ইসলাম ধর্ম

গীবত থেকে মুক্তির উপায়: দান করলেই কি মাফ হবে?

গীবত (পরনিন্দা) করা ইসলামে হারাম এবং এটি একটি গুরুতর গুনাহ। কেবলমাত্র দান-সদকা করে এই গুনাহ মাফ পাওয়া যায় না, বরং ইসলামের সঠিক নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে।


হাদিসসমূহ:

১. গীবত কী এবং এর শাস্তিঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“তোমরা জানো কি গীবত কী?”
সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।’
তিনি বললেন, ‘তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে।’
তখন কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি যা বলছি, যদি তা সত্য হয়, তাহলেও কি গীবত হবে?’
তিনি বললেন, ‘যদি সত্য হয়, তবে সেটিই গীবত। আর যদি মিথ্যা হয়, তবে তা হবে অপবাদ (বুহতান)।’”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ২৫৮৯)

২. গীবতের শাস্তিঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“মেরাজের রাতে আমি এক জাতিকে দেখলাম, যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও বুকে আঁচড়াচ্ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে জিবরাঈল! এরা কারা?’
তিনি বললেন, ‘এরা সেইসব লোক, যারা মানুষের গোশত খেত (অর্থাৎ গীবত করত) এবং তাদের সম্মানহানি করত।’”
(আবু দাউদ, হাদিস নং: ৪৮৭৮)


গীবতের গুনাহ মাফের উপায়ঃ

যার নামে গীবত করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়া:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের প্রতি জুলুম করেছে (যেমন গীবত করেছে), সে যেন আজই তার কাছে ক্ষমা চায়, কারণ কিয়ামতের দিনে দিরহাম ও দিনার থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তবে তা থেকে নেওয়া হবে। আর যদি তার নেক আমল না থাকে, তবে অন্যের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ২৪৪৯)

যদি ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয়, তবে তার জন্য দোয়া করা:
কারো কাছে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হলে, তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত, যেন তিনি তাকে উত্তম প্রতিদান দেন এবং আমাদের গুনাহ মাফ করেন।

আল্লাহর কাছে আন্তরিক তওবা করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলোকে ভালো কাজে পরিণত করে দেন।”
(সূরা আল-ফুরকান: ৭০)

দান-সদকা করা:
দান-সদকা নেক আমলের অংশ এবং এটি গুনাহ মোচনে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি সরাসরি গীবতের গুনাহ মোচনের গ্যারান্টি নয়। দান করা উত্তম কাজ, তবে এর পাশাপাশি পূর্বোক্ত নিয়মগুলো মানতে হবে।


উপসংহার:

✅ শুধু দান করে গীবতের গুনাহ মাফ হবে না।
✅ প্রথমে, যার নামে গীবত করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
✅ যদি ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয়, তবে তার জন্য দোয়া করতে হবে।
✅ আল্লাহর কাছে আন্তরিক তওবা করতে হবে।
✅ নেক আমল ও দান-সদকা করলে গুনাহ মোচনের সম্ভাবনা বাড়বে।

তাই, কেবল দান করলেই গীবতের গুনাহ মাফ হবে না—তওবা ও ক্ষমা চাওয়াই মূল উপায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button