সাভারে নৃশংস পিতৃহত্যা: পাষণ্ড মেয়ের ফিল্মি কায়দায় খুন, দায় চাপাতে ধর্ষণের নাটক

সাভার, ১০ মে ২০২৫ঃ সাভারে একটি ভাড়াবাড়িতে পাষণ্ড মেয়ের হাতে কুপিয়ে নিহত হয়েছেন আব্দুস সাত্তার (৫৬)। হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতে মেয়েটি বাবার বিরুদ্ধে সাজানো ধর্ষণের অভিযোগ তোলে। তদন্তে উঠে এসেছে এক বিভীষিকাময় ও পারিবারিক ট্র্যাজেডি।
উশৃংখল জীবনযাপন, মাদক ও অনৈতিক সম্পর্ক
প্রতিবেশী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে উশৃংখল জীবনযাপন করছিল। একসময় তার বাসায় দুজন বান্ধবীকে সাবলেট রাখে। আব্দুস সাত্তার প্রথমে কিছু না বললেও পরবর্তীতে তারা একসাথে মাদক গ্রহণ, উগ্র আচরণ এবং আপত্তিকর সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে।
পিতা আব্দুস সাত্তার কষ্ট স্বীকার করে নিজে ডাইনিং রুমে থেকে মেয়ের সম্মান রক্ষায় নীরবে সহ্য করছিলেন। কিন্তু একরাতে মেয়েসহ তিনজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তিনি বিষয়টি নিয়ে মেয়েকে সতর্ক করেন এবং বান্ধবীদের বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যায়।
হত্যার পরিকল্পনা ও নাটকীয় বাস্তবায়ন
পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটি বুঝতে পারে তার পিতা তাদের কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। সে পরিকল্পিতভাবে ভাতের সাথে ২০টি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাইয়ে দেয় বাবাকে। গভীর রাতে, ভোর ৪টার দিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
এরপর সে তার পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশে এগিয়ে যায়—ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তোলে পিতার বিরুদ্ধে। এমনকি ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে বলে:
“আপনারাই আমাকে সাপোর্ট করুন, আমি জামিনে বের হয়ে আবার আমার জীবন শুরু করতে চাই।”
সাজানো নাটক ভেঙে দেয় তদন্ত
সাভার থানার ডিউটি অফিসার জানান, ফরেনসিক প্রতিবেদন ও প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে—ধর্ষণের কোন আলামত নেই এবং হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। জানা গেছে, ২০২৩ সালেও মেয়েটি বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি মিথ্যা মামলা করেছিল, যা প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যায়।
বাবার স্বপ্ন ও নির্মম বাস্তবতা
আব্দুস সাত্তার মেয়েকে মানুষ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করতেন। নিজের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে মেয়েকে আদর, সম্মান এবং স্বাধীনতা দিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি। নিজ মেয়ের হাতে প্রাণ হারালেন তিনি।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন,
“পারিবারিক মূল্যবোধ ও সমাজে নৈতিক অবক্ষয় যে কতটা গভীর হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড তার এক ভয়াবহ উদাহরণ।”