আন্তর্জাতিকএক্সক্লুসিভ

“সুব্রত বাইন: ছদ্মবেশে খুনি, রাষ্ট্রের ছায়ায় পালিত সন্ত্রাসী”

📍ডেস্ক রপোর্ট | লিখেছেন: জুলকারনাইন সায়েরঃ ❝বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জন্ম নেয়া এক খুনি কিভাবে হয়ে উঠলো দক্ষিণ এশিয়ার ছায়াযুদ্ধের পুতুল, জানুন তার ছায়ার চেয়েও অন্ধকার জীবনের কাহিনি❞


🔴 অতীতের ছায়া, বর্তমানের দুঃস্বপ্ন

২০০১ সালের অগাস্ট মাস। তখন দেশে নির্বাচনপূর্ব উত্তেজনা। সেই মুহূর্তেই বাংলাদেশ সরকার এক বিশেষ পাসপোর্ট ইস্যু করে “মোহাম্মদ আলী” নামের এক ব্যক্তির নামে। আর এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে যাতায়াত শুরু করেন কুখ্যাত খুনি সুব্রত বাইন — তখনই যার মাথার দাম ছিল এক লক্ষ টাকা।

কিন্তু কাহিনি শুরু সেখানেই নয়, বরং শুরু হয় তারপরে।


🕵️‍♂️ সন্ত্রাসী থেকে গোয়েন্দা-সদস্য: ‘র ও এমআই-এর ছায়ায় বেড়ে ওঠা

কলকাতায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর শুরু হয় সুব্রতের নতুন জীবন। তখন তার মুক্তির পেছনে কাজ করে আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী তানভিরুল ইসলাম জয় — যার দার্জিলিংয়ে পড়াশোনার সূত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা মহলে ছিল সুগভীর যোগাযোগ। এই যোগাযোগেই কলকাতা পুলিশের কমিশনার ও ‘র (RAW) এবং সেনা গোয়েন্দা এমআই-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটে সুব্রতের।

এরপর মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে কমান্ডো প্রশিক্ষণ; দিল্লিতে RAW-এর হেডকোয়ার্টারে বোমারু তালিম; মিশনে পরিণত হওয়া শুরু।


🎯 টার্গেটেড কিলিং: বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার “কনট্রাক্ট কিলার”

সুব্রতের মিশন ছিল বাংলাদেশে ভারতের “শত্রু সংগঠনগুলোর” নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।

  • মোহাম্মদপুরে হামলা চালিয়ে হত্যা করে বম সম্প্রদায়ের এক নেতার স্ত্রী ও সন্তানকে।
  • পাকিস্তানঘেঁষা এমকিউএম-এর সঙ্গে যুক্ত মোস্তাকিম কাবাব মালিককে গুলি করে হত্যা।
  • বারবার চেষ্টা করে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার হত্যার।

তার প্রতিটি আগমন হতো পাসপোর্টবিহীন বা বিশেষ পাসপোর্টে। এবং টার্গেট পূরণের পর সীমান্ত পেরিয়ে নিরাপদে ভারতে ফেরত যাওয়া ছিল তার নিয়মিত রুটিন।


💼 দূতাবাস, পাসপোর্ট, কানাডা প্রলোভন — RAB ও ‘র এর চক্রান্ত

২০২৩ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থবিরতা ও সরকারের নির্ভরতাপূর্ণ নিরাপত্তা কাঠামোতে সুব্রতের ফের আগমন। এবার তাকে আনা হয় লন্ডনে থাকা বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যার টার্গেটে।

  • দেওয়া হয় পাকিস্তানি পাসপোর্ট,
  • প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় RAB সদর দপ্তরের ভেতরে,
  • দেয়া হয় কানাডায় স্থায়ী বসবাসের প্রলোভন।

এই পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জিয়াউল আহসান, মনিরুল ইসলাম এবং ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা।


🚨 ৫ আগস্ট বিপ্লব ও ফাঁস হয়ে যাওয়া ছায়া-অপারেশন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতনের পর এই চক্রান্ত হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। সুব্রত বাইনকে গোপনে তার কন্যা বিথির জিম্মায় দিয়ে আরেকবার আড়ালে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

কিন্তু সন্ত্রাসী কখনো ঘুমিয়ে পড়ে না।
RAW-এর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ, স্যাটেলাইট ফোনে নির্দেশনা, সীমান্তে নতুন তৎপরতা শুরু হয়। মোল্লা মাসুদ আসে বাংলাদেশে, লেদার লিটন হয়ে ওঠে আওয়ামী পালাতক নেতাদের সাথে নতুন যোগাযোগের সেতু।


🧾 পাসপোর্ট, সীল ও মৃত্যু-রেখা

২০০১ থেকে ২০০৪ — মোহাম্মদ আলীর নামে ইস্যুকৃত বিশেষ পাসপোর্টে ৯টি ভিসা ও ৩২বার যাতায়াতের রেকর্ড পাওয়া গেছে।
প্রতিবার যাত্রার পেছনে ছিলো একেকটি গুপ্তহত্যা।
এবং প্রতিবার হত্যার শিকার হতেন কেউ না কেউ — যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টিতে ছিলো শত্রু।


বাংলাদেশ কি আবার ছায়া যুদ্ধের ময়দান হতে চলেছে?

সুব্রত বাইন একজন খুনী — সন্দেহ নেই।
কিন্তু সেই খুনিকে কাদের ছায়ায় পুষে রাখা হলো? কাদের নির্দেশে তিনি বিদেশের মাটিতে হত্যার মিশনে অংশ নিতে চাইলেন? এবং আজও কাদের সাথে তার যোগাযোগ?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও অন্ধকারে।
কিন্তু জবাব দরকার।
কারণ এইসব ছায়া-যোদ্ধার পেছনে লুকিয়ে থাকে এক রাষ্ট্রের নৈতিক পতন, আরেক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক আগ্রাসন।

সংযুক্তিঃ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button