দুর্নীতির রাঘব বোয়লেরা কি অধরাই থাকেছে

0
666

অপরাধ বিচিত্রাঃ    যদুদকের জালে সারা বছর বিভিন্ন মামলার চুনোপুঁটি আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও অধরা রয়ে যাচ্ছে রাঘব-বোয়ালরা। দুদকের বেশিরভাগ মামলায়ই আসামিদের শাস্তি হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে দুদকের নানা সীমাবদ্ধতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কিছু অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। শর্ষেতে যদি ভূত থাকে তাহলে তা দিয়ে ভূত সারানো করতটা সফল হবে, ।চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় নয়, বিও নেয়া দরকার। আমরা চাই, দুদক একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করুক। দুদকের আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হোক। সেটা শ্ন বটে।

 

উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে কমিশনে রূপান্তরের পর ওয়ান-ইলেভেনের দুই বছর বাঘের মতো জোরালো ভূমিকা পালন করেছিল দুদক, যদিও সে সময়ের দুদকের সব ততপরতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। এরপর আবার প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সংস্থাটি। ২০১৬ সালে কমিশন পুনর্গঠনের পর আবার জেগে ওঠার চেষ্টা করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই বছর ১১ মার্চ দায়িত্ব নেন দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। কমিশন পুনর্গঠনের পর সারা দেশে জোরদার করা হয় গ্রেপ্তার অভিযান। তখন দুদকের অ্যাকশন দেখে জনপ্রশাসন, ব্যাংক ও সরকারি বিভিন্ন অফিসে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকজন ব্যাংকার ও প্রকৌশলীর সঙ্গে একজন উপসচিব গ্রেপ্তার হওয়ার পর আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। এই অভিযানের পর দুর্নীতিবাজরা তটস্থ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন পেশার সচেতন মানুষ স্বাগত জানিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানায়। দেখা গেল অভিযান নিয়মিত হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রের আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও আড়ালে রয়ে যায় সমাজে ভিআইপি হিসেবে পরিচিত দুর্নীতিবাজরা। আরো শঙ্কার ব্যাপার হলো, শতাধিক আসামি দুদকের অগোচরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে গেছেন। অনেকে কারামুক্তি পেয়েই আত্মগোপন করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। আসামিদের জামিনের ক্ষেত্রে দুদকের কিছু আইনজীবীর উদাসীনতা ও অবহেলাকেই মূলত দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুদকে দক্ষ ও নিষ্ঠাবান আইনজীবী সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচিত হচ্ছে বেশ কদিন ধরেই। যে কারণে দুদক প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছে না, বেশিরভাগ মামলায় আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারছে না। আর এই কারণে দুদকের মামলায় দুদকের সাফল্য তুলনামূলকভাবে কম; মামলা নিষ্পত্তির হারও কম। দুদকের কাক্সিক্ষত ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে দুদকে নিজস্ব আইনজীবী প্যানেলকে শক্তিশালী করা এবং মামলার প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত মাপের আইনজীবী দ্বারা মামলা পরিচালনার কথাও এখন ভাবতে হবে।

 

অন্যদিকে দুদকের কর্মকাণ্ডে কাক্সিক্ষত সাফল্য না আসার কারণ হিসেবে খোদ দুদকের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িত হওয়াও এখন আলোচনায়। দুদকের প্রধান কার্যালয় ও মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। অনেকের বিরুদ্ধে কমিশন বিভাগীয় ব্যবস্থাও নিয়েছে। টিআইবির গবেষণায়ও এ বিষয়টি উঠে এসেছে। যারা দুর্নীতি দমন করবে তাদের মধ্যে দুর্নীতির চর্চা রেখে দুর্নীতি নির্মূল দুরূহ হবে। তাই দুদকের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান জোরদার করা দরকার। চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় নয়, বিচারিক ব্যবস্থাও নেয়া দরকার। আমরা চাই, দুদক একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করুক। দুদকের আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হোক। দুর্নীতি নির্মূলে কমিশনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা রয়েছে দুদকের হাতে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কাজকর্মের ওপর নজরদারি, কমিশনে জনবল ও আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে নজরদারি ও সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য বিশেষ টিম গঠন, অভিযান পরিচালনায় টাস্কফোর্স গঠন ইত্যাদি রয়েছে কর্মতালিকায়। এই কর্মপরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হোক এই প্রত্যাশা আমাদের।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − four =