বানিজ্য সংবাদ

ট্যারিফ কমিশনের কাজের ফলে সুফল পেয়েছে ভোক্তা

আমরা রমজানকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছি, যাতে সে সময় দ্রব্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা যায়। তিন মাস আগে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে।

আমরা রমজানকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছি, যাতে সে সময় দ্রব্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা যায়। তিন মাস আগে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যার প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে।

অনেকেই ডিমের দাম নিয়ে কথা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিমের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গিয়েছিল। ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৯০-২০০ টাকায়। পরবর্তী সময়ে সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপের কারণে ডিমের দাম কমেছে। এখন ডজনপ্রতি ১২৫-১৩০ টাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এ উদ্যোগগুলো সরকার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) সুপারিশ অনুযায়ী করেছে, যার ফল এখন ভোক্তারা পাচ্ছেন। ডিমের দাম যেন দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকে সেই বিষয়েও আমাদের উদ্যোগ আছে। আশা করি, দামের ক্ষেত্রে বিটিসির যে প্রভাব আছে সেটি ভবিষ্যতে পরিলক্ষিত হবে।

ভোজ্যতেলের দাম নিয়েও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম টনপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ ডলারে উঠে গিয়েছিল। সেই অনুপাতে দাম বাড়েনি। আমরা বাড়তে দিইনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ফর্মুলা অনুসারে ভোজ্যতেলের দাম ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা সেটি হতে দিইনি। যেখানে শুল্ক কমানোর প্রয়োজন ছিল সেখানে আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। এখন ভোজ্যতেলের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যেই আছে। বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের কাছ থেকে আশ্বাস নেয়া হয়েছে রমজানে ভোজ্যতেলের দামের কোনো পার্থক্য হবে না। এখন যে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে তার সরবরাহ এবং দামের স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা আমরা পেয়েছি। আশা করি, এ দামে চাহিদা ও জোগান বজায় থাকবে।

ভোজ্যতেলের বিকল্প উৎস অনুসন্ধান করেছি। আমরা সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর নির্ভরশীল। এর বিকল্প হিসেবে সানফ্লাওয়ার অয়েল এবং ক্যানোলা অয়েল আমদানির জন্য কাজ করেছি। এ দুই ভোজ্যতেলই একই দামে সরবরাহ করা যাবে। সেজন্য এ ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। আরেকটি ভোজ্যতেলের অনুসন্ধান করেছি, সেটি হলো রাইস ব্র্যান অয়েল। রাইস ব্র্যান অয়েল আমাদের দেশেই উৎপাদন হয় এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে রফতানি হয়ে যেত। সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানির কারণে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। রাইস ব্র্যান অয়েল যাতে রফতানি না হয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিশেষ করে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান অয়েলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় সেজন্য আমরা কাজ করেছি। শিগগিরই আশা করছি ভালো একটি ফলাফল পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। সামগ্রিকভাবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৩০০ টন রাইস ব্র্যান অয়েল সরবরাহে যুক্ত হচ্ছে। এর ফলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারব। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ও মৌসুমি প্রভাব আছে, সেজন্য আমরা স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদেও কাজ করছি।

শুধু ভোজ্যতেলই নয়, চিনির দামেও আমরা বেশ পার্থক্য লক্ষ করেছি। আগে বাজারে চিনি কেজিপ্রতি ১৩০ টাকায় কিনতে হয়েছে। বর্তমানে তা ১২০-১২৫ টাকায় নেমে এসেছে। সম্প্রতি লক্ষ করেছি, ঋণপত্র (এলসি) পর্যাপ্ত হয়েছে। আমদানিও পর্যাপ্ত হয়েছে। আমাদের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। গত বছর খেজুরের শুল্ক একেবারে শেষ পর্যায়ে কমানো হয়েছিল। ফলে ভোক্তারা এর সুফল পায়নি। কিন্তু এ বছর তিন মাস আগেই খেজুরের দাম কমানোর জন্য কাজ করেছি। খেজুর আমদানিকারক ও অংশীজনদের সঙ্গে বসে কাজ করেছি। খেজুরের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সরকারের যেখানে হস্তক্ষেপ করার দরকার সেখানে তা করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে খেজুরের চাহিদা প্রায় দুই লাখ টন। সেই চাহিদা অনুসারে আমদানি হয়েছে এবং রমজানের আগেই সেটি চট্টগ্রাম বন্দর বা অন্য বন্দর দিয়ে খালাস হবে। খেজুরের দামেও আমরা বড় ধরনের সুবিধা পাব। গত বছর ১ হাজার টাকায় যে খেজুর খেয়েছি, সেটি ৭০০-৯০০ টাকায় কীভাবে পাওয়া যায় সে ব্যাপারে কাজ করেছি। এছাড়া শুল্ককে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হয়েছে। গত বছর খেজুরে শুল্কের মধ্যে একটি ছিল অগ্রিম আয়কর। খেজুরে অগ্রিম আয়কর ছিল ১০ শতাংশ। খেজুর ম্যানুফাকচারিং হয় না বা কোনো মূল্য সংযোজন হয় না। বাইরে থেকে যেভাবে প্যাকেজ হয়ে আসে সেভাবেই বিক্রি হয়। যেহেতু খেজুর ম্যানুফাকচারিং হয় না তাই খেজুরে অগ্রিম আয়কর রাখা অযৌক্তিক মনে হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে আশা করছি।

সম্প্রতি ৪ টাকার সবজি কেন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে—সেটা নিয়ে আমরা গবেষণা করেছি। গবেষণার ফলাফল একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সেখানে দেখা গেছে, ঢাকার কারওয়ান বাজারে ৪ টাকার সবজি ১০ টাকা হয়। ১০ টাকা হওয়ার পর অনেকগুলো স্তর দেখতে পেয়েছি। প্রতিটি স্তরে পুঁজি লগ্নি হচ্ছে। পুঁজি লগ্নির কারণে অনেক মুনাফাও করা হচ্ছে। প্রতি জন ২০ শতাংশ বা তার বেশি করে মুনাফা করছে। তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা করছে। সরকারের তালিকায় তারা নেই। তারা কোনো রেজিস্টার্ড ব্যবসায়ী নন। তারা কোনো কর দেয় না। ফলে এর চাপ পড়ছে ভোক্তার ওপর। সেই স্তরগুলো কমানোর জন্যও কাজ করছি।

ট্যারিফ কমিশনের কাজের ফলে এরই মধ্যে আমরা সুফল পেয়েছি। ভবিষ্যতেও স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যাবে। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে আরো সুফল পাওয়া যাবে।

ড. মইনুল খান: চেয়ারম্যান (সচিব), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button