ইসলাম ধর্ম

ঝরে গেল একটি তাজা প্রাণ: প্রমাণ করে গেল নীতি-নৈতিকতাহীন শিক্ষা ব্যবস্থার কুফল এবং ইসলামহীন শাসন ব্যবস্থার নগ্নরূপ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। বয়স ২৪ বছর। তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়। তিনি ছিলেন, উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়, প্রাণবন্ত এক তরুণ।

কিন্তু—তিনি নাকি এক মেয়ের দিকে তাকিয়ে হেসেছিলেন! এই ‘অপরাধে’ গতকাল (রবিবার) সেই মেয়ের তথাকথিত বয়ফ্রেন্ডের সহায়তায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রের নৃশংস অস্ত্রাঘাতে তিনি নিহত হন!

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

ভাইটি যদি তাওহিদ ও ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারী হয়ে থাকেন, তাহলে আশা করা যায়—মহান আল্লাহ তাকে আখিরাতে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ তিনি স্পষ্টতই জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
আল্লাহ তার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করে তাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।

এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রমাণ করে, বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কতটা হিংস্র ও অসহিষ্ণু পশুতে পরিণত করছে! পাশাপাশি এটি আমাদের আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতার নগ্ন চিত্রও তুলে ধরে।

▪️আমরা পরিবর্তন চাই—

আমরা নতুন, পরিবর্তিত বাংলাদেশ চাই—
যেখানে থাকবে না অন্যায়ের প্রশ্রয়, থাকবে ন্যায়ের শাসন।
আমরা পরিবর্তন চাই—
➤ শিক্ষা ব্যবস্থার,
➤ আইন-আদালতের,
➤ প্রশাসনিক কার্যক্রমের।

বাংলাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তাই এই পরিবর্তন ইসলামিক আইনের আলোকে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

▪️ এই হত্যাকাণ্ড ও রক্তপাত ঠেকাতে ইসলামি আইনের প্রয়োগ:

অন্যায় ভাবে মানুষ হত্যা ও রক্তপাত বন্ধ করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আইন-কানুন ও দণ্ডবিধি রয়েছে। কিন্তু এ কথায় কোন সন্দেহ নেই যে পৃথিবীর সকল আইন-কানুনের থেকে সবচেয়ে বেশি কার্যকর আইন হলো, ইসলামি শরিয়া আইন। যার নাম, ‌কিসাস (সমপর্যয়ের প্রতিশোধ)।‌ অর্থাৎ হত্যার বদলে হত্যা, অঙ্গ হানির বদলে অঙ্গহানি এবং আঘাতের বদলে আঘাত)।
যদিও এই বিধান বাস্তবায়নের পূর্বে নিহত ব্যক্তির পরিবারে পক্ষ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা, তাও না হলে রক্তপণ গ্রহণ এই দুটি অপশন রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى ۖ الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنثَىٰ بِالْأُنثَىٰ ۚ فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ۗ ذَٰلِكَ تَخْفِيفٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ ۗ فَمَنِ اعْتَدَىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ ‎﴿١٧٨﴾‏ وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

“হে ইমানদারগন, তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। হে বুদ্ধিমানগণ, কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।” [১৭৮ ও ১৭৯]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنفَ بِالْأَنفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ ۚ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهُ ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ‎

“আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখম সমূহের বিনিময়ে সমান জখম।
অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী শাসন বা বিচার কার্য পরিচালনা করে না সেই জালেম।” [সূরা মায়িদা: ৪৫]

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
وَمَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيلٌ فَهْوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ إِمَّا يُودَى وَإِمَّا يُقَادُ
“আর যার কাউকে হত্যা করা হয় সে দু প্রকার দণ্ডের যে কোন একটি প্রয়োগের ইখতিয়ার লাভ করবে। হয়ত রক্তপণ গ্রহণ করা হবে নতুবা কিসাস নেওয়া হবে।”
[সহিহ বুখারি, অধ্যায় রক্তপন, পরিচ্ছেদ: ২৮৭৩. কাউকে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীগণ দু’রকমের শাস্তির যে কোন একটি প্রয়োগের ইখতিয়ার লাভ করে]

আমাদের বাংলাদেশ মহান আল্লাহর এই অলঙ্ঘনীয় বিধান বাস্তবায়ন থেকে দূরে থাকার কারণে দেশে নুনের থেকে খুনের দাম কম!

যাহোক উক্ত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট সকলের ব্যপারে ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। তা যেন ‌ মানব রূপী হিংস্র হায়েনাদের হিংস্রতা এবং রক্তপিপাসু জানোয়ারদের জিঘাংসাকে থামিয়ে দিতে পারে।

তৎসঙ্গে ইসলাম এবং প্রচলিত শিক্ষার সমন্বয়ে এমন সিলেবাস তৈরি করতে হবে যা প্রাথমিক স্তর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ধর্মভীরু, সভ্য, মানবিক নৈতিকতা সম্পন্ন সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে উঠে শিক্ষা-সংস্কৃতি বিজ্ঞান চর্চা এবং সভ্যতা চর্চার কেন্দ্র ভূমি।
তৎসঙ্গে ইসলামি অনুশাসনের আলোকেই ঢেলে সাজাতে হবে আইন-আদালত এবং প্রশাসনকে।

লেখক :
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button