এক্সক্লুসিভকৃষিবার্তাচট্টগ্রাম

কৃষক থেকে কোটিপতি: চিনি মোসলেমের রহস্যময় উত্থান!

রাশেদুল ইসলামঃ এক সময়ের সাধারণ কৃষক, পরে শহরে এসে চালাতেন রিকশা এরপর অবিশ্বাস্যভাবে কোটিপতি ব্যবসায়ীতে পরিণত হওয়া চট্টগ্রামের মোসলেম উদ্দিন ওরফে চিনি মোসলেম এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার সম্পদের উৎস নিয়ে তোলপাড় চলছে চট্টগ্রাম জুড়ে। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। 

কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক
মোসলেম উদ্দিনের সম্পত্তির তালিকা দেখলে যে কেউ চমকে উঠবেন। চট্টগ্রামের খুলশীর জালালাবাদ হাউজিংয়ে প্রায় ২০০ শতক জমি, কৃষ্ণচূড়া আবাসিকে ১০ কাঠা করে তিনটি প্লট, নিজাম সোসাইটিতে বহুতল ভবন ‘মেহেরুন ভ্যালি’, নাছিরাবাদ হাউজিংয়ে ‘ইকুইটি অনিন্দিতা’, খাতুনগঞ্জে বাণিজ্যিক ভবন ‘এমএস ট্রেড সেন্টার’, সাতকানিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি এবং একটি বিশাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন সাধারণ কৃষক ও খাতুনগঞ্জের ব্রোকার কীভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন? 

রাজনৈতিক সংযোগই সাফল্যের রহস্য?
সূত্রমতে, চিনি মোসলেমের এই উত্থানের পেছনে কাজ করেছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক সংযোগ। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ এবং সাবেক এমপি আবু রেজা নদভীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গত ৫-৬ বছর ধরে নদভীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এবং ভোটের সময় তিনি নৌকা মার্কার পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। 

খুলশীর এক কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর বলেন, “মোসলেমের এখানে ২০ কাঠার দুটি প্লট আছে। তিনি আগে আরও জমি বিক্রি করেছেন।” 

অভিযোগ: ঋণ আত্মসাৎ, টাকা পাচার ও ছাত্রহামলার অর্থ জোগান 
আয়কর সনদে মোসলেম উদ্দিন তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে রেজিস্ট্রেড থাকলেও, অভিযোগ রয়েছে তার কথিত ‘এমজি ট্রেডিং’-এর মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ আত্মসাৎ ও বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এছাড়াও, জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলার অর্থ জোগানদাতা হিসেবেও তার নাম উঠে এসেছে। 

ছাত্র নেতা ইমন বলেন, “চিনি মোসলেম রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় আকদম আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। তিনি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নামে সরকারি টেন্ডার থেকে ল্যাপটপ আত্মসাৎ করেছেন।” 

সাংবাদিককে হুমকি ও দুদকের তদন্ত
মোসলেমের সম্পদের উৎস নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে  সাংবাদিককে হুমকি ও গালিগালাজের শিকার হতে হয়েছে। এখন সকলের চোখ দুদকের তদন্তের দিকে। 

বিদেশে পরিবার, দেশে বিতর্ক
বর্তমানে মোসলেমের স্ত্রী শিরিয়া আকতার ব্যাংককে এবং ছেলে আবদুল মোতাকাব্বির কানাডায় বসবাস করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। 

হঠাৎ করে এই বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা নাকি অন্য কোনো অন্ধকার ইতিহাস—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। দুদকের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তই এখন সকলের প্রত্যাশা।

পর্ব -১ – চলমান – পরবর্তী পর্বের জন্য চোখ রাখুন অপরাধ বিচিত্রার পাতায়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button