আইন ও বিচার

ভবেশের মৃত্যু যেভাবে দিনাজপুর জেলার বিরল থানার নাড়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার, অপরাধ বিচিত্রা
ঢাকা: এপ্রিল ২০, ২০২৫ (শনিবার)

ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৫) অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির একজন মানুষ বলে এলাকায় পরিচিত। একসময় ৯-১০ বিঘা জমিজমা থাকলেও বর্তমানে ভিটেমাটি ছাড়া তেমন কোন সম্পদ নেই। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ভবেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় (২৮) স্নাতকোত্তর শেষে দিনাজপুর শহরের কালিতলা এলাকায় মেসে থেকে চাকুরীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ভবেশ চন্দ্র রায় এর স্ত্রী’র ভাষ্য মতে, গত ১৭ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. বৃহস্পতিবার বিকেল অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকায় প্রতিবেশী যুবক (১) মো. রতন (৩০) পিতা- আব্দুস সাত্তার, সাং-শহর গ্রাম (২) আখতারুল ইসলাম @ আতিক (৪২), পিতা- আব্দুল কাদের সাং- বাসুদেবপুর (৩) মোঃ রুবেল ইসলাম (২৫) পিতা- মোঃ আব্দুল সাত্তার, সাং-শহর গ্রাম ও (৪) মুন্না ইসলাম (২৭), পিতা- আব্দুল মাজেদ, সাং-নরসিংপাড়া দুটি মোটর সাইকেলযোগে ভবেশের বাড়িতে আসেন। তারা একসাথে নাড়াবাড়ি হাটে যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। রতন, রুবেল এবং আতিকদের বয়স ভবেশের বয়সের চেয়ে অন্তত ১৫-১৮ বছরের ছোট হলেও তারা নিয়মিত একসাথে আড্ডা দেন, হাটে যান এবং ভবেশের বাড়িতে নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন। নিহতের শ্যালক ফুলবাবু, ছেলে স্বপন চন্দ্র এবং স্থানীয় ফুলবাড়ী হাটের অনেকের সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৭.০০ ঘটিকায় নাড়াবাড়ি বাজারে দুধ-হাটিতে রতন, আতিক, রুবেল, মুন্না ও ভবেশ চন্দ্র একসাথে অহিদুলের চায়ের দোকানে চা পান করেন। চা পান কালে তারা স্বাভাবিক ছিলেন এবং তাদের মধ্যে কাউকে শারীরিকভাবে অসুস্থ মনে হয়নি। চা পান শেষে ভবেশ পাশের দোকান থেকে পান ও সিগারেট খায়। কিছুক্ষণ পরে ভবেশ চন্দ্র হাটখোলার একটি ঘরের খুঁটিতে হেলান দেন। পরে মাথা ঘুরে সেখানে বসে পড়েন এবং প্রচন্ড ঘামতে থাকেন। পান দোকানদার মতিবুর রহমান (৫২) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান ভবেশ খয়ের, চুন ও কাঁচা সুপারি দিয়ে তার কাছ থেকে পান নিয়েছে। পান খাওয়ার একপর্যায়ে ভবেশ পানের দোকানের সামনে হাটখোলার একটি ঘরের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। এসময় তার সাথে থাকা কয়েকজনসহ স্থানীয়রা ধরাধরি করে পাশেই পল্লী চিকিৎসক লিটনের দোকানে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান পল্লী চিকিৎসক প্রথমে তার প্রেসার মেপে দেখেন প্রেসার শুন্য হয়ে গেছে।

ভ্যানচালক সাদ্দাম হোসেন জানান, এশার নামাজের সময় পল্লী-চিকিৎসক লিটনের দোকান হতে রতন ও আতিকরা ভবেশকে তার ভ্যানগাড়িতে তুলে নাড়াবাড়ি বাজারের শেষ মাথায় পল্লী-চিকিৎসক আব্দুর রহমানের চেম্বারে নিয়ে গেলে পল্লী-চিকিৎসক আব্দুর রহমান এর ছেলে পল্লী-চিকিৎসক সোহেল রানা (৩২) ভবেশের প্রেসার মেপে প্রেসার মাপার যন্ত্রে কোন রিডিং না পাওয়ায় তিনি তাকে দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে রতন ভবেশের ছেলে স্বপনকে ফোনে তার বাবার অসুস্থতার কথা জানান। মুঠোফোনে স্বপন রতনকে তার বাবাকে বাড়িতে রেখে আসার জন্য বলেন। নাড়াবাড়ি বাজার থেকে ফুলবাড়ী হাটের দূরত্ব প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার। ভবেশের সাথে থাকা রতন, আতিক, মুন্না ও রুবেল ভবেশসহ ঐ একই ভ্যান গাড়িতে ফুলবাড়ি হাটে এসে পল্লী চিকিৎসক কৃষ্ণ চন্দ্রের দোকানে আবারও ভবেশকে দেখান। পল্লী চিকিৎসক কৃষ্ণ চন্দ্রও ভবেশের অবস্থার প্রেক্ষিতে তাকে দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রতন আবারও ভবেশের ছেলে স্বপনকে জানান তার বাবা গুরুতর অসুস্থ, সে যেন শহর থেকে দ্রুত একটি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেয়।

রাত ২০.৩০ ঘটিকার দিকে ভবেশের ছেলে স্বপন শহর থেকে একটি এম্বুলেন্স নিয়ে ফুলবাড়ী হাটে আসেন। ততক্ষণে ভবেশের স্ত্রী ও শ্যালক সেখানে উপস্থিত হন। তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ২১.১৮ মিনিটে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসিজি পরীক্ষা করে ভবেশকে মৃত ঘোষণা করলে তার আত্মীয়-স্বজন ভবেশের মৃতদেহ নিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন। রাত অনুমান ২৩.৪৫ ঘটিকায় ভবেশের পরিবার থেকে বিরল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। রাত ০০.৩০ ঘটিকায় পুলিশ বাসুদেবপুরে ভবেশের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ভবেশের সুরতহাল কার্য সম্পন্ন করেন। নিহত ভবেশের শরীরের কোথাও কোন মারপিট কিংবা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তদুপরি পরিবারের সন্দেহের প্রেক্ষিতে বিরল থানা পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ভবেশের মরদেহ পোস্ট মর্টেমের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ভবেশের পরিবার মর্গ থেকে মৃতদেহ গ্রহণ করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পোস্ট মর্টেম প্রতিবেদন অচিরেই পাওয়া যাবে।

দিনাজপুর জেলা পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে নিবিড় তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

Ref: Bangladesh Police page.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button