রমাদানের ২৪ ঘণ্টার রুটিন:

ইনশাআল্লাহ, এই রুটিনটি আমাদের জন্য মানতে সহজ হবে। আল্লাহই তাওফিকদাতা।
.
রাত ৩:০০ টার সময় ঘুম থেকে জাগা।
৩:০০—৩:১৫ অজু-ইস্তিঞ্জা (ওয়াশরুমের কাজ) সম্পন্ন করে নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
.
৩:১৫—৩:৪৫ তাহিয়্যাতুল উযু (২ রাকাত) ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়াই উত্তম। তবে, এর বেশি পড়াও জায়েয।
.
৩:৪৫—৩:৫৫ তাহাজ্জুদ শেষে ১০ মিনিট সময় আন্তরিকভাবে ইস্তিগফার ও দু‘আ করা। শেষ রাতের ইস্তিগফার ও দু‘আ আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। যাদের খাবার খেতে সময় কম লাগে, তারা দু‘আয় আরো কিছু সময় যোগ করতে পারেন।
.
৩:৫৫—৪:২০ সাহরি খাওয়া (২৫ মিনিট)
বিভিন্ন এলাকাভেদে সময় এদিক-সেদিক হবে। প্রথম কয়েক দিন এখানে কিছু এক্সট্রা সময় বাকি থাকবে। আস্তে আস্তে কমে যাবে সময়। সম্ভব হলে তাহাজ্জুদ ও দু‘আর মধ্যে সময় আরেকটু বাড়িয়ে সাহরিতে কমিয়ে দেবেন। তবে, কোনোটাতেই তাড়াহুড়ো করবেন না। সাহরিও কিন্তু একটি ইবাদত!
.
৪:২৫—৫:০০ অযু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করা, বিশ্রাম করা ও ফজরের নামাজ আদায় করা।
.
এরপর, খুব ভালো হবে—যদি ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সজাগ থেকে, যিকির ও তিলাওয়াত করে, সবশেষে ইশরাকের (দোহার/চাশতের) নামাজ পড়ে ঘুমানো যায়।
.
তাই যদি হয়, তবে—
৫:০০—৬:১০ সকালের মাসনুন যিকর, তিলাওয়াত ও ইশরাকের নামাজ পড়া। ইশরাকের নামাজের ফজিলত অনেক। সূর্যোদয় শুরুর ১০/১৫ মিনিট পরই ইশরাক পড়া যায়। তবে, উত্তম হলো ২৩ মিনিট পরে পড়া।
.
[আর যারা ফজরের পর ঘুমিয়ে যাবেন, তারা সকালের মাসনুন যিকরগুলো করে পাঁচটার মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে পারেন এবং ৮:০০/৮:৩০-এ জাগতে পারেন। এরপর চাশতের নামাজ পড়বেন। কমপক্ষে ২ রাকাত, উত্তম হলো ৪ রাকাত; চাইলে আরও বাড়াতে পারেন]
.
(যারা ইশরাক পড়ে ঘুমাতে যাবেন)—
৬:১৫—৯:০০ ঘুম (ইশরাকের নামাজ শেষে তিন ঘণ্টা ঘুমাবেন)
.
এরপর, যারা জব করেন, তারা কাজে যাবেন। যারা সম্পূর্ণ ফ্রি থাকবেন, তাদের জন্য নিচের সময়বণ্টন—
.
সকাল ৯:০০—১১:০০ কুরআন তিলাওয়াত [ইস্তিঞ্জা (ওয়াশরুমের কাজ) সেরে অজু করে প্রস্তুতি নিতে নিতেই চলে যাবে আধা ঘণ্টা। বাকি দেড় ঘণ্টা তিলাওয়াত। যারা একটানা তিলাওয়াত করতে পারেন না, তারা পাশাপাশি কোনো ধর্মীয় কিতাব পড়তে পারেন, নফল নামাজ পড়তে পারেন বা যিকর করতে পারেন]
.
১১:০০—১২:৪৫ বাসার যাবতীয় কাজ করা, বাচ্চাকে সময় দেওয়া, নিজের কোনো অ্যাকাডেমিক কাজ, পড়ালেখা বা অধ্যয়ন থাকলে তা সম্পন্ন করা।
.
১২:৪৫—১:০০ গোসল সম্পন্ন করা। (যারা ৯-টায় ঘুম থেকে জেগেই গোসল করতে চান, তারা সেভাবেই সময় সেট করে নেবেন)
.
১:০০—১:৪৫ নামাজের প্রস্তুতি, জোহরের নামাজ এবং পরবর্তী মাসনুন দু‘আ ও যিকরগুলো করা।
.
