ভূমি ও পানির অধিকারের দাবীতে এক সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীন শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, সহ—সভাপতি রেহেনা বেগম, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভানেত্রী লাভলী ইয়াসমিন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সহ—সভাপতি ডাঃ সামসুল আলম, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান নয়ন, ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভানেত্রী সালেহা ইসলাম শান্তনা ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সালমা আক্তার, ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন দুলাল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক — কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু মিয়া, বাংলাদেশ ছাত্র সভা গঠন প্রক্রিয়ার আহবায়ক লিডিয়া আহমেদ সিলভা প্রমূখ। সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সভার সভাপতি কমরেড বদরুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতি সংঘের প্রতিষ্ঠান যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে লক্ষ্য আজও পূরণ হয় নি। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার স্থলে খাদ্যহীনতা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। আজও সারা বিশ্বে ৭৫ কোটি মতান্তরে ১০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত থাকে। বিশ্বের ৪৫০ কোটি মানুষ পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না। এ মানুষের ৫০% অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ তরফে খুধা ও দারিদ্র্য নিবারণ কল্পে ২০০০ সালে ১৫ বছর মেয়াদী ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য’ ঘোষণা করা হয়েছিল। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় ২০১৫ আবার ১৫ বছর মেয়াদী অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত ‘স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য’ ঘোষণা করা হয়। আজ ২০২৪ সালের শেষ পর্যায়। বাকী ৫ বছরে লক্ষ্য পূরণ হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই। এ সব কিছু নির্দেশ করে বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা সমাধানের সঠিক রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না অথবা সচেনভাবে বিশ্বের জনগণকে ধোকা দিচ্ছে। অথবা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের প্রশ্ন নিয়ে জনগণের সাথে নিছক তামশা করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এ মূহুর্তে এক কঠিন সময় পার করছে। প্রায় আড়াই মাস আগে একটি সরকারের পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও জনজীবনে স্বস্তি আসেনি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি জনজীবনে নাভিশ্বাস এনেছে। বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। খাদ্য ক্রয়ের সক্ষমতা না থাকার কারণে মানুষ অখাদ্য—কুখাদ্য খেয়ে স্বাস্থ্যহানী ঘটাচ্ছে। অতিমূল্যে খাদ্য কিনতে গিয়ে চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারছে না। অথচ খাদ্য ও চিকিৎসা দুটোই জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। তিনি বলেন, প্রায় ২২% লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে তাদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা মারাত্মক পর্যায়ের। তাদের জন্য যে সামাজিক সুরক্ষা জাল রয়েছে তা এ অবস্থা হতে উত্তরণে মোটেই যথেষ্ট নয়। কমরেড বদরুল আলম ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থা তথা পরিবেশ—বান্ধব চাষাবাদ (আ্যগ্রোইকোলজি) প্রবর্তন ও জমি এবং পানির উপর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আ্যগ্রোইকোলজি অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র কৃষক ও পারিবারিক কৃষককে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে খাদ্য সার্বভৌমত্বের নীতি—কৌশল দেশে দেশে উন্নয়ন নীতিমালায় সংযুক্ত ও বাস্তবায়ন করা উচিত বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। বিশ্বের খুধা সূচক—২০২৪ অনুযায়ী এ বছর ক্ষুধা নিবারণের সক্ষমতায় ১২৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩ ধাপ পিছিয়ে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। সূচক মতে বাংলাদেশ এখন মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা মোকাবেলা করছে। এক কথায় দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে বলা যায়। তিনি এ অবস্থা হতে বেরিয়ে আসার জন্য দেশের সরকারকে দেশের সক্রিয় কৃষক সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট পথ নকশা বের করা আহ্বান জানান।
সমাবেশ অনুষ্ঠানে বক্তারা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও জনগণের জীবনযাত্রার মানের কোন পরিবর্তন হয় নাই বরং অধোগতি হয়েছে। মানুষ খাদ্যদ্রব্য কিনতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। পরিবারের বাজেট কাটছাঁট করেও রক্ষা হচ্ছে না। এর উপর জলবায়ু জনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা এ অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলছে।