সংগঠন

ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ উপদেষ্টা মণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য শাহ্ মুহাম্মদ আবু জাফর

আরিফুজ্জামান হেলাল: নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ এর সিনিয়র উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন
প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, ফরিদপুর-১ আসনের চার বারের সাবেক এমপি শাহ্ মুহাম্মদ আবু জাফর।

শাহ্ মুহাম্মদ আবু জাফর নতুন দলে জয়েন করে অপেক্ষাকৃত ভাল করেছেন। যেটাকে বলা যায় মন্দের ভাল। উনার আগের দল কিংস পার্টি খ্যাত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) দেশবাসীর নিকট বড়ই বিতর্কিত ছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে
বিএনএম ব্যানারে শাহ্ মুহাম্মদ আবু জাফর কোন সভাসমাবেশ করতে পারছিলেন না। বিএনএম এর সঙ্গে কেউ জোট করতে রাজি নয়। নতুন দল জনতা পার্টি বাংলাদেশ যেকোন বড় দলের সঙ্গে জোট করতে পারবে।

শাহ্ মুহাম্মদ আবু জাফর এর পরিচয়

শাহ্ মুহাম্মদ আবু জাফর (১৯৪৫)
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সাহসী যোদ্ধা ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বিএলএফ এর ফিল্ড কমান্ডার এবং ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালি-আলফাডাঙ্গা) আসন থেকে চার বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য শাহ মোঃ আবু জাফর বর্তমান সময়ের একজন নিবেদিত প্রাণ জাতীয় রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান শ্রমিক নেতা। সবার ওপরে তিনি ফরিদপুরের সর্বস্তবেরর মানুষের বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের দুঃখ-সুখের অংশীদার, তাদের সার্বক্ষণিক একজন সাথী। ১৯৬২ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শাহ আবু জাফরের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের শুরু যা আজও সমান তালে অগ্রসরমান।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামে ১৯৪৫ সনের ২৫শে ফেব্রুয়ারী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শাহ মোঃ আবু জাফর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা এম.এ.আজিজ ও মাতা উম্মে কুলসুম নেছার সাত সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান তিনি। তার পিতা অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট সমাজ সেবক, শিক্ষানুরাগী, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পৃষ্ঠপোষক এবং এলাকার একাধিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ।

শিক্ষাজীবন: বাড়ীতে মায়ের নিকট বাল্য শিক্ষা শেষে তিনি হাসামদিয়া প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সনে বৃত্তি লাভ করে পঞ্চম শ্রেণী থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। বাহিরদিয়া মাদ্রাসায় এক বৎসর পড়ার পর দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা গওহর ডাঙ্গা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৬২ সনে মাদ্রাসা শিক্ষা ছেড়ে তিনি বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের সদস্য হন। ঐ বৎসরই পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঘোষিত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দেশব্যাপি ছাত্র আন্দোলনের সময়ে তিনি বোয়ালমারীতে উত্তাল ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৩ সনে বোয়ালমারী জর্ একাডেমীতে জেনারেল ক্যাপ্টেন নির্বাচনে ছাত্র ছাত্রীদের অকুন্ঠ সমর্থনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে একাডেমীর জেনারেল ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হন।

ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান: ১৯৬৪ সনে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান ও কেন্দ্রীয় ফরিদপুরের আবদাল জহিরউদ্দিন লাল মিয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। লালমিয়ার বোয়ালমারী সফরকালে শাহ আবু জাফরের নেতৃত্বে লালমিয়ার বিরুদ্ধে হাজার হাজার ছাত্র জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। জনতা উত্তাল বিক্ষোভের এক পর্যায়ে জুতা নিক্ষেপ করলে পুলিশ ব্যাপকভাবে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার উপর লাঠি চার্জ করলে শাহ জাফরসহ শতাধিক ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী আহত হন। অনেক প্রতিকুল অবস্থার ভিতর দিয়ে ১৯৬৮ সনে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমী হতে এস.এস.সি দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বৎসরই তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সনে ৬ দফা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৯ এবং ১৯৭০ সনে তিনি দুই দুইবার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৭২ সন পর্যন্ত এই দায়িত্বপালন করেন। ১৯৬৯ সনে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৭০ সনে রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে শাহ জাফর ভিপি নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সনে জাতীয় নির্বাচনে শাহ জাফরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মী বাহিনী নিরলস ও সাহসী প্রচার অভিযান পরিচালনা করে যা ফরিদপুর জেলায় আওয়ামী লীগের অভাবনীয় বিজয়ে জোরালো ভুমিকা রাখে। এই নির্বাচনী প্রচারকার্যক্রম তাকে গণমানুষের খুব কাছে নিয়ে যায় এবং আগামী দিনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভিত্তি তৈরী করে। ১৯৭০ সনের নির্বাচনের পর তৎকালীন ছাত্রনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রাজ্জাক বাংলার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা শাহ জাফরকে জানান এবং ফরিদপুর জেলা থেকে তাকে সংযুক্ত করার অভিপ্রায় গঠিত নিউক্লিয়াসের সদস্য করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান: ১৯৭১ সনের ১০ই মার্চ ফরিদপুর জেলা বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা হিসেবে শাহ মোঃ আবু জাফর ফরিদপুরের ঐতিহাসিক ময়দানে হাজার হাজার ছাত্র জনতার সভায় পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি ঐ সভায় প্রকাশ্যে সিভিল গান দিয়ে সাতবার ফাকা গুলি করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেন।
১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান এবং দেরাদুন সামরিক একাডেমীতে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস-বিএলএফ (মুজিব বাহিনী) এর সদস্য হিসেবে গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণের সময়ই তিনি বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধোদের কমান্ডার নির্বাচিত হন। তিনি গেরিলা যুদ্ধের কলা কৌশল, বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। উপরন্তু, জেলার কমান্ডার হিসেবে তিনি ওয়ারলেস পরিচালনারও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭১ সনের আগষ্ট মাসের প্রথম ভাগেই তিনি জীবনের ঝুকি নিয়ে ৫৪ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস এর এক গেরিলা যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে শত্রুর মোকাবেলা করতে করতে ফরিদপুরে এসে অবস্থান নেন। তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার ডেপুটি লীডার এবং ফিল্ড কমান্ডারের দায়ীত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শাহ জাফরের নেতৃত্বে বিএলএফ এর মুক্তিযোদ্ধারা সমগ্র ফরিদপুর জেলার সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছে।