১:৪৫—৩:৪৫ অর্থসহ কুরআন পাঠ, তাফসির, হাদিস অথবা দ্বীনি কোনো কিতাবাদি অধ্যয়ন করা। যারা এখনো সহিহভাবে কুরআন পড়তে পারেন না, তারা শিখবেন। কিছু সুরা এবং দু‘আ-যিকর মুখস্থ করবেন। ক্লান্তি আসলে, মোবাইলে তিলাওয়াত অথবা দ্বীনি কোনো লেকচার/বয়ান শুনা যেতে পারে।
.
৩:৪৫—৪:৪৫ ঘুম (দুপুরের হালকা ঘুম সুন্নাহ, একে হাদিসে বলা হয়েছে ‘কাইলুলাহ’। যদিও এটি আরেকটু আগে করতে হয়, তবে রামাদানে এই সময়ে একটু ক্লান্তি আসে। আর এই সময়টা কাটতে চায় না যেনো। তাই, এই সময়ে ঘুম বা একটু বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে)
- যারা ঘুমাতে চান না, তারা অন্য কোনো প্রোডাক্টিভ কাজ করতে পারেন এ সময়ে। অথবা যেকোনো নেক আমল।
.
৪:৪৫—৫:১৫ অজু-ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করা, আসরের সলাত আদায় করা ও মাসনুন যিকরগুলো পড়া।
.
৫:১৫—ইফতার পর্যন্ত
শরবত/পানীয় প্রস্তুত করা এবং ইফতার তৈরি করা বা তৈরিতে সাহায্য করা। ইফতারের আগ মুহূর্তে দু‘আ করা। (ইফতারের আয়োজন কম ও সহজ হলে আসরের পর ৩০ মিনিট কুরআন-হাদিসের তালিম হতে পারে—পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে। অথবা সম্মিলিত কোনো দ্বীনি আলোচনা, কিংবা কুরআন তিলাওয়াত করা। এরপর ইফতারের প্রস্তুতি ও সর্বশেষ ইফতারের পূর্বে দু‘আ।)
.
[সকালের যিকরগুলো ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া থেকে নিয়ে ফজরের পরেও করতে পারেন (তবে, সূর্যোদয়ের আগেই শেষ করবেন)। আর বিকাল বা সন্ধ্যার যিকরগুলো আসরের পর অথবা মাগরিবের পর পড়তে পারেন। দুটোর পক্ষেই সহিহ দলিল আছে এবং আলিমগণের মতামত রয়েছে]
.
মাগরিবের পর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিশ্রামের সময়। এসময় আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ নেওয়া যেতে পারে বা অনলাইনে কিছু সময় কাটানো যেতে পারে। এরপর ইস্তিঞ্জা ও অজু সেরে নামাজের জন্য প্রস্তুত হওয়া।
.
৮:০০—১০:০০ ইশা ও তারাবির সলাত আদায় করা (সলাতে যত বেশি সময় দেওয়া যায়, তত ভালো। আমরা অ্যাভারেজ একটি হিসাব ধরেছি, যা খুব বেশি নয় আবার খুব কমও নয়। এখানে কম-বেশি হতে পারে)
.
নামাজ যদি পৌনে দশটায় শেষ হয়ে যায়, তবে ৯:৪৫—১০:৪৫ এই এক ঘণ্টার মধ্যে তিন ধরনের কাজ করা যেতে পারে। সেগুলো হলো: (১) প্রয়োজনবোধ করলে হালকা খাবার খাওয়া; (২) মেন্টাল রিফ্রেশমেন্টের জন্য গল্প করা অথবা অনলাইনে একটু উঁকি দেওয়া; (৩) ঘুমানোর পূর্বের যিকর, দু‘আ ও সুরাগুলো পাঠ করা। আর যদি নামাজ শেষ হতে ১০ টা বেজে যায়, তবে ১১ টার মধ্যে এগুলো করা যেতে পারে।
.
অতঃপর রাত ১০:৪৫/১১:০০—৩:০০ পর্যন্ত ঘুম। (রাতে ৪ ঘণ্টা এবং দিনে দুই দফায় আরো ৪ ঘণ্টা ঘুম। সব মিলিয়ে ৮ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট)
.
শেষকথা: ঘড়ি ধরে রুটিন অনুসরণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাছাড়া সবার রুটিন সমান হবে, এমন আশা করাও উচিত নয়। সবাই নিজেদের ফেভার থেকে এই রুটিন এদিক-সেদিক করে নেবেন। রামাদানের ইবাদত করুন স্বাচ্ছন্দ্যে; আগ্রহ নিয়ে; ভালোবাসার সাথে। নিজের উপর প্রেশার নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিকে বিরক্তির পর্যায়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে শেষমেষ কিছুই হবে না। আল্লাহ্ আমাদের তাওফিক দান করুন। সাহায্যকারী ও তাওফিকদাতা একমাত্র তিনিই।