বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, রাণীশংকৈল উপজেলা শাখায় অনিয়মের পাহাড়
সরিফ উদ্দীন আহাম্মদঃ রাণীশংকেল শিক্ষক সমিতির সুনাম জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্থানে ছিল। গত ২০২০ সালে গঠিত শিক্ষক সমিতির মেয়াদ মোটামুটি তিন বছর আগেই শেষ হয়। কার্যক্রম অত্যন্ত মন্থর। অনিয়মের পরিপূর্ণ । দীর্ঘ পাঁচ বছরে কোনো সমাবেশ হয়নি। হিসেব নিকাশের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। যা ইচ্ছে তাই করে। অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। কোনো কিছু জানতে চাইলে সভাপতি( মো: রুহুল আমিন) বলে সাধারণ সম্পাদক জানে, সাধারণ সম্পাদক ( মোঃ মোশাররফ হোসেন) বলে সভাপতি জানে। এভাবে কালক্ষেপণ করে। সৃষ্টি হয় জটিল সমীকরণ। নতুন কমিটি গঠনের কোনো চিন্তা বা চেষ্টা কিছুই নেই। অবশেষে সাধারণ শিক্ষকদের চাপে গত ০৬/০২/২০২৫ তারিখে একটি সমাবেশে আয়োজন করা হয়। এজেন্ডা ছিলো সমিতির আয়-ব্যয় পেশ করা এবং নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এতে জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মো: রেজাউল করিম লিটন, জেলা কমিটির আরো বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ এবং অত্র উপজেলার প্রধান শিক্ষকসহ সাধারণ শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রথম পর্বে অনেক শিক্ষক বক্তৃতা দেন। তারা সকলেই অত্র সমিতির কমিটির পরিবর্তন চায়। সাধারণ সম্পাদক মো: মোশাররফ হোসেন হিসাব পেশ করলে দেখা যায়,তার সিংহভাগ হিসাবের কোনো ভাউচার নেই,অডিট কমিটির নাম দিয়ে হিসাব পেশ করে কিন্তু কমিটির স্বাক্ষর নেই। প্রথম পৃষ্ঠায় একটি বিয়োগে ২, ৭৯, ৭৬৫/- ( দুই লক্ষ উন আশি হাজার সাতশত পঁয়ষটি ) টাকা আত্মসাৎ করে। বাকী হিসাবেও অনেক গরমিল খুঁজে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় পর্বে নতুন কমিটি গঠনের কথা উঠলে, শিক্ষকগণ আগের কমিটি বিলুপ্ত করে ভোটের তারিখ ঘোষণার চাপ দেয়। জেলা কমিটি আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। পরক্ষণেই জেলা কমিটি, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করার জন্য একটি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে। এতে সাধারণ শিক্ষকগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। কারণ এর আগে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলো। এর ব্যতয় সাধারণ শিক্ষকগণ মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু জেলা সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম লিটন একটি অনুরোধ করেন। তা হলো-একটু চেষ্টা করি, আপনাদের মনোপুত না হলে তখন ডেট দিয়ে যাবো।’ এ বিশ্বাসে ০৩ জন সভাপতি ও ০৮ জন সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রার্থী হন। ইচ্ছে মতো ০৯ জন প্রধান শিক্ষক নিয়ে ০৫ মিনিট পর বলেন যে, একটি ভালো ফলাফল এসে গেছে। এতে শিক্ষকদের মনে সংশয় জাগে । সকলের ধারণা একটি জটিল বিষয় কিভাবে ০৫ মিনিটে সমাধান হয় ? সংশয়ের জায়গা থেকে প্রার্থীগণ প্রতিবাদ করে বলেন যে, যদি পুরাতন কমিটির নাম আসে তাহলে ঘোষনা দিবেন না। আমরা কেউ মেনে নিবো না। ভোটই একমাত্র সমাধান। এর ফাঁকে জেলা কমিটি পুরাতন কমিটিকে ঘোষণা দিয়েই উধাও হয়ে যায়। শুরু হয় জটিল সমস্যা। জেলা সভাপতি ০৬/০২/২০২৫ তারিখে অনুপস্থিত ছিলেন। তাই পরদিন ০৭/০২/২০২৫ তারিখে তার বরাবর নির্বাচনের পক্ষে আবেদন করা হয়। উনি নির্বাচনের পক্ষে জনমত জরিপের শক্ত প্রমাণ দাবী করেন। সমিতির মোট ভোটার ৪০৩ (চারশত তিন ) জন। এর মধ্যে ২৬৮ জন ভোটের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এই প্রমাণসহ জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম লিটন এর কাছেও আবেদন করা হয়। উনি আশ্বত্ব করেন যে, পরবর্তী মিটিং এ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গত ২৬/০৩/২০২৫ তারিখে রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ব্যাপারে মিটিং হয়। মাত্র কয়েকজন প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তিনি পুনরায় সে কমিটির কথা পুনরাবৃত্তি করেন। এতে প্রার্থীগণ ফুসে উঠে। সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিটিং সমাপ্ত হয়। জানা যায়, জনাব মোশাররফ হোসেন গুটি কয়েক প্রধান শিক্ষক ও কিছু সাধারণ শিক্ষক হাতে রেখে বলয় তৈরি করে নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। প্রশ্নপত্র প্রনয়ণকারীকে সম্মানী না দিয়েই ভাউচার তৈরি করে। পক্ষের শিক্ষক বাদে বাকী শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করে। মিটিং এর নামে অযথা ভাউচার বানায়। যার কারণে শিক্ষকগণ তার নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছেন না। সাধারণ শিক্ষকগণ ভবিষ্যতে যেন বড় পদে আসতে না পারেন তার একটি চক্রান্ত চলছে। গত ১৭/০৪/২০২৫ তারিখে গ্রামার বই ও ব্যকরণ বই সিলেকশনের জন্য মোশাররফ হোসেন প্রধান শিক্ষকদের আহবান করে। এতে মাত্র ০৮ জন প্রধান শিক্ষক অংশ গ্রহণ করেন। অন্যরা তার ডাকে সাড়া না দিয়ে অন্যত্র মিটিং করেন। অন্যদের যুক্তি, যে সাধারণ সম্পাদকরে নিয়ে এত তর্কবিতর্ক তার সাড়ায় আমরা অংশ গ্রহণ করতে পারি না। তাছাড়া এখন কোনো কমিটি নেই। যা করা হবে, তাই অবৈধ হবে। অবৈধকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। সকলের দাবী দূর্নীতিবাজকে বয়কট করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করা হোক। শিক্ষক সমিতির উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের নায্য চাওয়া পাওয়ার পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত আসুক এ কামনা সকলের।