বিএলএফ এর ফিল্ড কমান্ডার হিসেবে শাহ মোঃ আবু জাফর ১৯৭১ সনের ১৭ই ডিসেম্বর সকাল ১০টায় মুক্ত ফরিদপুরের মাটিতে সার্কিট হাউসের সামনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৭২ সনের ১২ই ফেব্রুয়ারী সমগ্র দেশ থেকে ঢাকা ষ্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র সমর্পণের জন্য বিএলএফ এর সকল যোদ্ধারা সমবেত হয়। তৎকালিন ১৯টি জেলার প্রত্যেক জেলার একজন করে কমান্ডার জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করবেন বলে স্থির হয়। সে নিয়মেই বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ হতে শেখ মুজিবের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করেন বিএলএফ এর ফরিদপুর জেলার ফিল্ড কমান্ডার শাহ মোঃ আবু জাফর।

১৯৭২ সনে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা দিয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৭৩ সনে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক পরবর্তীতে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

বৈবাহিক জীবন: ব্যক্তি জীবনে শাহ মোঃ আবু জাফর দুই সন্তানের জনক। তার সংগ্রামী জীবনের সার্বক্ষণিক সঙ্গি স্ত্রী মর্জিনা বেগম মহিলা অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে চাকুরী জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। ছেলে শাহ খুররম রাহুল কুমার ও মেয়ে নিশি জাফরীন দুজনই উচ্চ শিক্ষার জন্য অষ্ট্রেলিয়ায় অধ্যায়নরত।

রাজনৈতিক জীবন: শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য শেখ মুজিবের নির্দেশে ১৯৭৪ সনে শাহ আবু জাফর জাতীয় শ্রমিক লীগে যোগ দেন এবং উক্ত সংগঠনের সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকেই তিনি জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি শ্রমিক আন্দোলনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা শুরু করেন। ১৯৮০ সনে তিনি জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সনে জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৭ সন পর্যন্ত এই পদের দায়ীত্বে ছিলেন। ১৯৮২ সালে দেশব্যাপি সামরিক আইন জারী হলে তিনি সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও শ্রমিক রক্ষার তাগিদ নিয়ে অন্যান্য জাতীয় শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতীয় শ্রমিক সংগঠন সমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেন যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) গঠিত হয়। স্কপের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ও তেজোদীপ্ত শ্রমিক আন্দোলন গড়ে ওঠে যার এক পর্যায়ে সরকার ১৯৮৪ সনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সংগে চুক্তি করতে বাধ্য হয়। এই ঐতিহাসিক চুক্তির শাহ জাফর একজন অন্যতম সংগঠক ও নিয়ামক। এ সময় তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েন এবং ১৯৮২ সনে ও ১৯৮৪ সনে তিনি গ্রেফতার হয়ে জেলে যান।

সংসদ সদস্য হিসেবে: ১৯৭৫ সনে শেখ মুজিবের হত্যার পর শাহ জাফর শেখ মুজিব হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে বিশাল প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। ১৯৭৯ সনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সনে গণআন্দোলন চলাকালীন সময়ে তিনি আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্বকারী জোট পনের দলের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) এর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে নির্বাচন করেন এবং দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিজয়ের পরে তৎকালীন সামরিক সরকারের অনেক প্রলোভন, ভীতি ও চাপ অগ্রাহ্য করে সরকার আনীত বহুল আলোচিত সপ্তম সংশোধনী বিলে তিনি ভোট প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও জাতীয় সংসদের উক্ত অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকেন।

