এক্সক্লুসিভশিক্ষা

শিক্ষার সর্বনাশ অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে

এজাজ রহমানঃ সমগ্র বাংলাদেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি সঠিক ও নিয়মিত পাঠদান করতো; তাহলে কোচিং সেন্টার লাগতো না। উক্ত বিষয়ে বিলসকে অভিনন্দন জানান- এজাজ রহমান, প্রধান সমন্বয়ক, বাংলাদেশ আদর্শ প্রজন্ম সংসদ।
সমগ্র বাংলাদেশে ২০২৪ সালে এসএসসি ও সমমানের প্রথমবারের মতো সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে সরে এসে পূর্ণ নম্বরে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নেয় সরকার। জুনে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পর শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কতিপয় শিক্ষার্থী আন্দোলন করলে বাকি পরীক্ষাগুলোতে অটোপাস দেওয়া হয়। অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের কারণে শিক্ষার সর্বনাশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদরা।

বছরের পর বছর অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের কারণে ফলাফলে উল্লম্ফন থাকলেও শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে শিখনশূন্যতা। এ শিখনশূন্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার উচ্চতর স্তরে গিয়েও হোঁচট খাচ্ছে চরমভাবে। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এদেশে অটোপাস আর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের সংস্কৃতি। অটোপাসের প্রভাবে গত বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী। এরপর দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটে (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯৪ শতাংশই ফেল করেছেন।

অথচ এদের বেশির ভাগই এইচএসসির পাশাপাশি এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটেও ৯০ শতাংশের বেশি ভর্তিচ্ছু ফেল করেছেন একই শিক্ষাবছরে। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের শিখন শূন্যতাই দেখিয়ে দিয়েছে। শুধু চলতি শিক্ষাবর্ষেই নয়, অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাস করা প্রায় সব শিক্ষাবর্ষেই ভর্তিচ্ছুদের সিংহভাগ পাস করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়।

তথ্যমতে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪ হাজার ৫০৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ পাস করেছিল। আর ২০২১-২০২২ শিক্ষাবছরের ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছিল ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের সিদ্ধান্ত এসেছিল। কিন্তু এর ধারাবাহিকতার কারণে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে।

এ সিদ্ধান্ত জাতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা তুলনামূলক কম পড়াশোনা করে ভালো ফল করছে এ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তি পরীক্ষাতেও ফেল করছে। যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের মধ্যেও উল্লেখজনক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না। করোনার পরও বেশ কয়েকবার শিক্ষায় অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস রাখা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মন্্জুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিখন শূন্যতা নিয়ে যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে তাদের ঘাটতি পূরণে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরেই শিক্ষার মানে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, এ ঘাটতি উদ্বেগজনক। যে শিখন শূন্যতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তা পূরণে সরকারকে ভাবতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button