জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সাগরচুরি ৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ২০ কোটি টাকায় ৩০ টাকার এইচভিএসএজি কিট ২৪’শ টাকা

0
2142

বিশেষ সংবাদদাতা॥ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কেনাকাটায় সাগরচুরির রেকর্ড গড়েছেন সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। অভিযুক্ত  বেশ ক’জন কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদের পর ভুয়া ভাউচার বাণিজ্য জমজমাট হয়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে,দুর্নীতির ধারাবাহিকতায় কোন টেন্ডার ছাড়াই অতি সম্প্রতি এক কার্যাদেশে বর্তমান পরিচালক কার্তিক চন্দ্র দাশ ২০  কোটি টাকার আদেশ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিষ্টান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে কে দেয়া হয়েছে । কিন্তু মালামাল সরবরাহ করবে মদিনা ট্রেডিং  নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বিএমটিএফ কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আল মদিনা  টাকা বাগিয়ে নিচ্ছে। সূত্র মতে, উক্ত আদেশে  ২০ হাজার টাকার বাজার মূল্যের মেশিনের দাম ধরা হয়েছে ১লাখ ২০ হাজার টাকা। ১০ সিএফটি ফ্রিজের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বাজারে এর সর্বোচ্চ মূল্য ৩৮ হাজার টাকা। এরকম ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকার মেশিন ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে  মেশিন সরবরাহের আদেশ দেয়া হয়েছে । কোয়ারিটি কন্ট্রোল (কিউসি) শাখার জন্য একটি স্পেকট্রোফটেমিটারের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোট টাকা । এ ধরণের মেশিনের সার্ভিস বাংলাদেশে নেই । ফলে মেশিন পরিচালানাগত সমস্যায় তা অকেজেই থাকবে ।
ইতোপূর্বে)কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার আঃ মান্নান এর পরামর্শে মতে পিএইচএল শাখার জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা দিয়ে ২০০৬ সনে এইচপিএলসি, ্িজসি,স্পেট্রোফটেমিটার কেনা হলেও সার্ভিস সেন্টার/ ইনঞ্জিনিয়ার দ্বারা সাপোর্ট না থাকায় কোন মেশিন একদিনের জন্যও চলে নি । বর্তমান পরিচালক এর চাকুরীর মেয়াদ এপ্রিল/১৭ এবং মান্নানের চাকুরীর মেয়াদ অক্টোবর/১৭ পর্যন্ত । বাজার মূল্যায়ন কমিটির মতামত উপেক্ষা করে এ দুজনে সমস্থ ক্রয় আদেশ দিচ্ছেন । সাথে যুক্ত হয়েছে মনির গ্র“প । প্রতিষ্টানটির কর্মচারীদের সাথে আলোচনায় জানা যায় –  আল মদিনা কোম্পানী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর পিকনিক করার জন্য ৩ লক্ষ টাকা দেয় যা পুরোটাই বর্তমান পরিচালক নিয়ে যান . এ টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের দন্ধ চরমে । সহকারী পরিচালক ডা: আবুল কালাম আজাদকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হলেও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সূত্রে তিনি কর্মস্থলে  ফিরে এসেছেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার মুখে ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে রয়েছে অত্যাধুনিক পোলিও মিজেলস্ ল্যাবরেটরী। দেশ থেকে পোলিও মিজেলস্ নির্মূলে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার একমাত্র স্বীকৃত প্রতিষ্টান। মাইক্রোবায়োলজীক্যল ল্যাবরেটরী, স্যালাইন তৈরী ল্যাবরেটরী যেখান থেকে সারা দেশের হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। রয়েছে দেশের একমাত্র কিডনি ফ্লুইড তৈরীর ল্যাবরেটরী।প্যাথলজীক্যাল লাবরেটরীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিকেল তৈরী করে  সরকারী হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। সরকারী হাসপাতালে ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করা হয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে। রয়েছে এইডস্ নির্ণয়ের ল্যাবরেটরী। স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত এ জাতীয় প্রতিষ্টান সর্বাধুনিক ল্যাবরেটরী সমুদ্ধ যা শুরু হয়েছিল ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরী নামে । জানা গেছে,প্রতিষ্টানটির প্রধান পরিচালক পদে নিয়মিতভাবে নিয়োগ পান জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা। চাুকরীর শেষ মেয়াদে তাদের নিয়োগ করা হয়। ল্যাবরেটরীগুলোতে নিয়োগ পাচ্ছেন অভিজ্ঞতা ছাড়াই। ফলে স্থায়ীভাবে দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরতদের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে অন্ধকারে থাকেন স্বল্প মেয়াদী পরিচালক ও ল্যাবরেটরী প্রধানগণ। অন্যদিকে কাজ না করা বা ফাঁকি দেয়ায় প্রবণতা প্রাতিষ্ঠানিক  রুপ  পেয়েছে ।
জানা গেছে, কুকুর, সাপে কামড়ের ভ্যাকসিন  এবং টিটেনাস ভ্যাকসিন তৈরীর  ল্যাবরেটরী বন্ধ হয়ে গেছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালনাগত অদক্ষতায়। কুকুর, সাপে কামড়ের ভ্যাকসিন  এবং টিটেনাস ভ্যাকসিন তৈরীর  ল্যাবরেটরী বন্ধ হয়ে গেলেও পরিচালনাগত অদক্ষতার সুযোগে ক্রয়কর্মকর্তা মনির হোসেন চৌধুরী, মাহাবুব,মান্নান গং রিয়েজেন্টস কেমিকেল না কিনেই বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার ভয়া ভাউচার  দাখিল করে টাকা আত্মসাত করছে । ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন কেমিকেল, রিয়েজন্টস কেনার  তালিকার ক্রমিক নং ১৪৯ থেকে ১৮২ তে বর্ণিত বিভিন্ন কেমিকেলস এর দাম বাজার মূল্য থেকে বহুগুন বেশী ব্যয় করা হয়েছে। ভিডিআর এল এর প্রতিটি কিটের সব্বোর্চ্চ দাম ১০০০ টাকা । এর দাম দেখানো হয়েছে ১১০০০ টাকা। এইচ পাইলোরী প্রতিটির দাম সর্ব্বো” ৮০০ টাকা । ব্যয় করা হয়েছে প্রতিটির জন্য ১৪০০০ টাকা । এইচভিএসএজির কিটের দাম  ৩০ টাকার স্থলে দেখানো হয়েছে ২৪০০ টাকা ।
প্রতিবছর কোটি কোটি সরকারী টাকা ব্যয় হওযার পরেও স্যালাইন তৈরীর ইউনিট সহ চালু ল্যাবরেটরীগুলো বন্ধ করার বিভিন্ন চক্রান্ত চলছে।ফলে কম মূল্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা পাবার শেষ সম্বলটিও আমাদের নষ্ট হবে । ৫ লাখ টাকার আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন কেনা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা দিয়ে । ২ লাখ টাকার ইসিজি মেশিন কেনা হয়েছে ২২ লাখ টকো দিয়ে । এ মেসিন গুলোও  বাক্স্র বন্দী করে রাখা হয়েছে । এরকম কেনা কাটা প্রতিবছর হচ্ছে, পত্রিকায় রিপোর্ট হলেও রাঘব বোয়ালরা আছেন বহাল তবিয়তে ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 + fourteen =