জাতীয় পার্টিতে আবুজাফর: ১৯৮৭ সালে তিনি বাকশালের একাংশের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু পরবর্তিতে বাকশালের উক্ত অংশ অবলুপ্ত করে জাতীয় পার্টির সঙ্গে একিভূত হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি জাতীয় পার্টির সাথে সম্পৃক্ত হন।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান: ১৯৮৮ সনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় ১৯৯০ এর প্রথম ভাগ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়কালে ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়। তিনি ১৯৯১ সন হতে ২০০৩ সন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সন থেকে ২০০১ সন পর্যন্ত তিনি জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

নতুন দল গঠন: ২০০১ সনে জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতির পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন এবং একটি দল নিরপেক্ষ শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়াস হিসেবে বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন গঠন করেন ও উক্ত সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। অদ্যাবধি এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের সংগে যুক্ত থেকে শ্রমিক কর্মচারী মেহনতী মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন।

অন্যান্য দায়িত্ব: সুষ্ঠ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র শ্রমসংক্রান্ত্র গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্‌স প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বিল্‌স এর আজীবন সদস্য এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ১৯৯৬ সন থেকে অদ্যাবধি সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
তিনি ১৯৯৭ সন হতে ২০০১ সন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের সার্ক ট্রেড ইউনিয়ন কমিটি (সারতুক) এর সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং ১৯৮৮ সন থেকে ১৯৯০ সন পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা রেড ক্রিসেন্টের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘুর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সেবায় সক্রিয়ভাবে গরীব দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৮৮ সন থেকে ফরিদপুর রাইফেলস্‌ ক্লাব এবং টাউন থিয়েটারের আজীবন সদস্য।

তিনি ২০০১ হতে ২০০৬ সন পর্যন্ত আলফাডাঙ্গা ডিগ্রিী কলেজ, আলফাডাঙ্গা আদর্শ ডিগ্রী কলেজ এবং কাদিরদী ডিগ্রী কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ফরিদপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্য থাকাকালীন তিনি শিল্প, শ্রম ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সমাজ সেবক হিসেবে শাহ আবুজাফর: রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই সরকারের দায়িত্ব পালন বা বিরোধী দলে অবস্থান, সবসময়ই শাহ আবু জাফর তার নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ, রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট, প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ২০০৩ সনে তার নিজ গ্রাম হাসামদিয়ায় একটি আকর্ষণীয় শিক্ষা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই কমপ্লেক্সে ফরিদপুর জেলায় একমাত্র প্রাইভেট টেকনিক্যাল কলেজ, কৃষি কলেজ, মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট, ভকেশনাল ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছেন। এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে উক্ত অঞ্চলের শত শত গ্রামীণ যুব ছেলে-মেয়ে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন মূলক শিক্ষা গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তিনি হাসামদিয়া গ্রামে আব্দুল আজিজ আলীয়া মাদ্রাসা, ময়না গ্রামে শাহ মোঃ আবু জাফর মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং ডহরনগর গ্রামে শাহ জাফর দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি আলফাডাংগা ডিগ্রি কলেজের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও শাহ মোঃ আবু জাফর বিভিন্ন সময়ে সংসদ সদস্য ও ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার উদ্যোগে মধুখালীর আইনুদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, বোয়ালমারী ডিগ্রি কলেজ, বোয়ালমারী গার্লস হাইস্কুল এবং কামারখালী গার্লস্‌ হাইস্কুল সরকারীকরণ করা হয়।

বর্তমান অবস্থান:তিনি ২০০৩ সনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমন্ত্রনে এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা বোয়ালমারী স্টেডিয়াম ময়দানে বিশাল এক জনসমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সর্বশেষ ২০০৫ সনে অষ্টম জাতীয় সংসদের উপ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে শাহ আবু জাফরের মনোয়ন নিয়ে লড়াই ও বিজয় একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল। রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন লাভ ও নির্বাচনে ব্যবসায়ী ও টাকার প্রাধান্যের প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে শাহ আবু জাফরের দৃঢ় অবস্থান ও ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের তার প্রতি জোরালো সমর্থন জাতীয় প্রচার মাধ্যম, সুশীল সমাজ ও সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে ব্যপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। এই নির্বাচনে তার বিজয় ছিল রাজনীতিকে ব্যবসায়ী নির্ভর করার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতীকি বিজয়। তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সততার আর এক বিজয় অর্জন হয়েছিল বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭- ০৮)। ঐ সরকার তাকে দূর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করলেও তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ থেকে তিনি নির্দোষ প্রমানিত হন এবং সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

তিনি বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের আমন্ত্রণে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বার্মা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, গণচীন, সউদি আরব ইরাক, লিবিয়া, সাউথ আফ্রিকা, অষ্ট্রিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, হাঙ্গেরী, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড, সাইপ্রাস, বুলগেরিয়া, পূর্ব জার্মানী, পশ্চিম জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, কানাডা, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন এবং বহু আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন এবং দেশের জন্য ও বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button