মোহামেডানে তামিমের শুরু সেঞ্চুরি দিয়ে

0
1533

চাচার ক্লাব আবাহনী ছেড়ে এবার নাম লিখিয়েছেন বাবার ক্লাব মোহামেডানে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে গাজী গ্রুপের কাছে হেরেছিল মোহামেডান। ওই হারই যেন তাতিয়ে দিয়েছিল তামিমকে। কাল দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরলেন যেন ঝড় হয়ে! খুনে ব্যাটিংয়ে একাই লণ্ডভণ্ড করে দিলেন কলাবাগানকে। ১২৫ বলে ১৫৭ রানের অসাধরণ এক ইনিংস উপহার দিলেন তামিম। বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে এই বাঁ-হাতি ওপেনারের চোখ ধাঁধানো সব শটে কখনও বল হারিয়েছে, কখনও বা গাড়ির কাচ ভেঙেছে! দিনশেষে তার দল পেয়েছে প্রথম জয়। তামিম ঝড়ে কলাবাগা ক্রীড়া চক্রকে ২৪ রানে হারিয়েছে মোহামেডান। বিকেএসপির আরেক মাঠে আল আমিনের সেঞ্চুরির সুবাদে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। ফতুল্লায় দিনের অন্য ম্যাচে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে আট উইকেটের দাপুটে জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।

