রাজনীতি

বিতর্কিত তিন নির্বাচনের তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের

ডেস্ক রিপোর্টঃ বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা তদন্তে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ করেছে যেসব শক্তি, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা সময়ের দাবি। সেই দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।” তিনি নির্বাচন কমিশনের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও কমিশন সচিবালয়ের সাবেক সচিবদের দায়িত্ব ও ভূমিকা খতিয়ে দেখতে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে।

রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তি তৈরি হচ্ছে

বৈঠকে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, “জুলাই সনদ তৈরির অগ্রগতি সন্তোষজনক। আমরা বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস বলেন, “আমরা জানি পুরো জাতি জুলাই সনদের অপেক্ষায়। আশা করছি আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই আমরা তা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে উদ্যোগ

বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস তার সদ্যসমাপ্ত লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি জানতে চেয়েছে—আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারবে কি না। তারা পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহী এবং প্রতিশ্রুতিশীল। আমাদের এখনই পোস্টাল ব্যালটসহ বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে।”

নির্বাচন সংস্কারে জবাবদিহির দাবি

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে বলেন, “সকল রাজনৈতিক দল একমত যে, বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের পেছনে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ভূমিকা তদন্ত করা আবশ্যক। এটি একমাত্র জবাবদিহির মাধ্যমেই সম্ভব।”

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন:

  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া
  • প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া
  • প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার

পটভূমি:

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ভোট কারচুপি, একতরফা নির্বাচন, কেন্দ্র দখল ও সুষ্ঠু ভোটের অভাব—এই অভিযোগ ওঠে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের তরফে। এই প্রেক্ষাপটেই বর্তমান জাতীয় ঐকমত্য সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও জবাবদিহিমূলক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button