রৌমারীতে টিআর কাবিটা প্রকল্প প্রায় ৫ কোটি টাকা কাজের নামে ঠনঠনাঠন, বিলের বেলায় শতভাগ! সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন

0
1379

মাজহারুণ ইসলাম,রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের টিআর, কাবিটা, এলজিএসপি, নন ওয়েজ ১% সহ বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪ শত টি প্রকল্পের নামে বে-নামে রাস্তাঘাট, মক্তব মাদ্রাসা, বাঁশের সাঁকো, কালভার্ট ব্রীজ ও সোলার প্যানেল স্থাপন না করেই এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, সরকার দলীয় নেতাকর্মি, ইউপি চেয়ারম্যান ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পের প্রায় ৫ কোটি টাকা জুন ক্লোজিংএ উত্তোলন করে লুট পাট করেছে। ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ড যেমন থুবরে পড়েছে তেমনি সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
ইহা ছাড়াও এমপির জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের টিআর,কাবিটা, এলজিএস ও নন ওয়েজের কর্মসুচিতে পর্যায়ক্রমে সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দের প্রায় ৫ কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় বরাদ্দ এনেছেন। এ বরাদ্দের মাধ্যমে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে রাস্তাঘাট, বাঁশের সাাঁকো, কালভার্ট ব্রীজ,মক্তব মাদ্রাসা  বসত বাড়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরে সোলার প্যানেল স্থাপন করার কথা ছিল ৩০ জুনের মধ্যে। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন মুলক কোনো কাজ না করে ভুয়া বিল-ভাউচারে সমুদয় টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) পদ শূন্য। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন রৌমারীতে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চিলমারীর পিআইও সিরাজদ্দৌলা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঝে মধ্যে রৌমারীতে এসে অফিসিয়াল কিছু কাজ করে গেলেও পিআইও কোনো দিন রৌমারীতে আসেননি। প্রকল্পের কাজ হয়েছে কিনা তদারকি করেননি। সিংহভাগ ঘুষের টাকা পাওয়ার পর বেপরোয়া ভাবে বিল দিয়েছে। কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও বাস্তবতায় কাজের কোন চিহ্ন নেই। সরেজমিনে টিআর ও কাবিটার বেশ কিছু প্রকল্প ঘুরে, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।
রৌমারীতে টিআর কর্মসূচির (সাধারণ) ১২২টি প্রকল্পে এক কোটি ৩৮ হাজার এবং টিআর (বিশেষ) ১৪০ প্রকল্পে বরাদ্দ এক কোটি ২১ লাখ টাকা। কাবিটার (সাধারণ) ৩১ প্রকল্পে এক কোটি সাত লাখ এবং কাবিটা (বিশেষ) ৩৩ প্রকল্পে প্রায় ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই সব প্রকল্পের অধিকাংশেরই কোনো কাজ করা হয়নি। প্রকল্প সভাপতিরা পিআইও অফিসকে টেন পার্সেন্ট ঘুষ দিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন ইউপি মেম্বার জানান, ঈদের আগে ২১ জুন দিবাগত সারা রাত পিআইও অফিস খোলা ছিল। ওই রাতে দশ পার্সেন্ট ঘুষের টাকা নিয়ে প্রকল্প সভাপতিদের বিল দেওয়া হয়েছে। ওই এক দিনেই বিল দেয়া শেষ করার জন্য পিআইও অফিসে বসেছিলেন রাতভর।
রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের জন্তিরকান্তা ডিসি রাস্তা হতে পুর্বে শহীদের বাড়ী পযর্ন্ত রাস্তা মেরামত ৩ লাখ সাত হাজার ৫১৭ টাকা, চর বন্দবেড় ক্লীনিকে মাটি ও সোলার প্যানেল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৬০ টাকা, একই অর্থ বছরে চর বন্দবেড় কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামত এলজিএসপির বরাদ্দ ২ লাখ টাকা, বাঘমারা ফৌজদার ক্লাবে মেরামত ১ লাখ টাকা, বন্দবেড় ইউনিয়নের বাগুয়ারচর মোখলেছুর ডাক্তারের বাড়ী হতে কাশেম মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও সোলার প্যানেল ৩ লাখ ২ হাজার টাকা, বন্দবেড় ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারে সোলার প্যানেল স্থাপন ও মাটি ভরাট ২ লাখ ৬২ হাজার ৬৭৫ টাকা, দক্ষিন খঞ্জনমারা আনছেরের বাড়ী হতে মহির মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৭৫ টাকা, চর বন্দবেড় ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাট ও সোলার প্যানেল স্থাপন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৮ টাকা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বরাদ্দ উত্তোলন করে সমুদয় অর্থ হরিলুট করেছে। ইহা ছাড়াও
চরশৌলমারী ইউনিয়নের:  চরকাজাইকাটা (পিআইও ব্রীজের) দুই পাশে মাটি ভরাট ২ লাখ ২৯ হাজার ৭২৪ টাকা, চরইটালুকান্দা মসজিদ হইতে দঃ দিকে হাবিল মাষ্টারের বাঁশঝার পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮২২ টাকা, সোনাপুর পশ্চিমের খালে বাঁশের প্যালা সাইড নির্মান ২ লাখ ২০ হাজার ১৪ টাকা, মিয়ারচর খেয়াঘাট হতে উত্তর দিকে মতিনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ১ লাখ টাকা প্রকল্পের নামে কেএম ফজলুল হক উত্তোলন করে কাজে ফাঁকি দিয়ে আত্মসাত করেছে।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সোনাভরি মুখতোলার ব্রীজ হতে উত্তর দিকে ইউসুফ আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও সোলার প্যানেল স্থাপন ৪ লাখ টাকা, ধর্মপুর গ্রামের ভাঙ্গা ব্রীজের স্থানে নতুন করে বাঁেশর সাঁকো নির্মান ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ২ লাখ টাকা, খেতারচর আব্দুল আউয়ালের বাড়ী হতে কেল্লা বাড়ির মসজিদ পর্যন্ত রাসÍা মেরামত ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৮ টাকা অনুরুপ ভাবে আত্মসাত করেছেন।