বিকেএসপিতে মোহামেডান তুলেছিল ৫০ ওভারে ৩০৭ রান। তামিম একাই করেন অর্ধেকের বেশি। সেই ঝড় সামলে ব্যাটিংয়ে খানিকটা গুছিয়ে উঠেছিল কলাবাগান। তবে জয়ের কাছে যেতে পারেনি। তুলেছে ২৮৩ রান।
গত লীগের শেষ ম্যাচে আবাহনীর হয়ে ১৪২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। দলবদলে এবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে। প্রথম ম্যাচেই খেললেন ১৫৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস এটিই। তামিমের ১২৫ বলের ইনিংসে ছিল ১৮টি চার, ৭টি ছক্কা।
টস জিতে শামসুর রহমানকে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৭৩ রান। দ্বিতীয় উইকেটে রনি তালুকদারকে নিয়ে তামিম তোলেন ৫৭ রান। ২০ রান করে রনি আউট হওয়ার পর দ্রুত ফেরেন রকিবুল হাসান ও রহমত শাহ। কিন্তু তামিমের ব্যাট তখন উন্মত্ত! ৬১ বলে তামিম ছুঁয়েছিলেন ফিফটি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১৩তম সেঞ্চুরি করেছেন ১০২ বলে। সেঞ্চুরি থেকে দেড়শ’ ছুঁতে লেগেছে মাত্র ২১ বল! পঞ্চম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৭৭ রানের জুটি গড়েছেন মাত্র ৪৭ বলে। জুটিতে মিরাজ করেছেন ২০ বলে ১০, তামিম ২৭ বলে ৬৫! শেষ দিকে কামরুল ইসলাম রাব্বির ১৬ বলে ২১ রান মোহামেডানকে এনে দেয় তিনশ’র বেশি রান। কলাবাগানের রান তাড়ার শুরুটা ছিল মন্থর। মোহাম্মদ আশরাফুল পরে রানের গতি একটু বাড়ান। কিন্তু কলাবাগান অধিনায়ক খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। আফগান লেগ-স্পিনার রহমত শাহর বলে ফিরেছেন ৪৯ বলে ৪৬ রানে। তৃতীয় উইকেটে ৯২ রানের জুটিতে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন মাসাকাদজা ও তুষার ইমরান। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান করছেন তুষার। তবে মাসাকাদজা পারেননি ততটা। রানের চাপ তাই বাড়ছিলই। প্রয়োজন ছিল কোনো একজনের বড় একটি সেঞ্চুরি। সেই দাবি মেটাতে পারেননি কেউ। ৬১ বলে ৬৪ করে আউট তুষার। ৮০ বলে ৬৮ মাসাকাদজা। এরপর উইকেট পড়েছে নিয়মিত। তামিমের মতো আল আমিনও সেঞ্চুরি করলেন দলের দারুণ প্রয়োজনের সময়। তার সৌজন্যেই মাঝারি স্কোরের পথে থাকা প্রাইম ব্যাংক শেষ পর্যন্ত তুলতে পারে ৩০৭ রান। জয়ের জন্য সেটি ছিল যথেষ্টর বেশি। খেলাঘর গুটিয়ে যায় ২৪৮ রানে।
বিকেএসপিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা প্রাইম ব্যাংক ম্যাচের প্রথম বলে হারায় অধিনায়ক মেহেদী মারুফকে। দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান গড়েন ৫২ রানের জুটি। ৩৯ রান করতে সৌম্য খেলেন ৬৪ বল। সাব্বির ৩৬ করেন ৩২ বলে। রান রেট নিয়ে দুর্ভাবনা না থাকলেও প্রাইম ব্যাংক শঙ্কায় ছিল নিয়মিত উইকেট হারিয়ে। সেই শঙ্কা দূর হল আল আমিনের ব্যাটে। ৬১ বলে ছুঁয়েছেন ৫০। শেষ দিকে তুলেছেন ঝড়। তাতে পরের ৫০ এসেছে ২৮ বলেই! শেষের ঝড়ে আল আমিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন আরেক তরুণ জাকির হাসান। এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান করেছেন ৩৮ বলে ৫০।
এই জুটি ভাঙলেও থামেনি ঝড়। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে আল আমিন অপরাজিত থাকেন ১০৬ রানে। এই রান তাড়ার ব্যাটিং শক্তি আসলে খেলাঘরের ছিল না। ওপেনিংয়ে ৩০ বলে ৪১ করেছেন সালাউদ্দিন পাপ্পু। চারে নেমে অভিজ্ঞ নাজমুস সাদাত ৫৪ বলে ৫৬। কিন্তু প্রাইম ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো ব্যাটিং করতে পারেননি কেউ। ফতুল্লায় এদিন দারুণ বোলিংয়ে গাজী গ্রুপের জয়ের পথ তৈরি করে দেন পারভেজ রসুল। সেই পথ দিয়ে দারুণ গতিতে ছুটলেন দুই ওপেনার। বল হাতে এক উইকেট নেয়ার পর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ করলেন নাসির হোসেন। ভিক্টোরিয়াকে উড়িয়ে দিল গাজী গ্রুপ। ভিক্টোরিয়ার ১৭৭ রান গাজী পেরিয়ে যায় ১১২ বল বাকি রেখেই! টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভিক্টোরিয়া শুরু থেকেই ধুঁকেছে। গড়তে পারেনি কোনো জুটি। চতুর্থ উইকেটে উত্তম সরকার ও শফিউল হায়াত হৃদয়ের ৪৭ রানই ইনিংসের সেরা জুটি। প্রথম চার উইকেট ভাগাভাগি করেছেন গাজীর পেসাররা। পরের চার ব্যাটসম্যানই রসুলের শিকার। ভারতীয় অলরাউন্ডার আগের ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মোহামেডান ও কলাবাগান
মোহামেডান ৩০৭/৯, ৫০ ওভারে (তামিম ইকবাল ১৫৭, শামসুর রহমান ৩৮, রনি তালুকদার ২০, মেহেদী হাসান মিরাজ ২১, কামরুল ইসলাম রাব্বি ২২। সনজিৎ সাহা ৪/৫২, নাবিল সামাদ ২/৪৪, মুক্তার আলী ২/৩০)।
কলাবাগান ২৮৩/৯, ৫০ ওভারে (মোহাম্মদ আশরাফুল ৪৬, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ৬৮, তুষার ইমরান
৬৪, মুক্তার আলী ৩৮*। কামরুল ইসলাম রাব্বি ৩/৬৯, মেহেদী হাসান মিরাজ ২/৫৬)। ফল : মোহামেডান ২৪ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তামিম
ইকবাল (মোহামেডান)।
প্রাইম ব্যাংক ও খেলাঘর
প্রাইম ব্যাংক ৩০৭/৬, ৫০ ওভারে (সৌম্য সরকার ৩৯, সাব্বির রহমান ৩৬, উন্মুক্ত চাঁদ ৩২, আল-আমিন ১০৬*, জাকির হাসান ৫০, আরিফুল হক ২৬*। ডলার মাহমুদ ২/৬৭, শামসুল আলম ২/৬২)।
খেলাঘর ২৪৮/১০, ৪৭.১ ওভারে (সালাউদ্দিন পাপ্পু ৪১, অমিত মজুমদার ৩৯, নাজমুস সাদাত ৫৬, নাজিমউদ্দিন ৩০, আরিফুজ্জামান সাগর ২৫, মাসুম খান ৩১। রুবেল হোসেন ২/৩৫, নাহিদুল ইসলাম ২/৩১, উন্মুক্ত চাঁদ ২/৩৫)। ফল : প্রাইম ব্যাংক ৫৯ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : আল-আমিন (প্রাইম ব্যাংক)।
ভিক্টোরিয়া ও গাজী গ্রুপ
ভিক্টোরিয়া ১৭৭/১০, ৪৮.৪ ওভারে (শফিউল হায়াত ২৬, উত্তম সরকার ২৯। আলাউদ্দিন বাবু ২/৩১, আবু হায়দার ২/১৯, পারভেজ রসুল ৪/২৮)।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১৮১/২, ৩১.২ ওভারে (এনামুল হক ৫০, জহুরুল ইসলাম ৫২, মনিনুল হক ৩০*, নাসির হোসেন ৪১*। মোহাম্মদ আরাফাত ১/২২)। ফল : গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য
ম্যাচ : পারভেজ রসুল (গাজী গ্রুপ)।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen + 5 =