রাজনীতি

জুলাই সনদ নিয়ে সর্বদলীয় ঐক্যমতের সম্ভাবনা ক্ষীণ: পলিটিকাল থিয়েটারের নতুন ধাপ শুরু

ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসন্ন “জুলাই সনদ”, “জুলাই ঘোষণা” এবং “জুলাই চার্টার” নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্লেষণ, আশঙ্কা ও ভবিষ্যদ্বাণী শুরু হয়ে গেছে। এ নিয়ে বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক শাফকাত রাব্বী অনিক তার এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস তুলে ধরেছেন—যা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

১. ‘রেভুলুশনারী’ চরিত্র হলে ঐক্যমতের সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি

রাব্বীর মতে, যদি জুলাই সনদ রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সংবিধান ও শাসনব্যবস্থার মৌলিক চরিত্রে হাত দেয়, তাহলে সেটি “রেভুলুশনারী ঘরনার” দলিল হয়ে উঠবে। ফলে দলীয় স্বার্থে ভিন্ন অবস্থান তৈরি হবে এবং সর্বদলীয় ঐক্য দূরূহ হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে গিয়ে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষ নিতে চায় না—এই বাস্তবতাই সনদের ঐকমত্য গঠনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

২. এনসিপি’র দলীয় রূপ—সনদের গ্রহণযোগ্যতায় প্রশ্ন

জুলাই সনদ প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এনসিপি (ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন ফর পিপলস ডেমোক্রেসি) এখন আর কেবল ছাত্রদের আন্দোলন বা সাধারণ চাপ সৃষ্টিকারী প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দল। এর ফলে সরকার কিংবা অন্য কোনো কমিশন যতই যুক্ত থাকুক, এনসিপি কর্তৃক ঘোষিত যে কোনো সনদ সহজেই একটি রাজনৈতিক দলের “ঘোষণাপত্র” বা “আইডিওলজিক্যাল ডকুমেন্ট” হিসেবে দেখা হবে—যেমনটি অতীতে বিএনপির ৩২ দফার ক্ষেত্রে হয়েছে।

৩. ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের স্থপতি’ তকমা পাওয়ার লড়াই

জুলাই সনদ সফল হলে কিছু রাজনৈতিক নেতা ও গোষ্ঠী নিজেদের “দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ফাউন্ডিং ফাদার” হিসেবে দাবি করে বসতে পারেন—এমন সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন অনিক। ফলে আওয়ামী বিরোধী অনেক ট্র্যাডিশনাল রাজনৈতিক দল হয়তো এই ক্ষমতা ভাগাভাগির খেলায় নিজেরা বাদ পড়ার আশঙ্কা করে সনদে সই না করার কৌশল নিতে পারে।

৪. নির্বাচন পেছানোর অভিযোগেও ব্যবহার হতে পারে সনদ

সনদ স্বাক্ষরের পর সরকার কিংবা এনসিপি যদি এর বাস্তবায়নের জন্য “অতিরিক্ত সময়” দাবি করে, তাহলে তা নির্বাচন পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই অনেক রাজনৈতিক দল সনদের প্রতি সন্দিহান থাকবে। বিশেষ করে যখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে, তখন এ ধরনের নতুন দস্তাবেজকে “পলিটিকাল গেইম” বলেও অভিহিত করা হতে পারে।

৫. একাধিক দলীয় ঘোষণা আসতে পারে ব্যর্থতার পর

যদি জুলাই সনদে সর্বদলীয় স্বাক্ষর না হয়, তাহলে পরিস্থিতি এমন হতে পারে—বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের আলাদা “জুলাই ঘোষণা” মেনিফেস্টোর অংশ হিসেবে উপস্থাপন করবে। এতে জাতীয় ঐক্যরেখা ভেঙে খণ্ডিত রাজনীতির চেহারা আবারো ফিরে আসবে।

৬. মে ২০২৫: আবার ‘প্লে’ বাটন চাপল ট্র্যাডিশনাল রাজনীতিতে

শাফকাত অনিকের মতে, “অগাস্ট ২০২৪-এ শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল রাজনীতিতে ‘পজ’ বাটন চাপা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের মে মাসে সেই রাজনীতিতেই আবার ‘প্লে’ বাটন চাপা পড়েছে।” ফলে জুলাই সনদের মতো রাষ্ট্রপুনর্গঠনের প্রস্তাবগুলো পুরনো রাজনীতির বাধায় পড়ে যেতে পারে।

৭. বিকল্প চিন্তা দরকার: সবার সই না হলে কী হবে?

সব দল যদি সনদে স্বাক্ষর না করে, তাহলে কীভাবে এর রাজনৈতিক ও আইনি গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়েও এখন থেকেই চিন্তা শুরু করতে বলেছেন বিশ্লেষকরা। নতুবা “জুলাই সনদ” একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হয়েও তর্ক ও বিভাজনের বলিতে পরিণত হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button