শয়তান কিভাবে ধোকা দেয় পর্ব ৩

লেখক: মুহাম্মদ তৌফিক রহমান।
শয়তান সেই বহু আগ থেকে আমাদের তথা মানুষ জাতী কে ধোকা দিয়ে আসছে আমাদের আদি পিতা আদম (আ) কে ইবলীস ধোকা দিয়েছিলো এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারিমে বলেন।
وَقُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَزَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَکُلَا مِنۡہَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا ۪ وَلَا تَقۡرَبَا ہٰذِہِ الشَّجَرَۃَ فَتَکُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
فَاَزَلَّہُمَا الشَّیۡطٰنُ عَنۡہَا فَاَخۡرَجَہُمَا مِمَّا کَانَا فِیۡہِ ۪ وَقُلۡنَا اہۡبِطُوۡا بَعۡضُکُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ ۚ وَلَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ وَّمَتَاعٌ اِلٰی حِیۡنٍ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর আমি বললাম, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না ; হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কিন্তু শয়তান এটা হতে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান হতে তাদেরকে বহিষ্কার করল। আমি বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও, পৃথিবীতে কিছুকালের জন্যে তোমাদের বসবাস ও জীবিকা থাকল।’।’ [সূরা বাকারাহ আয়াত নং ৩৫-৩৬}
ব্যাখ্যা: আল্লাহ আদম (আ) কে জান্নাতে থাকতে বললেন এবং ইচ্ছে মতো খাওয়া দাওয়া করতে বললেন অর্থাত জান্নাতে তারা স্বাধীন ছিলো তবে আল্লাহ তাদের কে পরীক্ষা করার জন্য এক বিশেষ গাছের নিকট যেতে নিষেধ করলেন কিন্তু শয়তান তাদের কে ধোকা দিয়ে ঐ গাছের ফল আহার করায় ফলে উভয়ের লজ্জাস্থান উভয়ের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায় ফলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের কে জান্নাত থেকে বের করে দেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারিমে বলেন।
فَدَلّٰىہُمَا بِغُرُوۡرٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ ؕ وَنَادٰىہُمَا رَبُّہُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡہَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَاَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
এভাবে সে উভয়কে ধোঁকা দিয়ে নিচে নামিয়ে দিল। সুতরাং যখন তারা সে গাছের স্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের উভয়ের লজ্জাস্থান উভয়ের কাছে প্রকাশ হয়ে গেল। অনন্তর তারা জান্নাতের কিছু পাতা (জোড়া দিয়ে) নিজেদের শরীরে জড়াতে লাগল। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ গাছ থেকে বারণ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
—আল আ'রাফ - ২২ [আয়াত টির অনুবাদ মুফতি তাকী উসমানীর তাফসিরে তাওযীহুল কুরআন থেকে নেওয়া হয়েছে ]
এই আয়াত থেকে আমরা আরো বুঝতে পারি যে শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান আমাদের আদি পিতা থেকে শুরু করে আজ অবধী আমাদের ধোকা দিয়ে যাচ্ছে।
শয়তানের ধোকা কে আমরা কয়েক ভাগে ভাগ
করতে পারি। যেমন ব্যাক্তি পর্যায়ে শয়তানের ধোকা, পারিবারিক পর্যায়ে শয়তানের ধোকা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে শয়তান ধোকা, ১: ব্যাক্তি পর্যায়ে শয়তানের ধোকা।
যখন কোন ব্যাক্তি আল্লাহর ইবাদাত সহ সকল ইসলামী কর্মকান্ডের প্রতি উদাসীন হয় তখন তাকে আমরা ব্যাক্তি পর্যায়ে শয়তানের ধোকা বলতে পারি।
যখন কোন ব্যাক্তি সালাত সিয়াম হজ্ব যাকাত আদায় করে না তখন সেই ব্যাক্তি শয়তানের ধোকার মধ্যে পড়ে যায়। এছাড়া কোন ব্যাক্তি যখন ইসলামের কোন বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে তখনো মানুষ শয়তানের ধোকায় পড়ে এমন করে মোট কথা যদি কোন ব্যাক্তি যখন ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড করে তখন তাকে আমরা ব্যাক্তি পর্যায়ের শয়তানের ধোকা বলতে পারি
২:পারিবারিক পর্যায়ে শয়তানের ধোকা।
এমন অনেক পরিবার আছে যারা কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে পারিবারিক জীবন যাপন করে না এমন অনেক পরিবার আছে যারা কেউ সালাত আদায় করে না সাওম পালন করে না এমন অনেক পরিবার আছে যারা ইসলামের সম্পত্তি বন্টন পদ্ধতির অনুসরণ করে না তারা পারিবারিক ভাবে শয়তানের ধোকায় পড়ে আছে
৩: সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে শয়তানের ধোকা।
আমাদের সমাজে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ সালাত আদায় করে ইসলাম ঠিক মতো মানে না মূলত এই রকম পরিস্থিতির স্বীকার সকল সমাজ সামাজিক ভাবে শয়তানের ধোকার অন্তর্ভুক্ত আর সাংস্কৃতিক পর্যায়ে শয়তানের ধোকা হলো গান বাজনা সহ অন্য সব ইসলাম বিরোধী কালচার হলো সাংস্কৃতিক পর্যায়ে শয়তানের ধোকা। যেমম বিয়ের মধ্যে গায়ে হলুদ বিয়ের আগে গাজ বাজনা ইত্যাদি। এছাড়া মৃত্যু চল্লিশা কুলখানি ইত্যাদি ইসলাম সম্মত নয় কিন্তু আমাদের সমাজে এগুলো প্রচলন আছে তাই এগুলো সাংস্কৃতিক পর্যায়ে শয়তানের ধোকা
৪: রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শয়তানের ধোকা ।
যদি রাষ্ট্রপর রাজনৈতিক পর্যায়ের মানুসহ সকল সাধারণ মানুষ ইসলামি বিচার ব্যবস্থা ইসলামি শাসন ব্যবস্থা অর্থাত ইসলামি খিলাফাহ কায়েম হোক মোট কথা যে দেশের জনগণ চায় না রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হেক এমন টা না চায় তাহলে তা হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শয়তানের ধোকা।