Uncategorized

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্তর্ভুক্তি জরুরি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্তর্ভুক্তি জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন শুধুমাত্র এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য নয়, দেশের আদিবাসী জনগণের অধিকার এবং জাতিগত ঐক্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সুস্পষ্ট সময়সীমা এবং কার্যকর কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় সভায় বক্তৃতা করেন সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নাগরিক ঐক্যর প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আব্দুল মাহবুব, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম-সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথেন প্রমীলা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অনিক রায় প্রমুখ।

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা, একটি রাজনৈতিক সমস্যা। সমাধান হবে রাজনৈতিকভাবে সমাধান হবে মানবিকভাবে। ২৭ বছর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা চুক্তিকে উপেক্ষা করেছে।পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি আগ্রাসন চলছে। সেখানে ভূমিদখল চলছে। সেখানে ইকোপার্ক, পর্যটন কেন্দ্রের নামে এখনো ভূমিদস্যুভিত্তিক এলাকা রয়েছে। এগুলো বন্ধ করা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরবে না।দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না। সরকার দাবি করলেও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পার্বত্য চট্টগাম চুক্তির মৌলিক মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক চিন্তার কোন পরিবর্তন হয়নি। সেখানকার পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে, বন ধ্বংস হচ্ছে।পার্বত্য এলাকায় বনকে ধ্বংস করে উন্নয়ন আদিবাসী জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে। এ বিষয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিলো সমাজের মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এবারের জুলাইয়ের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যও ছিলো বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসের কর্মকান্ডে আমরা পার্বত্য চট্টগাম চুক্তি বাস্তবায়নের আলামত দেখতে পাইনি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির জন্য আঞ্চলিক পরিষদ বিধিমালা প্রণয়ন করে ১৫ বছর আগে ভূমি কমিশনে জমা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সেটি এখনো প্রণয়ন করা হয়নি। সেখানে সেটলারদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভূমির সমস্যাটি এখনো জিইয়ে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তার অজুহাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নসহ আদিবাসীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে জন্য একটি আদিবাসী কমিশন গঠন করা যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা থেকেই তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত হয়ে সংসদে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা ব্রিটিশ-পাকিস্তান সময়ের রাজতন্ত্র ভেঙে গণতান্ত্রিক স্রোতধারায় অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদেরকে সবসময় দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টায় ছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সূত্রপাট ঘটে। এরপর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আরো বেশি প্রান্তিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারণে দেশের আদিবাসীদের মানবিক অধিকারকেও ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button