অব্যাবস্থাপনা

অবৈধ্য গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তিতাস কর্মকর্তা ও কর্মচারী দেখার কি কেউ নেই

এইচ, এম মিনহাজ মাহমুদ: শিল্প সমৃদ্ধ জেলা গাজীপুরে চলছে তিতাস গ্যাস চুরির মহো উৎসব। খোদ সরকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদাররা প্রতি বছর প্রায় ১শ কোটি টাকার ও বেশি রাজস্ব চুরি করছে বলে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফান্ডেশন ও অপরাধ বিচিত্রার টিম খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে যে, গাজীপুরের চন্দ্রা তিতাস গ্যাস অফিসের অধিনে রয়েছে কোনাবাড়ি, দেউলিয়াবাড়ি, আমবাগ, মৌচাক, আড়াবাড়ি, জামতলা, আমবাগান, নিশ্চিন্তপুর, তেলিরচালা, বান্নারা, বারইবাড়ী, বাইমাইল, কাশমপুর, কামরাঙ্গীচালা, জরুন, নীলনগর, সফিপুর, গোলবাথান, চান্দরা, কালিয়কৈরসহ আরও বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকা শিল্প কলখারকানা আরও ঘন জনসাধারনের বসতিতে পরিপূর্ণ ঐসব স্থাপনায় বৈধ্য গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি অগনিত অবৈধ্য গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রা, তিতাস গ্যাস অফিসের দেয়া তথ্য মতে জানা যায় যে, তারা মিটার যুক্ত ৫১টি এবং মিটার ছাড়া ১১ হাজার ৫শ ১০টি আবাসিক সংযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে সিঙ্গেল বার্নার ২৮৯টি এবং ডাবল বার্নার ৪৫,৭৮৯ টি এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৪টি এবং বাণিজ্যিক ভাবে সর্বমোট ১৮৮টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বহুতল আবাসিক ভবনের মালিকেরা গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও বিল তৈরির কর্মে নিয়োজিত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নির্ধারিত মাসোহারা দিয়ে অবৈধ্য ভাবে গ্যাস ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে কেউ বৈধ্য গ্যাস সংযোগের আড়ালে চোরাই লাইনের গ্যাস ব্যবহার করে। আবার কেহ একটি বাড়ী বা একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বৈধ্য গ্যাস সংযোগ নিয়ে চোরাই পথে আরও ২/৩ টি বাড়ী অথবা প্রতিষ্ঠানের গ্যাস ব্যবহার করে। অনেকে আবার ৫টা, ১০টা এমনকি ২০টি সিঙ্গেল ও ডাবল চুলার অনুমোদন নিয়ে তার দ্বিগুন বা তিনগুন এরও বেশি পরিমান চুলা ব্যবহার করছে। আবার কারও দীর্ঘ দিনের বকেয়া বিল চোরাই পথে গ্যাস ব্যবহার ও অতিরিক্ত চুলায় গ্যাস ব্যবহারের দায়ে সংযোগ বিচ্ছন্ন করলেও, টাকার বিনিময়ে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তাদেরকে পুনরায় অবৈধ্য গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এমনকি গ্যাস লাইনের যন্ত্রাংশ ও রাইজার খুলে আনার পর মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে পথের মধ্যে গাড়ি থেকে তা নামিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অনেকে আবার গ্যাস সংযোগের জন্য তিন চার বছর পূর্বে আবেদন করে এবং ব্যাংকে ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেয়ার পর বৈধ সংযোগ না পেয়ে তারা ঐসব কর্মচারী, কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের নির্ধারিত এক কালিন মোটা অংকের টাকা দিয়ে চোরাই লাইনে অবৈধ্য ভাবে বছরের পর বছর গ্যাস ব্যবহার করছে। অপর দিকে অনেকে আবার ওদের দ্বারা সম্পুর্ন চোরাই পথে রাতের অন্ধকারে গ্যাস সংযোগ নিয়ে নির্ধারিত মাসোহারা দিয়ে দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ্য সংযোগ। এই সব অবৈধ গ্যাস ব্যবহার কারীদের লোকদেখানো নকল ও ভুয়া বিল বই সরবরাহ করছে তিতাস গ্যাস অফিসের অসাধু ও দুর্নীতি বাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে সরকার এসব দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ও ঠিকাদারদের জন্য শুধু মাত্র গাজীপুর থেকে প্রতি বছর শতকোটি টাকারও বেশি রাজ্বস্ব হারাচ্ছে এই ব্যাপারে চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ তিতাস গ্যাস অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকোশলী মোঃ খোরশেদ আলম এর সাথে কথা বললে সে বলে তাকে তথ্য দিতে অথচ তাকে মোবাইলে হটস্অ্যাপ- এর ম্যাসেজের মাধ্যমে নকসা করে একাদিক বার তথ্য দেওয়ার পরেও কোনো কাজ হয়নি। বড়জোর যে অভিযোগ করেছে উল্টো তাকেই ফাঁসিয়ে দিয়েছে যেমন গত ৪/১২/২৪ ইং তারিখে। গাজীপুর কোনা বাড়িতে হর্টস্ হাউজিং, আলী হাউজিং, আজিজ গং এর নিয়ন্ত্রনে থাকা বেশ কিছু ৫ থেকে ৮ তালা ৩০/৪০টি বাড়ির অবৈধ্য লাইনের অভিযোগ করলে তা কেটে নিয়ে যায়, তিতাস কর্তৃপক্ষ অথচ তা আবার ঐ দিন রাতেই টাকার বিনিময়ে পূনঃ সংযোগ দিয়ে দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে প্রকৌশলী খোরশেদ আলম এর সাথে কথা বললে এবং মোবাইলে ছবি সহ ভিডিও পাঠালে সে জানায় পরে ব্যবস্থা নিবে। এর মধ্যে ৩৩টি চুলা অবৈধ্য পাওয়ার পরও কিভাবে সংযোগ পেল গ্রাহক সেলিনা আক্তার। যার সংকেত নাম্বার ১৯১০২২৭১৫, অথচ তথ্য দাতার নিজ স্বীকার করা দুইটি চুলার ১,৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিপানা দেওয়ার পরও আজ পযর্ন্ত সংযোগ পাইনি।

