অপরাধ বিটচত্রা ডেস্ক এভাবে প্রকাশ্যে লিচুতে ‘এনডোসালফান’ নামের অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় _ফাইল ছবি২০১২ সালে দিনাজপুরে লিচু খেয়ে ১৩ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিষিদ্ধ কীটনাশক। মঙ্গলবার মার্কিন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
গবেষকরা বলছেন, নিহত শিশুরা সবাই ‘অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়েছিল, ফলে তাদের মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি হয়। লিচু গাছের নিচে বা আশপাশে এই কীটনাশক বিষের প্রভাব থাকে।
নতুন ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১২ সালে যে সময় শিশুদের মৃত্যু হয়, সেই সময় চাষিরা তাদের শস্যক্ষেতে ‘এনডোসালফান’ নামের অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেছিল। যে কীটনাশকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ।
আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, লিচু ফলগুলোতে ওই কীটনাশক বিষ মিশে গিয়েছিল, যা খাওয়ার কারণে ২০ ঘণ্টার মধ্যে এর প্রতিক্রিয়ায়
মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হয় ও শিশুদের মৃত্যু ঘটে।
পোকামাকড় ঠেকাতে লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি ও বিভিন্ন ক্ষেতখামারে কীটনাশক মেশানো হয়। লিচু যখন বাতাসে গাছ থেকে নিচে পড়ে ফেটে যায় তখন ওই কীটনাশকের বিষ ফলে মিশে যায়। আর লিচু গাছের নিচে বা আশপাশে থেকে সেই ফল খেয়ে শিশু বা অন্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
লিচু খাবার পর শিশু মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ঘটেছিল। তবে ভারতের ঘটনা উদ্ধৃত করে ‘দ্য ল্যানচেটে’ প্রকাশিত জার্নালে বলা হয়েছিল যে, লিচু ফলের মধ্যেই থাকা একটি রাসায়নিকের কারণে এমনটা ঘটেছে। শিশু খালি পেটে লিচু খেলে এই রাসায়নিকের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটতে পারে।
সেই প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেছিলেন, লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে লিচু খাবার পর যে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে তার কারণ শুধুমাত্র এই ফলটি নয়। গবেষণা দলের প্রধান আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী লেখক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি বাংলাদেশে ২০১২ সালে যে শিশুরা লিচু খাবার পর মারা গেছে তারা ওই ফলের ভেতরের রাসায়নিকের জন্য মারা যায়নি।
২০১২ সালের ৩১ মে- ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় দিনাজপুর জেলায় লিচু খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ১৪ শিশু, এদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র একজন বেঁচে যায়। আক্রান্ত ওই এলাকায় সেইসময়ে অনুসন্ধান চালায় ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি দল। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর ওই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছিলেন যে, লিচুতে বিষাক্ত কীটনাশকের কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।
এরপর ওই ঘটনার অনুসন্ধানে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর গবেষক দল। আর মার্কিন গবেষকেরা তাদের প্রতিবেদনে বলছেন, নিষিদ্ধ কীটনাশক ‘এনডোসালফান’-এর কারণে ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল।
এখানে উল্লেখ্য, ‘এনডোসালফান’ নামের ওই কীটনাশকটি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু তারও আগে ২০০৫ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ওই কীটনাশকটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সূত্র: বিবিসি।