যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শেষ কোথায়

মো: আবদুল আলীমঃ ঢাকা মহানগরির যাত্রাবাড়ি থানা এলাকায় অবস্থিত যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ। ১৯৯৮ সনে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর বেশ কয়েক বছর অত্যন্ত সুন্দরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। ছাত্র-ছাত্রী- শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক সকলে মিলে যেন একটি সুন্দর গ্রহ বলয়ে আবর্তিত হচ্ছিল।
সকলের সন্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে একটি অহংকার করার মত অবস্থায় উপনিত হয়েছিল। কিন্তু সূর্য যেভাবে উদিত হয়েছিল সেভাবে সারাদিন আলো ছড়াতে পারে নাই। এক রাক্ষসি এসে সুর্যের আলোকে ঢেকে দিয়ে অন্ধকার ছড়িয়ে দিল। সেই অন্ধকারের ঘোর যেন আর কাটছে না।
১০-১১-২০০৪ ইং স্কুলটি যখন নিন্ম মাধ্যমিক ছিল তখন মরিয়ম বেগম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ঘোর অমাবস্যা শুরু হয়ে যায়। তিনি অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে শিক্ষার্থী, টিচিং স্টাফ ও অভিভাবকদের জন্য এক আতংক ও অভিষাপে পরিণত হন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলোর তদন্ত কর্তৃপক্ষ বরাবরই দায়সারা তদন্ত করে তার দুর্নীতিকে লাইসেন্স প্রদান করে গেছে বলে একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সুষ্টু, নিরপেক্ষ ও প্রভাব মুক্ত তদন্ত হলে তার পক্ষে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকার কথা নয়। একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, যোগ্যতার মাপকাঠিতে নয়। তাছাড়া প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নিন্ম মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কোন পদ নেই। যেখানে পদই নেই সেখানে তিনি কিভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক হলেন তা তদন্ত করার যে কোন কর্তৃপক্ষই নেই। এক বছর পর ২০০৫ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে আপগ্রেড করা হয় এবং ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে এমপিও ভুক্ত হয়।
একটি এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা, এসএসসি থেকে সকল পরিক্ষায় অন্তত দ্বিতীয় শ্রেণী, এবং অনার্স সহ স্নাতোকত্তর থাকতে হবে। তবে মরিয়ম বেগমের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্কুল সূত্রে জানা গেছে বিএ তৃতীয় শ্রেণী। এভাবে তিনি প্রথমেই অযোগ্য। একজন অযোগ্য ব্যক্তি কিভাবে এতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অক্টোপাসে আটকিয়ে রাখছেন? অভিযোগ রয়েছে তার সকল অপকর্মে তাকে সহায়তা করে তার অফিস পিয়ন মোসলেম।
এই মোসলেমের মাধ্যমে স্কুল থেকে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ন ফাইল গায়েব করা হয়। পিয়ন মোসলেমকে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বরখাস্ত করা হলেও মরিয়ম বেগম তাকে বিধি লংঘন করে পুণরায় পদে বসান। দুর্নীতির কারণে মরিয়ম বেগম নিজেও ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বরখাস্ত ছিলেন। তিনি পিয়ন মোসলেমকে অন্যায়ভাবে এমপিও ভুক্ত করে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বকেয়া বেতন প্রদান করেন।
এই বেতন প্রদান করেন উড়াল সেতু নির্মানের জন্য সরকার স্কুলের যে জমি অধিগ্রহণ করে সেই অধিগ্রহণের ক্ষতিপুরণের ফান্ড থেকে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মরিয়ম বেগম নিজেও বরখাস্ত ছিলেন। পরে পূণর্বহাল হয়ে বকেয়া প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা নেন বলে সূত্রে প্রকাশ। স্কুলের রেজুলেশনে উল্লেখ ছিল যে, তিনি পুণর্বহাল হলে বকেয়া বেতন নিবেন না এবং এই মর্মে তিনি শর্তে মুচলেকা দিয়েছিলেন। অথচ সেই মুচলেকা তিনি নিজেই ভঙ্গ করলেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের কামরা থেকে স্কুলের গুরুত্বপূর্ন ফাইল চুরি করেছেন পিয়ন মোসলেমের সহায়তায়। শুধু তাই নয়, ভুয়া ভাউচার তৈরি থেকে শুরু করে মরিয়মের বডিগার্ড হিসেবে কাজ করে এই মোসলেম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এক সময় কলেজে উন্নিত হয়।
মরিয়ম বেগম বর্তমানে যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে পুকুর চুরির অভিযোগ রয়েছে। তার সিমাহীন দুর্নীতির কারণে স্কুলের প্রভাতী শাখার ৬৭ জন, দিবা শাখার ৫৭ জন এবং কলেজ শাখার ২৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দীর্ঘ ১১ মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না। বেতন না পেয়ে তাঁর মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বেতনের বিষয়ে মরিয়ম বেগমের সাথে কোন শিক্ষক কথা বলতে গেলে তিনি ভয়ভীতি দেখান ও চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একদিকে শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না, অন্যদিকে মরিয়ম বেগম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। স্কুলের উত্তর পাশে রাস্তা সংলগ্ন কিছু জমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানের জন্য সরকার অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের ক্ষতিপুরণ হিসেবে সরকার স্কুল কর্তৃপক্ষকে দুই কিস্তিতে (যমুনা ব্যাংক দিলকুশা শাখা, ঢাকা এর ২৮-৪-২০২২ ইং তারিখে চেকের মাধ্যমে দুই কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংক লি: গুলশান শাখা, ঢাকা এর ১৮-৪-২০২২ ইং চেকের মাধ্যমে) পাঁচ কোটি নব্বই লক্ষ সতের হাজার দুইশত ষাট টাকা প্রদান করে। এত বিশাল টাকার কোন হিসাব তিনি শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কাউকে দেখাতে পারছে না।
৪ বছরের সেশন চার্জের টাকা, বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে নির্মিত দোকান এবং অগ্রিম অর্থ, প্রতিষ্ঠানের পুরাতন মালামাল বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন মর্মে তার বিরুদ্ধে শতাধিক শিক্ষক চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। স্কুল কাম কলেজের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তিনি বিশাল সম্পদ গড়ছেন মর্মে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে পরবর্তী সংখায় বিস্তারিত থাকছে।
এই ব্যাপারে মারিয়ম বেগমের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি তা রিসিভ করেন নাই। তার অনিয়ম দুর্নীতি ও টিচিং স্টাফদের দুরাবস্থার বিষয়ে এই প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে।