এক্সক্লুসিভ

টেকনাফ সীমান্তের অঘোষিত মাদক সম্রাট: মান্নান মেম্বার!

মাদক ব্যবসার দুর্গ হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের টেকনাফে একের পর এক মাদকবিরোধী অভিযান চললেও রয়ে গেছে অনেক অঘোষিত গডফাদার ধরাছোঁয়ার বাইরে। তেমনি এক নাম মান্নান মেম্বার—যিনি স্থানীয়ভাবে “ইয়াবা সম্রাট” হিসেবে পরিচিত। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি একটি সুসংগঠিত মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

র‍্যাবের সফল অভিযান: ধরা পড়লো বাবা-ছেলে, উধাও মূলহোতা!

গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলার শাহাপুরদ্বীপের মাঝেরপাড়া এলাকায় র‍্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক বাবা-ছেলেকে গ্রেফতার করে। অভিযানে ধৃতদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে মূল মালিক হিসেবে মান্নান মেম্বার এবং তার সহযোগী রশিদ উল্লাহর নাম। র‍্যাব তাদের পলাতক আসামি হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করলেও রহস্যজনকভাবে পরে চার্জশিট থেকে বাদ পড়ে যায় মান্নান মেম্বারের নাম।

২০ লাখ টাকায় চার্জশিট থেকে বাদ?

স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ মডেল থানার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে মান্নান মেম্বারের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলার প্রধান আসামির নামটি চার্জশিট থেকে সরিয়ে দেন টেকনাফ থানার (এসআই) অনুপ কুমার ধর।

আইনের ঊর্ধ্বে মাদক গডফাদাররা?

স্থানীয় জনগণের প্রশ্ন, “যেখানে একজন বাবা-ছেলে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে জেলে আছে, সেখানে মূল মালিক মান্নান মেম্বার কিভাবে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে?” অনেকে এটিকে আইনের সঙ্গে প্রতারণা এবং প্রশাসনের একাংশের দুর্নীতির ফল বলেই মনে করছেন।

একাধিক সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে মান্নান মেম্বার

বিশ্বস্ত সূত্র মতে, মান্নান মেম্বার কেবল একজন ব্যক্তি নয়, বরং একটি বৃহৎ সিন্ডিকেটের হোতা। তার অধীনে একাধিক চক্র কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা সরবরাহে সক্রিয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “মান্নান মেম্বারের পেছনে বড় রাজনৈতিক ছত্রছায়া রয়েছে, যার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলতে চায় না।”

জনমনে উদ্বেগ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনাকে ঘিরে জনমনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস হারাচ্ছে আইনের প্রতি। স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “যদি টাকা দিয়ে মামলার নাম মুছে ফেলা যায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কোথায়?”

এ ঘটনা প্রমাণ করে, দেশে মাদকবিরোধী যুদ্ধ এখনো কতটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার কারণে প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এখনই প্রয়োজন উচ্চপর্যায়ে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button