নিম গাছের উপকারিতা ও পরিবেশ রক্ষায় এই গাছের প্রভাব

পরিপূর্ণ একটি নিম গাছ প্রায় ১০ টন এসির সমপরিমাণ ঠান্ডা রাখে তার চার পাশের বাতাসকে।
নিম গাছ পরিবেশগত ভাবে খুবই উপকারী। এটি খুব বেশি মাত্রার দূষণ সহ্য করতে পারে এবং শুষ্ক মৌসুমে পাতা পড়ে গেলেও সেগুলোতে তাড়াতাড়ি নতুন পাতা চলে আসে।
নিম গাছের পাতা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে সীসা শোষণ করে। ধূলিকণা, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের মতো দূষক শোষণ করার ক্ষমতা নিম গাছের রয়েছে।
১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে নিম গাছ শিল্প এলাকায় ও শহুরে দূষণ দূর করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রজাতিগুলির মধ্যে একটি এবং এটি পরিচিত হট স্পটগুলিতে সবুজ বেল্টের মত কাজ করে।
নিমের কার্বন ডাই-অক্সাইড ফিক্সেশন করার ক্ষমতা অন্যান্য গাছের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি প্রতি সেকেন্ডে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ১৪ টি মাইক্রোমোল (প্রতি বর্গ মিটার) ঠিক করতে পারে।
নিম গাছের পত্র পৃষ্ট সর্বাধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড ফিক্স করার জন্য একটি ভাল বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য দূষণ উপাদানগুলির বিরুদ্ধে একটি ঢাল প্রদান করে বিশেষ করে সালফার ডাই-অক্সাইড।
একটি পরিপূর্ণ নিম গাছ প্রায় ১০ টন এসির সমপরিমাণ ঠান্ডা রাখে তার চার পাশের বাতাসকে।
নিম আমাদের দেশীয় গাছ, আবহাওয়া উপযোগী এবং যে কোনো ধরনের মাটিতে জন্মে। নিম গাছ দ্রুত বর্ধণশীল, পানির স্তর ধরে রাখে, মাটির ক্ষয় ও মরুময়তা রোধ করে।
নিমের তেল মানুষ, গরু ও পশুপাখির উকুননাশক এবং চর্মরোগ নিরোধক। নিমের তেল, খৈল ও পাতা প্রাকৃতিক কীট নিবারক ও সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নিমের কাঠ অধিক মূল্যবান, উন্নত মানের, স্বাস্ব্যকর ও পরিবেশসম্মত এবং এই কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র তৈরি করা যায় যা উঁই, ঘৃণ আ অন্য পোকায় নষ্ট করে না।
নিম গাছ অন্যান্য গাছের চেয়ে বেশি অর্থকরি এবং পরিচর্যায় তেমন খরচ নেই। নিম বাড়ির আঙিনা, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ সর্বত্র লাগানো যায়। নিম গাছের গন্ধে আশপাশের ফসলেও কীট-পতঙ্গ আসে না ! তাই ফসলের মাঠেও নিম গাছ লাগানো উপকারী।
তুলনামূলকভাবে নিমের অথনৈতিক গুরুত্ব অন্যান্য কাঠ, ফল ও ঔষধী গাছ থেকে অনেব বেশি। নিমের পাতা হাম, বসন্ত, ঘা, খুজলি, পাঁচড়া ও চুলকানিতে ব্যবহার হয়। নিম গাছে রোগ-ব্যাধি হয় না এবং এই গাছ গরু-ছাগলে খায় না।
এর নিজস্ব ধর্ম
একটু আগেই বলা হলো যে নিমের নির্যাস প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিফাঙ্গাল হওয়ার কারণে চর্মরোগের ক্ষেত্রে, চামড়ার অ্যালার্জি সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সঙ্গে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ধর্ম থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়াল কোনও ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও উপশম দেয়। অনেক সময় মুখে কোনও ইনফেকশন বা ব্রণের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে নিম তেল বা নিম পাতার নির্যাস খুব উপকারী।
গর্ভনিরোধক হিসেবে
নিম গাছের তেল গর্ভনিরোধক বৈশিষ্ট্যও আছে। পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ইঁদুরের উপর যে এই বৈশিষ্ট্য সত্যি নিম তেলে বর্তমান। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই তেল পুরুষতান্ত্রিক হরমোনের উৎপাদনে কোনও রকম বাধা সৃষ্টি না করেই স্পার্ম উৎপাদন হ্রাস করে।
হাঁপানি সারাতে
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আমাদের বাড়িতে প্রায় বয়স্কদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। নিম তেল এই হাঁপানি সারাতে সাহায্য করে। অল্প অল্প করে নিম তেল সেবন করলে এবং আস্তে আস্তে তার পরিমাণ বাড়াতে থাকলে হাঁপানির ক্ষেত্রে এর আরাম পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং মুখের সমস্যায়
নিম আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও মুখের অনেক রোগে নিম তেল খুবই কার্যকরী। মাড়ির ব্যাথা, দাঁতের পোকা লাগা বা ক্যাভিটির সমস্যায় নিম তেল দাঁত মাজার সময় ব্যবহার করলে খুবই উপকার পাওয়া যায়।
হজম সমস্যা এবং পেট ঠিক করতে
নিমের নির্যাস আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ায়। একই সঙ্গে হজমের গোলমাল দূর করে। আজকাল বহু মানুষ আছেন যারা গ্যাসের বা অম্বলের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। নিমের নির্যাস এই সমস্যাকে ঠিক করে। এমনকি ঠিকঠাক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শে পেটের ঘা বা আলসার কমাতে বা সারাতে নিম একইভাবে পারদর্শী। এছাড়াও আরও অনেক ক্ষেত্রেই নিমের উপকার রয়েছে। মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখতে এর ভূমিকা যেমন আছে, তেমনি ম্যালেরিয়া রোগের ক্ষেত্রেও এর জ্বর এবং সংক্রমণ কমানোর ক্ষমতা রাখে। চুলের খুসকি কমাতে যেমন পারে, তেমনি নিম পাতা বেটে মুখে লাগালে ব্রণের হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের শরীরের লিভারকে ভালো রাখে। নিম ফুলের থেকে পাওয়া তেল শরীর এবং মন শান্ত করতে ব্যবহার করা হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিম পাতা পানিতে হালকা ফুটিয়ে সেই ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে চোখ ধুলে চোখ ভাল থাকে। নিম তেল আমাদের শরীরের জয়েন্ট যেমন হাঁটু, গোড়ালি এ সব জায়গার ব্যাথা উপশমে সমান পারদর্শিতা রাখে।
নিম গাছকে বিজ্ঞানীরা আগামী শতকের মহামূল্যবান বৃক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং নিম গাছের তৈরি ওষুধ রাসায়নিক ওষূধের চেয়ে বেশি উপকারে আসবে বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে নিম অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে ১০ বছর বয়সের দু‘টি নিম গাছের পাতা, ফল, তেল, ও ডালপালা বিক্রি করে সে আয় থেকে ৫ জনের একটি পরিবারের সারা বছরের মৌলিক চাহিদা পূরণ সম্ভব।
সামনে গাছ লাগানোর মৌসুম শুরু হবে। সবার বাড়ির খালি জায়গায় রাস্তার ধারে যার যার পছন্দ অনুযায়ী গাছ লাগাতে পারি।আসুন গাছ লাগাই,।