আদালতে জামিন নিয়ে প্রশ্ন সিলেট বিএনপি নেতাদের

সিলেটের নিম্ন আদালতে ফ্যাসিস্ট দোসরদের জামিন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি’র নেতারা। বলেছেন, কিছু কিছু জামিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিএনপি’র নেতারা এ কথা বলেন।
তারা বলেন, গত ২৯শে জানুয়ারি সিলেটের একটি আদালত থেকে একাধিক মামলায় জামিন নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক কাউন্সিলর রেজওয়ান ও তার ভাই কামরান। আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আদালতের জামিন দেয়ার কোনো এখতিয়ার ছিল না। তা সত্ত্বেও একই আদালত থেকে পাঁচটি মামলায় জামিন দেয়া হয়েছে। এতে স্পষ্টত বোঝা যায়, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এখনো সিলেটের আদালতসহ বিভিন্ন জায়গায় বহাল তবিয়তে আছে। ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিজমের দোসরদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। তারা যদি ভবিষ্যতে আইন লঙ্ঘন ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তা প্রতিহত করবো। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখেছি এদেশের মানুষের ওপর জুলুমকারী পতিত স্বৈরাচারের দোসররা কীভাবে একদিনেই সবক’টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। আদালতে স্বৈরাচারের দোসরদের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া যা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আদালতের বিচারকরা তাদের মনগড়া জামিন দিচ্ছেন, যা হতাশাজনক। এ ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পাঁচটি মামলায় সাবেক কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ ও তার ভাই কামরান আহমদের জামিন পাওয়ার পর থেকে সিলেট জুড়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। জিআর মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকে পুলিশ, আসামি জামিন চাওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতের পিপি’র জানার কোনো সুযোগ থাকে না। ওই দিনেও রেজওয়ান ও তার ভাই পাঁচটি মামলায় জামিন চাওয়ার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের পিপিরা জামিনের আপত্তি করেন এবং বিএনপি’র কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক সংক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হন ও তারা পাঁচটি মামলায় জামিনের প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় আইনজীবী সহকারী সমিতির নির্বাচন পরিদর্শনের দরুন আদালতে আগে থেকে অবস্থান করা সিলেট মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী সংক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তারা যদি সেসময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতেন, তাহলে আদালত প্রাঙ্গণে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারতো বলে সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান। বলেন, একসঙ্গে পাঁচটি মামলায় জামিন পাওয়া নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানানো হয়। পরবর্তীতে পিপি অফিসে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ফ্যাসিজমের দোসরদের পাওয়া জামিন আইনিভাবে বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপন করা হয় গত ৪ঠা আগস্ট সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও মহড়ার বিষয়টি।
নেতারা বলেন, অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে ফ্যাসিস আওয়ামী লীগের সস্ত্রাসীরা। এই সকল সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও অগ্নি অস্ত্র উদ্ধার না করা হলে সিলেটের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে না। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা হয়েছে। সেই সকল ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। যার সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঠিক সেইভাবে আমরাও পরিষ্কার করছি সিলেটের ভাঙচুরের কোনো ঘটনার সঙ্গে বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ১০ জনকে বহিষ্কার করেছি। যদি দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন- মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম, ডা. আশরাফ আলী, রহিম মল্লিক, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, আনোয়ার হোসেন মানিক, মামুনুর রশীদ মামুন, মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল, নাদির খান, মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব, রফিকুল ইসলাম রফিক, জেলা বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট সাঈদ আহমদ, মহানগর বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক তারেক আহমদ খান, জেলা বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বদরুল ইসলাম প্রমুখ।