
আরিফুজ্জামান হেলাল, স্টাফ রিপোর্টার: ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থা চলছে একযুগ কাল। সম্প্রতি একটি ছাগলের বাচ্চার চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু অনিয়ম এই প্রতিবেদকের নজরে আসে। বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে, তিনি জনবল সংকটের কথা তুলে ধরেন, যা রীতিমত আশ্চর্যের বিষয়। ১১টি পদের ৬টি পদই শূন্য ১জন প্রশিক্ষণে।
জনবল সংকটের চিত্র:
মাঠ সহকারী (ভিএফএ) ০৩টি পদের একজনও নেই ২০০২ সাল থেকে, অফিস সহকারী নেই ০১/০৬/২০১৬ থেকে, ভেটেরিনারি সার্জন নেই ১২/০৯/২৪ থেকে, কম্পাউন্ডার নেই ২৬/০৯/২৪ থেকে, এফএ (কৃত্রিম প্রজনন) নেই ০১/০২/২৫ থেকে (০৩ বছরের প্রশিক্ষণে গিয়েছেন)।
অথচ বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঐ নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এই সময়ের মধ্যে এলাকায় এক টার্মে এমপি ছিলেন প্রশাসনিক বিশেষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি (যেহেতু সাবেক সচিব), পরবর্তী টার্মে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সর্বশেষ টার্মে ছিলেন স্বয়ং প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী। দায়িত্ব কাল ছিল ৭ মাস ৭ দিন (১১ই জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৪ আগস্ট ২০২৪)।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ভবেন বাইন এসকল অসঙ্গতি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার দায়িত্ব মূলত প্রশাসনিক তবে জনবল সংকটের কারণে আমাকে চিকিৎসাও দিতে হয়। কম জনবল নিয়েই চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। খোঁজ নিলে জানতে পারবেন পার্শ্ববর্তী উপজেলা বোয়ালমারীর ভেটেরিনারি হাসপাতালের অবস্থা আরো করুণ।’
ওষুধ সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘প্রতিবছর মাত্র একবার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। যা সবাইকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ দুই মাস চলতে পারে। তাই সারা বছর সঠিক ভাবে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নেয়ার জন্য কিছু ওষুধ ফ্রি দেই এবং কিছু কিনতে হয়।’
এই প্রতিবেদক পশুসম্পদ কর্মকর্তাকে আরো বলেন, ‘কি কি ওষুধ স্টোরে আছে সেটার তালিকা নোটিশ আকারে জনসমক্ষে টানিয়ে দেওয়া উচিৎ। জনগণ অবগত থাকলে সেই ওষুধ কেউ তাদেরকে দিয়ে বাজার থেকে কেনাতে পারবে না। জনগণ তার অধিকারটা আদায় করে নিতে পারবে। আরেকটি অতীব জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পশুসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি চিকিৎসকের রুমের সামনে, অন্যান্য রুমের সামনে এবং অফিসের ওয়ালে নিম্নোক্ত লেখাটি বড় বড় অক্ষরে লিখে (পশুসম্পদ কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার সহ) জনস্বার্থে নোটিশ আকারে টানিয়ে দিবেন।
‘এটা সরকারি প্রাণি চিকিৎসা কেন্দ্র, এখান থেকে চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে কাউকে একটি টাকাও দেওয়া লাগবেনা। এখানে যে ওষুধ আছে, সেই ওষুধ বাইরের থেকে কিনে আনতে বললে বা এখান থেকে দেয়া ওষুধের মূল্য চাইলে বা চিকিৎসা ফি চাইলে উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তাকে সরাসরি অবগত করুন।’
ওই প্রস্তাবের উত্তরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘মেডিসিন ও ভ্যাকসিন তালিকা মূল্য সহকারে টানানো আছে এবং তার মোবাইল নম্বরও দেওয়া আছে। অফিস চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।’
বাংলাদেশ এখনও কৃষি নির্ভর দেশ।
কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি।২০১৮ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী কৃষি খাদ বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ শতাংশ, জিডিপিতে ১৪.১০ শতাংশ অবদান রাখে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি,দারিদ্র দূরীকরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কৃষির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ট্রাক্টর ব্যবহার ব্যয়বহুল হওয়ায় সকল কৃষকের পক্ষে তা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ফলে এখনো অধিকাংশ কৃষক গরু মহিষের মতো গবাদি পশুর উপর নির্ভর করেন।
দেশের মাংসের ও ডিমের চাহিদার সিংহভাগই পূরন হয় গবাদিপ্রাণি থেকে এবং তরল দুধের চাহিদার পুরোটাই পুরন হয় দেশের গবাদিপ্রাণি থেকে। অতএব প্রাণীর চিকিৎসা সেবায় নিযুক্ত বিভাগকে অবহেলা করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।