দুর্নীতি

ফ্যাসিস্টের দোসর বিটিভির সিনিয়র প্রকৌশলী মনিরুল ইসলামের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের করেছে দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভিতে গত ১০ বছরে দুর্নীতির রাম রাজত্ব কায়েম করছে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম। টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন উপায়ে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। মনিরুল ফ‍্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সাথে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে।ফলে মহাপরিচালকের কাছে জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নথি পত্র তলব করে গতকাল ২৩ জানুয়ারি-২০২৫ আবারও চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর কারণে মনিরুলের বিরুদ্ধে দুদকের একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে মনিরুলের লোমহর্ষক দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

সূত্র জানায়, মনিরুল ড. হাসান মাহমুদের প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত টেন্ডার বাণিজ্য এবং প্রকৌশলীদের বদলী বাণিজ্য করে গেছেন।
ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেশ নাম রয়েছে এই মনিরুলের। হাসান মাহমুদ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সকল অপকর্মে সহযোগী হওয়ায় খুশি হয়ে মনিরুল ইসলামকে সিনিয়র প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব প্রদান করেন নিয়ম নীতির ও বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে যা এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। সিনিয়র প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিটিভির অপর একটি প্রকল্পের প্রায় ১৭০ কোটি টাকার কাজ বেলজিয়ামভিওিক প্রতিষ্টান STUDIOTECH প্রতিষ্টানকে পাইয়ে দেন যার মালিকানা ড. হাসান মাহমুদ এবং তার ভাই রাসেল মাহমুদ। বিটিভির টেরিস্ট্রেরিয়াল সম্প্রচার এনালগ থেকে ডিজিটাল করার জন্য ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয় মনিরুলের পরামর্শে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতি ঘরে এনালগ টেলিভিশন। এসকল টেলিভিশন সেট ডিজিটাল টেরিস্ট্ররিয়াল সম্প্রচার রিসিভ করার প্রযুক্তি নাই। আর বিটিভির অনুষ্টানের যে মান তাতে করে দর্শক বিটিভির ডিজিটাল সম্প্রচার দেখার জন্য নিজেদের টেলিভিশন সেট পরিবর্তন করবে তা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। শুধুমাত্র তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে খুশি করার জন্য এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করার মুলা ঝুলিয়ে এ প্রকল্পটি নেয়া হয় যাতে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানিয়েছে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকে এখনও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন বিটিভির সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চ:দা:) মো: মনিরুল ইসলাম। সকল নিয়ম-কানুন ভেঙে টেন্ডারের অধিকাংশ কাজ দেয়া হয় নির্ধারিত ৪টি প্রতিষ্ঠানকে। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সব কাজ বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে ভাগ করা থাকলেও সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চ:দা:) মো: মনিরুল ইসলাম সকল টেন্ডার কাজের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করেন। তিনি এখনও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে আলোচনা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করেন। কম দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ না দিয়ে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে কয়েক কোটি টাকা বেশি দরদাতাকে কাজ দেন। যদি কোনো কারণে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া সম্ভব না হয় তবে পারসেন্টেন্সের মাধ্যমে ক্যাশ নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করেন। দীর্ঘ ১০ বছর থেকে বিটিভির নিজস্ব প্রধান প্রকৌশলী না থাকায় বারবার বেতার থেকে প্রেষণে প্রধান প্রকৌশলী নিয়ে আসা হয়। তারা নামে মাত্র প্রধান প্রকৌশলীর পদে থাকেন কারণ যোগদানের পরপরই মনিরুল একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীকে বশীভূত করেন।এরপরও মনিরুলের মতো সব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে না পারলে প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মনিরুল বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ করান এবং মন্ত্রী দিয়ে চাপে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে বিটিভিতে প্রধান প্রকৌশলী মনিরুলদের কাছে অনেক অসহায়! অন্যদিকে, “বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য গত ২৩/০৫/২০১৮ তারিখে ১ম পর্যায়ে ১১৮.৫০ কোটি টাকা একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এই বরাদ্ধে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের পুরাতন যন্ত্রপাতির পরিবর্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর MCR, CAR, Ingest Room, MAM, Automated Video Server System, NLE, নিউজ স্টুডিও আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল অনুষ্ঠান নিমার্ণের জন্য ০৩ টি স্টুডিওতে যন্ত্রপাতি, লাইটিং যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সংস্থাপন করার কথা। কিন্তু দরপত্র অনুযায়ী মালামাল ক্রয় না করে দেশীয় পণ্যের মিক্স করা হয় এবং লোকাল ইনস্টলেশন করায় অল্প সময়ে অনেক যন্ত্রপাতির মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়ে। এই কাজের ঠিকাদার মন্ত্রীর আপন ভাই রাসেল মাহমুদ এবং বেলজিয়াম ভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “স্টুডিওটেক”।বিষয়টি নিয়ে সাবেক মন্ত্রী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মধ্যে তোরপাড় শুরু হয়। টেন্ডার অনুযায়ী কয়েকটি যন্ত্রপাতি গোপনে সংস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয় তাদের মধ্যে। ফলে যমুনা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৩ কোটি টাকা নতুন করে পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাদের ভাগ্য খুলে যায়! বিটিভি ভাংচূরের অজুহাতে তারা অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে বলে চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লষ্টরা মনে করছেন। দুর্নীতি করে মনিরুল ইতিমধ্যে মধ্যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার নিজ এলাকায় ঠাকুরগাওয়ে রয়েছে বাগান বাড়ি, ঢাকার উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকায় রয়েছে বহুতল বাড়ি। জমিসহ নামে বেনামে রয়েছে আরো অনেক অবৈধ সম্পদ। ইদানিং ভোল পাল্টে ধুরন্ধর মনিরুল নিজেকে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এলাকার পরিচয় দেয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button