স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখানে দৈনিক নতুন দিনের সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এইচ এম আমান গাজাঁসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে জানা গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সে ধুমছে ব্যবসা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকসহ এলাকার কিছু বখাটে সহযোগে সে একটি মাদক ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নোয়াখালীতে সিলেট সহ ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা আছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও আলোকিত সকাল পত্রিকার সম্পাদক ইয়াবা সহ গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আটক আছে।
তার সাথে আমানের সম্পৃক্ততার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা রেলওয়ে থানাধীন বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর মোঃ আলী আকবর আমানকে গত ১১/১২/২০১৫ ইং তারিখে ৫ কেজি ১০০ গ্রাম গাজাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেন। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য আইনে আমানের বিরুদ্ধে মামলা হয় যার মামলা নং ২২৫, তারিখঃ ৩১/১২/২০১৫ইং। তিনমাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও পূর্বের ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ে। তার এসব কাজে সার্বক্ষনিক সঙ্গ দেয় তার ২য় স্ত্রী নিলু। নিলু এলাকায় ভয়ঙ্করী হিসাবে চিহ্নিত এবং এই সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এই সিন্ডিকেট ব্লাকমেইলেং ও চাদাঁবাজীসহ অনেক অপকর্মের হোতা। এসব কাজে সোর্স হিসাবে কাজ করেন এস এম রাজ্জাক। রাজ্জাক সুদের ব্যবসায় জড়িত। নিজের সুদের ব্যবসা জমজমাট করার জন্য নিজেকে কখনো মেজর কখনো মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেন রাজ্জাক। জানা যায় কোন এককালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে কাজ করতেন। কিছুদিন পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা কার্ড পাওয়ার জন্য টাকা লেনদেন করেছিলেন। তিনি ফরিদপুরে ভুয়া পিলারের ব্যবসা করতে পাবলিকের হাতে গনধোলাই খেয়েছিলেন। এই সিন্ডিকেট অভিনব উপায়ে ব্লাকমেইলিং ও চাদাঁবাজী করে থাকে। প্রথমে লম্বা দাড়িঁওয়ালা ভুয়া মেজর রাজ্জাক ও তার সহযোগীরা কোন ব্যাক্তিকে টার্গেট করে তার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে আমান সিন্ডিকেট রাত্রিবেলা হানা দেয় তার বাড়িতে। কখনো সাংবাদিক পরিচয়ে কখনো পুলিশ পরিচয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে তাকে বিভিন্ন রকমের হুমকি দেয়। কখনো নিউজ করার হুমকি দেয় আবার কখনো প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এই সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি দক্ষিণখানবাসী। আমান ও তার এই সিন্ডিকেট প্রায় মাসদুয়েক পূর্বে রাত ১১ টায় এমনিভাবে একদিন হাজির হয় দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় জনৈক কাদিরের বাড়িতে। কাদিরকে ভুয়া ঔষধ ব্যবসায় জড়িত বলে ৯০ হাজার টাকা দাবী করে। এর কিছুদিন পূর্বে আমানের স্ত্রী নিলু কাদিরের নিকট হতে একইভাবে ২৬ হাজার টাকা নিয়ে গেছে বলে এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে। এবার কাদির টাকা দিতে অস্বীকার করায় হৈচৈ শুরু হয়। এতে প্রায় শতাধিক লোক জড় হয়। এলাকাবাসী আমান, নিলুসহ ৪ জনকে আটক করে টহল পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। আমানরা টহল পুলিশের নিকট সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হাতেপায়ে ধরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় বলে জানা যায়। এর পরের দিন কাদিরের নিকট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবী করে। কাদির টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে নিউজ করে। তাতেও টাকা প্রাপ্তি না হওয়ায় গত ০৯/১০/১৭ইং তারিখে রাতে বাসায় এসে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে দক্ষিণখান থানায় কাদির জিডি করেন, জিডি নং-৫৯০, তারিখঃ ১০/১০/১৭ইং। এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এমন