সিইসি ৫ জানুয়ারী স্টাইলে ভোটারবিহীন নির্বাচন দিতে চায়: রিজভী

0
1433

রিপোর্টার নানা: গতকাল সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সিইসি ৫ জানুয়ারী স্টাইলে দেশে ভোটার বিহীন নির্বাচন দিয়ে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় নেয়ার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আর আইনের বাহিনী নয়, এদেরকে সরকারী দলের নীলনকশা বাস্তবায়নে লাঠিয়াল হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কয়েকদিন আগে নির্বাচনি পথ নকশা ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনী পথনকশা দিতে গিয়ে সিইসি বলেছে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সিইসি’র বক্তব্য আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে। সর্বজনমান্য নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা দরকার বর্তমানে সে অবস্থা বাংলাদেশে নেই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন-নির্বাচনি তফসিল ঘোষনার আগে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তাহলে তিনি নির্বাচনের দেড় বছর আগেই রোড ম্যাপ ঘোষণা করলেন কেন? সিইসি’র এহেন বার্তায় ভয় পাচ্ছে জনগণ। জনগণের মনে আশঙ্কা-তাহলে আবারো কী ৫ জানুয়ারী স্টাইলে তিনি দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন ? প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি টাকা খরচ করে ভোট চাচ্ছে আর বিএনপিকে ঘরোয়া সভা সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আর আইনের বাহিনী নয়, এদেরকে সরকারী দলের নীলনকশা বাস্তবায়নে লাঠিয়াল হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। তাই এরা কোন মনুষ্যত্ব, আইন-কানুন ও জনমতের ধার ধারে না। এরা আশকারা পেয়ে আওয়ামী দু:শাসনকে বিভৎস রুপ দিয়েছে। যার জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে তিতুমির কলেজের নিরীহ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান, যার দুটি চোখ পুলিশের গুলিতে অন্ধ। সুতরাং দলীয় সরকারের অধীনে সরকারের এই বাহিনীগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠবে। এগুলিও নির্বাচনী অসমান মাঠের নমূনা। এই অসমতল মাঠ সমতল করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই কাজটি তিন মাসে করতে পারা নির্বাচনের কমিশনের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এই কাজটি এখন থেকেই শুরু হওয়ার কথা। অথচ সিইসি তফশীল ঘোষণার পর সেটি দেখবেন বলেছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি (সিইসি) বলেছেন সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপনার কিছুই করার নাই। তারা সরকারি খরচে ভোট চাচ্ছে, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছে, কিন্তু আপনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এমনকি আপনার অধীনে যে নির্বাচনগুলি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলিও রক্তমাখা। সরকারী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বি বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না, জোর করে তাদের মনোনয়ন পত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে, তাদের বাড়ীতে গিয়ে হামলা করা হয়েছে এবং সর্বশেষে ভোট ডাকাতির সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে নিজেদেরকে বিজয়ী করছে। জালিমশাহীর হিং¯্র আঁচড়ে জর্জর এদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। অথচ এমন নির্বাচনকেও আপনি পূর্বের সিইসি’র মতো বলেছেন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয় বিশ্ববাসী বিশ্বাস করে যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। কিন্তু আপনি সেটিরই সাফাই গাইছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আপনার ভূমিকা ইতোমধ্যেই সর্বমহলে সমালোচিত হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কখনোই এমন দল-অনুগত কাজ করতে পারে না। কিন্তু পূর্ব থেকেই আপনি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিকট আত্মা বিক্রি করে দিয়েছেন। আপনি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের হাতিয়ার হিসেবেই কাজ করছেন। সুতরাং আপনার অধীনে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে জনমণে যথেষ্ট শংকা দেখা দিয়েছে। রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রমত্তা পদ্মার মাঝির মতো ঝড়-বাদলের নিত্য সহচর। দুর্বিনীত স্বৈরাচারী হাতের হিং¯্রতা ধেয়ে এলেও তারা অবিচলিত। দু:শাসনের কালোরাত পোহাতে আর বেশী সময় নেই। পরিবর্তনের ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। তাইতো ক্ষুদ্ধ জনগণের উদ্বেল অভিযাত্রায় প্রবল বন্যার ¯্রােতে ভেসে যাওয়ার ভয়েই নিজেদের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।