তথ্যদাতা বাড়ির মালিক হাসেম খান, যার গ্রাহক সংকেত নাম্বার ১৯১ ১১৯৯০। উল্টো অভিযোগকারিকে তিতাস অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী ও এলাকার স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীদের দিয়ে হয়রানি কারাসহ মারার হুমকী দেওয়া হয়। হাসেম খানের সংযোগের ব্যাপারে কথা বললে জানায় যে, জরিমানা হলেও বোড হতে অনুমোদন হয়ে আসতে নিম্নে ৬ মাস সময় লাগবে। তাহলে আমাদের প্রশ্ন ১৮, ২১, ১৬, ২৪, ২৮, ১২, ১৯, ও অবৈধ্য ৩৩ চুলা পরের দিনই কিভাবে সংযোগ পায়, সংযোগ বিচ্ছিন্ন কপি ও বিচ্ছিন্ন কারী ইঞ্জিনিয়ার নূরনবীর স্বাক্ষরকৃত পেপার্সও বিভিন্ন রাইজারের সংযোগের সম্পুর্ন ছবি ও ভিডিও ফোটেজ প্রকৌশলী খোরশেদ আলম সাহেবের মোবাইলে দেয়া আছে। এমনকি তার কথাও রেকর্ডকরা আছে। ঠিক এমনি ভাবে জরুরী কিছু তথ্য ও বেশ কিছু অবৈধ্য সংযোগের ব্যাপারে গাজীপুর জেলার ডি.জি.এম সুরুজ আলম সাহেবের সাথে কথা বললে সে জানায় তার একজন সৎ ও নির্বীক অফিসারকে পাঠালে তার কাছে তথ্যগুলো দেয়ার জন্য। সে খুব সততার সাথে কাজ করবে। তার কথা অনুযায়ী গত ১৭/২/২৫ইং তারিখে সেই অফিসার আমাকে ফোন দেয় এবং গাজীপুর বাঘের বাজার ও মাষ্টার বাড়ি স্পটে
যেতে বলে। সেখানে ১২/১৪শ চুলারও বেশি অবৈধ্য সংযোগ রয়েছে। আমি সেখানে যাই আর দেখতে পারি যে ঐ কর্মকর্তার সাথে আরও দুই জন ব্যাক্তি রয়েছে। আমি বলি আপনার একা আসার কথা ছিল। সুরুজ সাহেব বলেছে শুধুআপনাকে অবৈধ্য সংযোগ গুলো দেখিয়ে দিতে পরে ম্যাজিস্টেট টিম কাজ করবে। সে বলে সমস্যা নাই ওনারা
সিনিয়র অফিসার চলেন। আমি তাদেরকে নিয়ে যাই এবং দেখিয়ে দেই। কিšদ তারা বলে এদিকে আমাদের কোনো বৈধ্য সংযোগ নেই আর অবৈধ্য তো প্রশ্নই উঠেনা।

আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করি এবং বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাই। তারা গ্যাস সংযোগ দেখতে পেয়ে আমার আগেই রাইজারের কাছে পৌঁছে যায় এবং সেলিমের ৫ তালা বাড়িসহ ৪,৫টি
বাড়ির রাইজার খুলে নেয় কিন্তু ৭৪টা চুলার ১টি চুলাও বা অন্য কোনো যন্ত্রাংশও খুলে নাই। আমি তিতাসের ঐ কর্মকর্তাদের বার বার বললাম তারা প্রাই ১৫ বছর ধরে এই চোরাই লাইন চালাচ্ছে এমনকি মহল্লার অনেক লোকজন সাক্ষিও দিয়েছে তাদের জরিপানা করার জন্য, কিšদ তারা কোনো কিছুই করে নাই। এব্যাপারে ডি.জি.এম সুরুজ আলম সাহেবের মোবাইলে কথা বললে সে জানায় যে আপনারা অভিযোগ করেছেন আমরা সংযোগ খুলে দিয়েছি। এছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমি অফিসারদের বললাম, বাঘের বাজার সংযোগ কাটলেন অথচ মাষ্টার বাড়িতে এক হাজারেরও বেশি সংযোগ তার কি হবে? তারা আমাকে জানায় ওটা আমাদের এড়িয়া না অথচ আমরা জানি শ্রীপুর উপজেলাও গাজীপুর জেলার এড়িয়া। অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত টিম আরও জানতে পারে যে বাঘের বাজার এলাকায় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেত্রী মোঃ সেলিনা, বিভিন্ন নাসকতার সাথে জড়িত সোহেল, ওসি কামাল, আব্দুল হাই সহ আরও বেশ কয়েকজন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই সংযোগগুলো চালিয়েছে এবং এই ব্যাপারে যেন কোনো ঝামেলা না হয়, তার জন্য প্রশাসন সহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে বলে জানায়।

এই ব্যাপারে জয়দেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হালিমের সাথে কথা বললে সে জানায় যে তিতাস কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার অভিযোগ করলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব। তার মানে এই বুঝা য়ায সকল কর্মকান্ডের মূলই হচ্ছে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদাররা। এদেরই কারণে দেশ শত শত কোটি টাকা রাজ্বস¦ হারাচ্ছে আর তারা ফাকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা গাড়ি বাড়ি সহ বিলাস বহুল রাজকীয় জীবন যাপন করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button