“মূর্খদের সম্পদ–তর্ক”

তর্ক মূলত মূর্খদের সম্পদ। আর তর্কের সবচেয়ে বড় শক্তি উচ্চ কন্ঠস্বর। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যাদের রয়েছে উচ্চকন্ঠ এবং প্রচুর গালাগালি ও অপবাদ দেয়ার ক্ষমতা, তারাই তর্কে নিশ্চিত বিজয়ী। তাই যুক্তিহীন তর্ককে ঝগড়া বলা যায়।
হুমায়ূন আহমেদ তার “দেয়াল” উপন্যাসে বিষয়টি চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, “মূর্খদের সাথে কখনও তর্ক করতে যাবে না। কারণ হলো, মূর্খরা তোমাকে, তাদের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসে, তর্কে’ হারিয়ে দিবে।”
হ্যাঁ, মূর্খদের সাথে তর্কে আপনি নিশ্চিত পরাজিত হবেন, কারণ শিক্ষা ও রুচি ঝগড়াটে হতে দেয়নি আপনাকে। আপনার দ্বারা চিৎকার চেচামেচি করা সম্ভব না, গালাগালিতো নয়ই। সুতরাং তর্কে আপনি নিশ্চিত হারবেন, তবে যুক্তিতে নয়।
তর্ক মূলত দুই শ্রেণির মানুষ করেন। এক অশিক্ষিত, যার নাম হলো “ঝগড়া”। দুই শিক্ষিত, যার নাম “সুবিধাবাদ” দু’টো শ্রেণিই মূর্খ, তবে তৃতীয় আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা সদ্য জাতে উঠেছেন, যার নাম “অহংকার”।
মহান আল্লাহতালা বলেছেন: রহমান-এর (আল্লাহর) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। (সালাম বলার অর্থ: মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও তর্ক-বিতর্ক ছেড়ে দেওয়া) (সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৩)
জ্ঞানী যদি মূর্খের মোকাবিলায় পড়ে তবে তার (মূর্খের) নিকট থেকে সম্মানের আশা করা ঠিক নয়। আর কোন মূর্খ যদি জ্ঞানী লোকের মোকাবিলায় জিতে যায়, তবে আশ্চর্যের কিছু নয়। কারণ, পাথরের আঘাতে মুক্তার বিনাশ সহজেই হয়ে থাকে। (শেখ সা’দী)
সুতরং তর্কের প্রয়োজন কতটুকু? যদি না তা মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়। অন্যথায় তা মানুষের সময় এবং সাধ্যের নিদারুণ অপচয় ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনা।
একবার গাধা এবং শিয়াল বনের মাঝে ঝগড়া শুরু করলো।
গাধা: ঘাসের রং হলুদ!
শিয়াল: না,ঘাস সবুজ!
যখন এই বিতর্ক চরম আকার ধারণ করলো তখন তারা বিচারের জন্য বনের রাজা সিংহের কাছে গেলো। সিংহ শিয়ালকে পূর্ণ একমাস বন্দি রাখার এবং গাধাকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দিলো।
শিয়াল সিংহকে প্রশ্ন করলো: এটা কি ধরণের ন্যায়বিচার, মহারাজ? ঘাস কি সবুজ নয়?
সিংহ উত্তর দিলো: ঘাস অবশ্যই সবুজ, কিন্তু আমি তোকে বন্দি রাখার আদেশ করেছি, কারণ তুই ‘গাধা’র সাথে তর্ক করেছিস।
এটি রুশ দেশের একটি কাল্পনিক গল্প।
সুতরাং সবার সাথে তর্ক করা উচিত নয়।