সর্বনাশা ইয়াবা

0
1281

তানজীন মাহমুদ/ইসমাইল আশরাফমাত্র ৫ বছর আগেও দেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ৫৫৪। এ সংখ্যা এখন দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১ হাজার ২২৫-এ দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগেরই বটে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের এ তালিকা খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা, সবার নাম-ঠিকনাও র‌্যাব-পুলিশের নখদর্পণে। তারপরও অজানা কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এদের বিরুদ্ধে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই মাত্র ৫ বছরে ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। উদ্বেগের বিষয়, শুধু যে সর্বনাশা মাদক ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা-ই নয়, কালেভদ্রে দু-একজনকে বড় ঘটনায় গ্রেফতার করা হলেও তাদের জামাই আদরে জেল-হাসপাতালে আপ্যায়ন করা হয়েছে। ইয়াবা সম্রাট আমিন হুদাকে জেলের পরিবর্তে বারডেম হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে দীর্ঘদিন রাখা এর প্রমাণ।
ইয়াবা-মাদকে জড়িত হয়ে আমাদের তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন গর্হিত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি নেশা করতে করতে একসময় ইয়াবা ব্যবসা ও অন্যান্য অনৈতিক কাজে জড়াতেও পিছপা হচ্ছে না তারা। তরুণ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হলে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশ্ন হল, সরকারি তালিকা থাকার পরও চিহ্নিতরা কীভাবে তাদের ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে? এর পেছনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ খতিয়ে দেখতে হবে। বিভিন্ন সময় এ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আশার কথা, খোদ প্রধানমন্ত্রী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কক্সবাজারে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। জানা যায়, এরই মধ্যে বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে সেটা যেন লোক দেখানো না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার।
বিভিন্ন পত্র প্রত্রিকায় খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে মরণ নেশা ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসনের জাল মূলত নিয়ন্ত্রিত হয় কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বেশিরভাগ ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া স্থানীয় অনেক প্রভাবশালীও এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে না। আমরা মনে করি- অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক, আইন মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। অন্তত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার কোনো উপায় নেই।কক্সবাজার ও টেকনাফের যে ৪৯ জন সারা দেশের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এরাই নিজেদের স্বার্থে ইয়াবা ব্যবসায়ী তৈরি করছে।
ইয়াবা মাদকের ভয়াল থাবায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। বড় শহরগুলোতে কিশোরদের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাংস্টার গ্রুপ গড়ে ওঠা, প্রতিপক্ষকে হত্যা, এমনকি আলোচিত কিশোরী ঐশী কর্তৃক পুলিশ কর্মকর্তা পিতা ও মাতাকে হত্যার পেছনে এ ইয়াবার ছোবল দায়ী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ইয়াবার আগ্রাসন থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে হলে কেবল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না; সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতার বিশেষ নজর দেয়া দরকার। তারা কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায় এসব পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিলে এবং তার নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হলে তারা এ নেশাতে জড়াবে না বলে আশা করা যায়। ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টেনে ধরতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।ঢাকা শহরের প্রত্যেক অলিগলিতে প্রত্যহ জমে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসা। সরেজমিনে জানা যায়- সর্বনাশা এ ব্যবসার অন্তরালে লুকিয়ে আছে কিছু স্বনামধন্য মুখ কিংবা পুলিশের সোর্স হিসেবে খ্যাত কিছু অপেশাদার কুচক্রী মহল।এই সকল সোর্সরাই মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারাই স্বার্থের কারণে ধরিয়ে দেয় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের আবার নিজেই ছাড়িয়ে আনে। ইদানিং কিছু অখ্যাত পত্রিকার হলুদ সাংবাদিকরা জড়িত বলে দাবী একটি মহলের। সম্প্রতি রেইন ট্রি হোটেলে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে যে বিষয়টি কাজ করে তাও কিন্তু ইয়াবা।সাদনান সাদিত ও সায়েদ আশরাফ দীর্ঘদিন থেকে ইয়াবা আসক্ত। তারা রীতিমতো নেশা করে প্রতিরাতে নব উদ্দ্যমে মেতে উঠত নতুন কাউকে ধর্ষণ করতে।জনমনে প্রশ্ন- এদের বিচার কি অদৌ হবে।এই সূত্র ধরেই খুঁজে বের করতে হবে প্রকৃত মূল ব্যবসায়ীদের।একটি সুন্দর উন্নয়নশীল দেশের ভবিষ্যত কি আটকে থাকবে সর্বনাশা ইয়াবার কড়াল গ্রাসে!! আধুনিক রাষ্ট্রের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করে অপরাধী যেই হোক দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে ও প্রকৃত বিচার করে শাস্তি প্রদান করতে হবে।এটা এখন সময়ের দাবী।।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × one =