ওবায়দুল কাদেররের বক্তব্যর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে গতকাল বলেছেন, রাজনীতি করতে সাহস লাগে, মামলা মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের সেই সাহস নেই। তাহলে কাদের সাহেব আপনাদের যখন এত সাহস, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আপনারাইতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, ঘাতকের বিভৎস তান্ডব চালিয়ে হরতাল অবরোধ করে গাড়ী পুড়িয়েছিলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে নিজেদের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছেন। নিজেদের মর্জ্জি ও প্রয়োজন মাফিক সংবিধান বদল বা সংশোধন করেন, কিন্তু এখন বিএনপি-কে সংবিধানের দোহাই দেন। সংবিধানে তো সকল দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে, কিন্তু সাংবিধানিক সেই বিধান তো আপনারা মানছেন না। তিনি আরো বলেন, সভা-সমাবেশের সেই অধিকার তো আপনারা বাকশালী খাঁচায় বন্দী করে রেখেছেন। মূলত: ভয়াবহ দূর্নীতি, দুঃশাসন আর নির্যাতন নিপীড়নের কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনারা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। মাইনাস টু তত্ত্ব মেনে নিয়ে আপনার নেত্রী বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন, এটি কোন ধরণের সাহসের নমূণা ? মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এর সরকার বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বন্দী করে কিভাবে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে-তা নিশ্চয়ই কারো অজানা নেই। অন্যায়ভাবে একজনকে নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করা কী সাহসের দৃষ্টান্ত না কাপুরুষের নমূণা ? সেই মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারকে বলেছেন আপনাদের আন্দোলনের ফসল। তাদের সকল অন্যায়কে আপনারা বৈধ করে দেবেন বলেছিলেন। আপনারা আপনাদের আন্দোলনের ফসলের রক্তাক্ত জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রেখেছেন। ১/১১ এর সময় সরকারী নির্যাতনের ভয়ে কে কি বলেছেন তা এখনও জনগণ ভুলে যায়নি। সেখানে দেশবাসী নিশ্চয়ই আপনাদের সাহসের সমাচার খুব ভাল করেই জানে। সেই সময় আপনারা আপনাদের নেত্রীকে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করে নিজেরা বাঁচার চেষ্টা করেছেন। সীমান্তে যখন প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তো আপনাদের কোন সাহসী প্রতিবাদ জনগণ দেখেনি। বরং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নিজেদের দেশের মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে শঙ্কা আর শিহরণের ক্ষণে ক্ষণে নৈরাজ্যের ছায়া বিস্তার করে দেশকে বিরোধীদল শুণ্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
সরকারের স্বৈরাচারী আচরনের চিত্রতুলে ধরে রিজভী বলেণ, গত ২২ জুলাই নোয়াখালীর সেবারহাটে রাস্তার দু’ধারে নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুককে সংবর্ধনা দেয়ার সময় সেনবাগ থানার ওসি হারুন রশীদ চৌধুরী হুমকি দিয়ে জনাব ফারুককে ঢাকায় চলে যেতে বলেন। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে সেনবাগের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এতে সেনবাগ উপজেলা বিএনপি সভাপতি মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী, ৭ নং মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক সোহাগ, সেনবাগ উপজেলা বিএনপি’র সদস্য জাহাঙ্গীর শুভ, উপজেলা যুবদলের সভাপতি যুবরাজ খান ডলার ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ, উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক রাজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ হামলা চালালেও উল্টো আহত নেতাকর্মীসহ নেতৃবৃন্দের নামে বিশেষ আইনে মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী, বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম, নুর নবী বাচ্চু, একরামুল হক সোহাগ, সেনবাগ উপজেলা যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন লিটন, দুলাল, মাসুদ, ছাত্রদল নেতা স্বপন, রাজু, ফখরুল ইসলাম রুবেল, শাহাদাৎ হোসেন রাজুসহ ৪৩ জনকে আসামী করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। নেতাকর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশী হানায় এলাকায় এক আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭ নং মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর খানসহ ৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমি দলের পক্ষ থেকে পুলিশী এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া গতকাল ২৩ জুলাই ২০১৭, ভোলা জেলার লালমোহন থানাধীন ধলি গৌড়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মাসুদ করিম নীরব এর বাসাসহ ঐ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডার’রা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক তান্ডব ঘটায় এবং অসংখ্য বাড়িঘর ভাংচুর করে। পুলিশ হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে বরং উল্টো বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম নীরবসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। টাঙ্গাইলে বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ ও সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠানটি পন্ড করে দেয়। পুলিশী হামলায় বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জেলা বিএনপি’র সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ ৩২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে এবং ৮ জন নেতাকর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে।
এছাড়াও গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলাধীন হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি’র উদ্যোগে ‘কিং অব হাটহাজারী’ মিলনায়তনে আয়োজিত বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। আমি দলের পক্ষ থেকে এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 3 =