দেশরাজনীতি

শাহবাগে ছাত্র-জনতার অবস্থান: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, শনিবার গণজমায়েতের ডাক

ঢাকা, ১০ মে ২০২৫ঃ ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের অভ্যুত্থান-পরবর্তী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতভর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অবস্থানের পর শুক্রবার শাহবাগ মোড়ে হাজারো মানুষ জমায়েত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নেতৃত্বে মিছিল, সমাবেশ ও অবরোধের মাধ্যমে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় শাহবাগ দখল নেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন। তারা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা এখান থেকে সরবে না।

তিন দফা দাবি

জুলাই অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ শুক্রবার রাত ১১টায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন—

১. আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দলগত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

তিনি আরও ঘোষণা দেন—শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় ঢাকাসহ সারা দেশে গণজমায়েত কর্মসূচি পালিত হবে।

শাহবাগ অবরোধ অব্যাহত, যান চলাচলে বিঘ্ন

শাহবাগ মোড়ে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে একের পর এক বক্তব্য দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিস, ইনকিলাব মঞ্চ, ইসলামী যুব মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ প্রায় সব দল অংশগ্রহণ করে। শুধু বিএনপি ও জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন,

“এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, এটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা থেকে ঢাকামুখী মিছিল আসবে।”

দেশজুড়ে বিক্ষোভ

ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, গাজীপুর, রংপুর, বরিশাল, ও সাভারসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে তিন দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বিশেষভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এতে অংশ নেয়।

বিএনপির অবস্থান এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়া

বিএনপি তাদের পূর্বঘোষিত অবস্থান পুনরায় জানিয়ে বলেছে,

“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি জনগণের সিদ্ধান্তে নির্ভর করবে, নির্বাহী আদেশে নয়।”

আইন বিশেষজ্ঞ আসিফ নজরুল জানান, সরকার চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে দলগত বিচারের পথ খুলে দিতে পারে।

পরবর্তী পরিকল্পনা

হাসনাত আবদুল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন,

“যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, ততক্ষণ শাহবাগ ছাড়ছি না। বরং ব্লকেড আরও প্রসারিত হবে।”

এই অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সাধারণ জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছালেও আন্দোলনকারীরা বলছে—”দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার লড়াইতে সাময়িক কষ্ট মেনে নেওয়া উচিত।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button