রাজধানীর শ্যামবাজার ঘিরে বোরহানের দখল বাণিজ্য
রাজধানীতে অবস্থিত কাঁচাবাজারের আড়ৎ গুলোর মধ্যে শ্যামবাজার ঐতিহ্যপূর্ণ ও পুরাতন একটি আড়ৎ।পুরান ঢাকার বুকে বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে তৈরি হওয়া এই আড়ৎের পরিচিতি ও ব্যবসায়িক জনপ্রিয়তা গড়ে ওঠে যাতায়াতের সুবিধা ও প্রচুর জনবহুল এলাকা হওয়ায়।কাঁচা বাজার, সবজি,মসলা,ও ফলমূলের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা জায়গা। বাজারের একাংশে অবস্থিত মৎস্য আড়ৎ।১৯৯৬ সালে এই মৎস্য আড়ৎ এর একটি দোতলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়, পরবর্তীতে ১৯৯৭সালে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক দোকান বরাদ্দ হয়। নিচের তলাতে ৯২ টি দোকান ও উপরে ২৮ টি দোকান নিয়ে মোট ১২০ টি দোকানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই মৎস্য আড়ৎ।নিচের তলাতে সিটি কর্পোরেশন একটি ছোট দোকানের মত জায়গা রেখে দিয়েছিল অফিস রুম তৈরীর স্বার্থে।ছোট এই রুমটি রাখার প্রয়োজনীয়তা ছিল লোকজনের সঠিক তদারকি সহ বাজার কমিটির লোকজন যাতে সুষ্ঠুভাবে সেখানে বসেই বাজার পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় প্রভাব ও তৎকালীন কমিশনারদের সহযোগিতা ও আস্থাভাজন হওয়ায় মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন ঐ দোকানটি দখল করেন।সাবেক কমিশনার আরিফ হোসেন ছোটন এর লোক হিসাবে সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে রাতারাতি হয়ে যায় সে ওই দোকানের মালিক। বর্তমানে বেল্লাল হোসেন নামের এক জৈনেক ব্যক্তি ওই দোকানকে মুদিমাল ও টি স্টল হিসেবে পরিচালনা করছেন।সরেজমিনে গিয়ে বিল্লাল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি এই দোকানটি মাসিক ৩৫০০ টাকা করে ভাড়া দেন বোরহান উদ্দিনকে। তিনি আরো জানান বোরহান উদ্দিন সিটি কর্পোরেশনের লোক পরিচয় দিয়ে থাকেন।এছাড়াও সাবেক কমিশনার আরিফ হোসেন ছোটনের খুবই আস্থাভাজন।দোকানের কোন কাগজ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তাকে দেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি এই কাগজ কখনোই তার কাছে চাওয়ার সাহস দেখায়নি।তাহলে তিনি আমাকে দোকান ভাড়া তো দিবেনই না উল্টো মারধর করবে। এই বিষয়ে মৎস্য বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুর রহমানের এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান দীর্ঘদিন ধরে বোরহান ওই দোকানটি দখল করে রেখেছে এবং তিনিই ভাড়ার টাকা উত্তোলন করেন।একই সাথে তিনি আরো দুঃখ প্রকাশ করে জানান বাজারে সরকারিভাবে পানির ব্যবস্থা নেই, নেই ময়লা নেওয়ার মতো নির্ধারিত কোন লোক, আলাদাভাবে টাকা দিয়ে ময়লা পরিস্কার করতে হয় দোকানিদের,এমনকি ভবনটি পুনরনির্মাণ জরুরী বলেও তিনি জানান। তিনি আরো উল্লেখ করে বলেন বাজারে দোকান বৃদ্ধি করা,ও ভবন নির্মাণসহ, সরকারী পানির লাইন দেওয়া,এবং ময়লা পরিষ্কার এর জন্য নির্ধারিত লোক জরুরী।কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এর সঠিক নজরদারী না থাকায়, কয়েকবার সাবেক কমিশনার আরিফ হোসেন ছোটনের কাছে দোকান মালিকরা গেলেও ছোটন কোনরকম গুরুত্ব না দিয়ে, বরং তার লোক পরিচয়ে বোরহানকে এখানে দখল বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিয়েছে।নির্ধারিত বাথরুম গুলো পড়ে আছে যত্রতত্র। কোন টেন্ডার না থাকলেও বোরহানের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয় বাথরুম গুলো।জন প্রতি ১০টাকা করে নিয়মিত উত্তোলন করা হয় চাঁদা।আগত ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিয়ে প্রায় দৈনিক ১০০০ লোক বাথরুম ব্যবহার করে থাকেন। তাতে প্রতি দিন প্রায় ১০হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বোরহান।হিসাব মেলালে দেখা যায় মাসিক চাঁদা আদায়ের পরিমান প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।এত পরিমানে চাঁদা আদায় করলেও বোরহান বাথরুমকে রেখেছে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়,শ্যাওলা পড়া, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, দূর্গন্ধযুক্ত, দেওয়াল ধষে পড়া এই বাথরুমগুলো ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী। বোরহানের সে বিষয়ে নেই মাথাব্যথা।টাকা পেলেই হলো এমন একটা ভাব নিয়ে চলে।এবিষয়ে তাকে কিছু বললে কোন সৎ উত্তর মেলে না।মেলে ভয়ভীতি ও হুমকি।ছোটনের সুনজর থাকায় সিটি করপোরেশন ও বিষয়টায় নজর দেন না।তাই ভয়ে তাকে কিছু বলতে পারিনি আমরা।
এদিকে দোকানদারদের সাথে আলাপচারিতা থেকে জানা যায়,তাদের মনে চরম ক্ষোপ জেগেছে- কেন বোরহান সিটি করপোরেশনের কোন টেন্ডার ছাড়া এভাবে প্রতিনিয়ত টাকা উত্তোলন করবে?বাথরুম কেন থাকবে তার দখলে?বাজারের অফিস রুম কেন সে দখল করবে?তার খুঁটির জোর কোথায়?
এছাড়া সিটি করপোরেশনের ইনস্পেকশন অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেনকে জানানোর পরেও কোন কিছুরই পরিবর্তন কেন হচ্ছে না এই নিয়ে দোকান মালিকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে?তাহলে কি সিটি করপোরেশন এই বোরহান এর দখল ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত?
দোকান মালিকরা জানতে চায় -এখানে সরকারি জায়গায় বোরহানের চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের শিকলে আর কতদিন আবদ্ধ থাকতে হবে তাদের।
তারা কামনা করে দ্রুতই বোরহানের কাছ থেকে দোকান উদ্ধার করে বাজার কমিটির জন্য অফিসরুম করবে সিটি করপোরেশন এবং বাথরুম থেকে অনৈতিক ভাবে চাঁদা আদায় বন্ধ করা সহ পূনরায় সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলবে।
দ্রুততার সাথে এসকল কাজ সম্পন্ন করতে কতৃপক্ষের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেন দোকান মালিক সহ স্থানীয় সচেতন মহল এবং বাজার কমিটির সদস্য বৃন্দ।