রৌমারী ইউনিয়নর চেয়ারম্যান, সবুজ পাড়া সবুরের বাড়ী হইতে খায়রুল মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ৪০ হাত যায়গায় ও বিভিন্ন গ্রামের বসত বাড়ীতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৩ টাকা, একই স্থানে নাম পাল্টিয়ে রৌমারী সবুজ পাড়া রাজুর বাড়ী হতে আনছারের বাড়ীর সামনে পাকার মাথা পর্যন্ত রাস্তা নির্মান ও বিভিন্ন গ্রামের বসত বাড়ী ও কবর সাস্থে সোলার প্যানেল স্থাপন ৯ লাখ ১৮ হাজার ৩০৩ টাকা, একই স্থানে এলজিএসপির বরাদ্দ আনছারের বাড়ী হতে খাইরুল মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ২ লাখ টাকা, লাইব্রেরীর আসবাবপত্র ও বই সরবরাহ ২লাখ টাকা,
শৌলমারী ইউনিয়নের: ঝুনকির চর ব্রীজ হতে উত্তরে আনোয়ারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ ৯ হাজার ১২০ টাকা, নতুন শৌলমারী জিঞ্জিরাম ব্রীজ থেকে দক্ষিনে জাহাঙ্গীরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৬৮ টাকা, ১ থেকে ৯ নং ওয়ার্ডের দুস্থ মহিলাদের মাঝে বিনা মুল্যে সেলাই মেশিন বিতরণ এলজিএসপির বারাদ্দে ৪ লাখ টাকা, তিনিও একই ভাবে হরিলুট করেছেন।
যাদুরচর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, আজাহার মুন্সির বাড়ি হইতে উত্তর দিকে সাইফুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ টাকা, ধনারচর পশ্চিম পাড়া বাকির বাড়ি হতে পুর্ব দিকে নুর বক্তের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় গর্ত ভরাট ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ টাকা, যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ ঘর মেরামত ও খেওয়ারচর ২টি বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৫৫ টাকা, কর্তৃমারী মাষ্টার পাড়া পাকা রাস্থা হইতে দক্ষিন দিকে সালামের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। বকবান্দা বেপারী পাড়া লালুর বাড়ী হতে দক্ষিন দিকে আজিবরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ টাকা, সায়দাবাদ বাজারে পশ্চিম পাশে রাস্তায় গর্ত ভরাট ও বিভিন্ন বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ লাখ টাকা, এলজিএসপি বরাদ্দের ধনারচর পশ্চিম পাড়া সামাদের বাড়ি হতে পুর্ব দিকে নুর বক্ত এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় গাইড ওয়াল নির্মান ২ লাখ টাকা কোন কাজ না করে ৩০ জুন উত্তোলন করে সাধু সেজে বসে আছেন। এহেন দুর্নীতি ও হরিলুটের বিষয় নিয়ে রৌমারীর পিআইও সিরাজদ্দৌলাকে কয়েকদিন মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টার পর  পাওয়া গেলে তিনি জানান, সরকার দলীয় নেতাদের ক্ষমতায়, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ও ইউপি চেয়ারম্যানদের দাপটে এবং চাপের মুখে প্রকল্প দেখার সুযোগ না দিয়েই ঈদের দোহাইতে জুন ক্লোজিং এর আগেই আমাকে বাধ্য করেছে প্রকল্পে সহি করতে। তবে রৌমারী বাস্তবায়ন অফিসের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার (পরিদর্শক) নুর আলম এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমরা মাঠে কাজ দেখে বিল দিয়েছি এবং কিছু কাজের অর্থ বিডি করে রাখা হয়েছে। কাজ দেখে বিল  দিবো বলে জানান। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চিলমারীর বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দোলা রৌমারীতে এসে প্রকল্পের কাজ হলো কিনা তা না জেনে বিল দিলেন কিভাবে এমন প্রশ্নে তাঁরা বলেন, এত কিছু দেখার সময় তাঁদের নেই। বর্তমান এমপি সাবেক এমপি,সরকার দলীয় নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও বিল দিতে বাধ্য করেছেন, তাই পিআইও দিয়েছেন। এবং ঈদের আগের বৃহ্সতিবার দলীয় নেতা কর্মিগণ (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের অর্থ আমাদেরকে না জেনে বিল পাশ করে দেওয়া হলো কেন ? এজন্য আমাকে ও আমার অফিস সহকারী রুহুল আমিনকে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের অফিসে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে অপমান অপদস্তও করেছেন। মাঠে কাজ হউক আর নাই হউক শতকরা দশ টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি পুরাটা মিথ্যা এবং বানোয়ট।
দশ পার্শেন্ট ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, ঈদের আগে দশ পার্সেন্ট ঘুস নিয়েছে পিআইওর অফিসের লোকজন, এবং ঈদের পরে অল্প কিছু বিল দেওয়া বাদ ছিলো সে গুলি প্রতি প্রকল্পে ৩ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। সেই ভাবেই নিয়ে বিল দিয়েছে অফিস। রৌমারী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত ইউএনও ফাউজুল কবীরের সরে জমিনে পরিদর্শন করে বিল দেয়ার দায়িত্ব থাকলেও পরিদর্শন না করেই তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিটা প্রকল্পে কাজ হয়নি এমন অভিযোগ কেউ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাহা উন্নয়নের অন্তরায়

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − eight =