জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকম্প: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর আভাস

ডেস্ক রিপোর্ট: ২০২৪ সালের ১ জুলাই—যেদিন ঢাকা শহরের রাজপথে নেমে আসে অগ্নিগর্ভ জনস্রোত, সেই দিন থেকে ইতিহাসের ক্যালেন্ডারে এক ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হয়। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন দ্রুতই রূপ নেয় স্বৈরাচারবিরোধী গণবিস্ফোরণে। রাষ্ট্রশক্তির বুলেট, টিয়ারশেল ও নিপীড়নের উত্তরে আন্দোলনকারীরা ফিরিয়ে দেয় আগুন, রক্ত ও দৃঢ়তা। এক মাসের রণক্ষেত্রের শেষে, ৫ আগস্টের সেই বিভীষিকাময় দিনে প্রায় ১,৫০০ প্রাণ ঝরে পড়ে রাজপথে—আর তার আঁচে জ্বলে ছারখার হয়ে যায় শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের মসনদ। পালিয়ে যান স্বঘোষিত ‘মাতৃত্বের প্রতীক’, আত্মগোপনে ভারতের সীমান্তে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে রুদ্ধশ্বাস ভাষণে ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের, আর প্রতিশ্রুতি দেন হত্যার বিচার ও স্বাধীনতার পুনর্জন্ম।
তিন দিন পর, স্বৈরশাসনের ছাইচাপা থেকে উঠে আসে নতুন আশার আলো। নোবেল বিজয়ী, ৮৪ বছর বয়সী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় একটি গণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারই পটভূমি রচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আজ শুধুই একটি রাজনৈতিক পর্ব নয়—এটি জাতির রক্তাক্ত স্মৃতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সাহস, আত্মত্যাগ ও গণজাগরণের প্রতীক। সে এক মাস ছিল যেন কালো অন্ধকারে তর্জনী উঁচিয়ে বলা, “আর নয়! এবার জনগণই ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক!”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের চাঞ্চল্যকর ঘোষণা। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গত ৯ মে ২০২৫, এক ফেসবুক পোস্টে তিন দফা দাবি তুলে ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে দাবি করেন:
১. আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে।
৩. জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।
এই পোস্ট মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তরুণ সমাজ ও বিভিন্ন আন্দোলনকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। নাহিদ ইসলামের দাবি অনুযায়ী, “আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দলে সীমাবদ্ধ নেই, বরং দীর্ঘদিন ধরে তারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাস, গুম, হত্যা এবং দমন-পীড়ন চালিয়ে এসেছে। এটি দলগত অপরাধে পরিণত হয়েছে।”
“জুলাই ঘোষণাপত্র” বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানালেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এটি হতে পারে নতুন একটি নাগরিক আন্দোলনের রূপরেখা বা একটি বিকল্প রাজনৈতিক মানচিত্র।
🔍 রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সরকারপন্থী বিশ্লেষকরা এই দাবিকে ‘অরাজনৈতিক উস্কানি’ বলে উড়িয়ে দিলেও বিরোধী পক্ষ ও সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই এটিকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করছেন।
একজন ছাত্রনেতা বলেন, “এই ধরনের সাহসী উচ্চারণ আমাদের আন্দোলনে নতুন গতি আনবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এখন সময় এসেছে তাদের বিচার চাওয়ার।”
📌 বিশেষ বিশ্লেষণ
এই পোস্ট এমন সময় এলো যখন সারা দেশে ছাত্র-জনতার সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, এবং ‘তৃতীয় শক্তি’র আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নাহিদ ইসলামের এই ঘোষণাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এটি হতে পারে একটি বৃহত্তর রূপান্তরের সূচনা।