স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐদিন আমার বাসার কাছে এত রাতে চেচামেচির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি উঠে ঘটনাস্থলে এসে দেখি, প্রায় শতাধিক লোক সেখানে জড় হয়। তারা বলে-এরা চাদাবাঁজ, এরা ভুয়া সাংবাদিক, ইত্যাদি, ইত্যাদি। পরে টহল পুলিশের হাতে তাদেরকে সোপর্দ করা হয়। ওরা পত্রিকায় লিখেছে-আমি নাকি কাদিরের অবৈধ ঔষধ ব্যবসায় শেল্টার দেই। কাদিরের ব্যবসার সহিত আমার কোন সম্পর্ক নাই। পিবিআই ইন্সপেক্টর সফিকুল ইসলামের বাসা ঘটনাস্থলের কাছেই। তিনিও তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত রাতে চেচামেচির শব্দ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি সেখানে প্রায় শতাধিক লোক জটলা। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে উপস্থিত লোকজন জানালেন-কয়েকজন ভুয়া সাংবাদিক ধরা পড়েছে, তারা চাদঁবাজী করতে এসেছিল। পরে টহল পুলিশের হাতে তাদেরকে সোপর্দ করা হয়। ওরা পত্রিকায় আমার নামে যা লিখেছে-তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। কাদিরের ব্যবসার সহিত আমার কোন সম্পর্ক নাই। এ ব্যাপারে ঘটনাস্থল সংলগ্ন বাড়ির মালিক সেলিম নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নামে পত্রিকায় লিখছে আমি নাকি তাদের পত্রিকা ছিড়ে ফেলেছি এবং মারধর করেছি। ঐদিন আমি আমার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গাতে ছিলাম তাহলে আমি কিভাবে ওদেরকে মারধর করলাম। আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা লিখেছে। এসব ভুয়া মেজর রাজ্জাকের কারসাজি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সদস্য ও দৈনিক সংবাদ দিগন্তের সম্পাদক এবিএম মনিরুজ্জামান এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল আমার বাসার কাছে। ঐদিন এত রাতে চেচামেচির শব্দ পেয়ে আমি সেখানে যাই। গিয়ে দেখি, প্রায় শতাধিক লোক সেখানে উপস্থিত। কয়েকজন সাংবাদিককে টহল পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। পরিচয় জিজ্ঞেস করাতে একজন নিজেকে আমান নাম বলে এবং সাংবাদিক পরিচয় দেয়। আমি পুলিশকে অনুরোধ করি তাদেরকে ছেড়ে দেবার জন্য। তারা আমার নামেও আপত্তিকর কথা লিখেছে। কাদির যদি অবৈধ ঔষধের ব্যবসা করে থাকে তাহলে কাদিরের বিরুদ্ধে নিউজ করতে পারত। কাদিরের ব্যবসা একান্তই তার নিজের এর সহিত অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা বা কোন শেল্টারদাতা আছে বলে আমার মনে হয় না। এসব গন্যমান্য ব্যাক্তিদের জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? আমানকে গ্রেফতারকারী ঢাকা রেলওয়ে থানাধীন বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর মোঃ আলী আকবরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এরা এ পেশাকে কলুশিত করেছে। আপনারা এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী কমান্ডার মোতাহার আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের কাছেই আমার বাড়ি। ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম। এসব ভুয়া সাংবাদিকরা চাদাবাজি করতেই এসেছিল। এলাকার যাদেও বিরুদ্ধে যে নিউজ করেছে তা সবই মিথ্যা বানোয়াট।
কে এই আমান?
নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার মনোহরপুর গ্রামের আব্দুল গনি পাটোয়ারীর পুত্র আমান। একসময় সৌদিআরবে শ্রমিক হিসাবে কাজ করত সে। পরবর্তীতে দেশে এসে রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকায় মুদি দোকান দেয়। অনেককে সৌদি ভিসা দেবার নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারনা করে। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন সালিশ বৈঠক করে তার দোকান নিয়ে নেয় এবং ঐ এলাকা হতে তাড়িয়ে দেয়। এরপর সে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মাদক ব্যবসাকে নির্বিঘœ করতে সে সাংবাদিকতার কার্ড কেনে। সাংবাদিকতার নামে চাদাঁবাজী ও ব্লাকমেইলিং করে। সে কাউকে কোন কার্ড, বাসার ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর পর্যন্ত দেয় না। তার ১ম স্ত্রী সন্তানসহ নোয়াখালীতে থাকেন। আমান রাজধানীর দক্ষিনখানের মোল্লারটেক এলাকায় থাকে বলে জানা গেছে।