লালমাই উপজেলার কবিরাজ ওবায়েদুল্লাহর কান্ড মানুষের সরলতাকে পূজি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা অবিবাহিত যুবকের স্ত্রীকে এনে দিবেন কবিরাজ আবাদ মিয়া! ‘জ্বিন হুজুরই সব বলবেন’ বলে প্রতারণা

0
1921

জামাল উদ্দিন স্বপন, কুমিল্লা :
এবার অবিবাহিত যুবকের ‘কথিত স্ত্রীকে’ এনে দিবেন কবিরাজ আবাদ মিয়া! এর জন্য ওই যুবককে গুণতে হবে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। ওই যুবক সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে রোগী সেজে মিথ্যা নাটক করে- ‘দীর্ঘদিন স্ত্রী আসছে না’। তখন কবিরাজ ওই যুবককে অনেক কিছু বুঝিয়ে বলে- সাড়ে ১৭ হাজার টাকা ও আধা গজ সাদা সুতির কাপড় দিলে স্ত্রীকে এনে দেয়া যাবে। এরমধ্যে অর্ধেক টাকা কাজ শুরুর সময় দিতে হবে। বাকি টাকা কাজ শেষ হলে দেওয়া যাবে। এভাবে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ কবিরাজ ওবায়েদুল্লাহর দেয়া লিফলেটের কথা বিশ্বাস করে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার জামতলী পোহনকুচা গ্রামে ওবায়েদুল্লাহর বাড়ির সামনে একটি ছোট টিনের ঘর। সেখানে তিনটি কক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে একটি কক্ষ পুরুষের, একটি মহিলা রোগীদের। অন্যটিতে হুজুরের চালান ফিস ও ধার্যকৃত টাকা রাখা হয়। বাড়ির সামনে ও টিনের ঘরের বিভিন্নস্থানে সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। সাইনবোর্ডে তার হারবাল চিকিৎসার গভঃ রেজিঃ নং-২৯৭২ লেখা থাকলেও ব্রান্ডের কোন ওষুধ তার কাছে নেই। কবিরাজ ওবায়েদুল্লাহর প্রতারণার শিকার ওই যুবক(১৩ জানুয়ারি-১৭ইং) তার পরিচয় গোপন রেখে রোগী সেজে স্ত্রী চলে গেছে বলে হুজুরের চালান করায়। ওই যুবক তার কথিত স্ত্রীর নাম দেয়- সালমা আক্তার আঁখি। এ নামের জন্য চালান ফিস বাবদ অতিরিক্ত আরও ১০২ টাকা দিতে হয়। কিন্তু ওবায়েদুল্লাহ কিংবা তার সাথে থাকা জ্বিন ওই যুবকের মিথ্যা কথা বা নাটকটি ধরতে পারেনি। উল্টো স্ত্রীকে এনে দিতে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা দাবি করে। একটি ছোট কাগজে টাকার পরিমাণ ও আধা গজ সাদা সুতির কাপড়ের কথা উল্লেখ করে তার ছেলে সাইফুল সেখানে স্বাক্ষর দেয়। ওই কাগজের সাথে ওবায়েদুল্লাহ দরবার শরীফের একটি ছোট লিফলেটও দেয়া হয়।
কবিরাজ খন্দকার মোঃ আবাদ মিয়া তার লিফলেটে উল্লেখ করেন, যারা বিভিন্ন জায়গদায় চিকিৎসা করে ধোকা খেয়েছেন। যারা বিভিন্ন সমস্যা যেমন: বিদেশ গমন সংক্রান্ত পারিবারিক, সাংসারিক, অর্থনৈতিক, মানবিক, স্বামী-স্ত্রীর মিল-মিশ, বিবাহ, বাড়িঘর বন্ধের কাজের জন্য প্রতি পয়েন্টের চালান ফিস-১০২ টাকা। জ্বিনে ধরা, ভূতে ধরা, মাতৃকা, আছর ধরা, ছেলে সন্তান হয়ে বাঁচে না, বান, টোনা, যাদু, শত্রু ও দুশমন আরও যে কোন শারিরীক রোগের জন্য প্রতি পয়েন্টে ফিস-১০২ টাকা। ইত্যাদির কাজ অলৌকিক বিদ্যায় ও জ্বিন হুজুরের সাহায্যে করা হয়। শিশু পুরুষ মহিলাদের যে কোন বড় ধরনের রোগ ইনশাআল্লাহ বিফল হইবেন না। এই ওবায়েদুল্লাহ দরবার শরীফে রোগীকে কিছুই বলতে হয় না। জ্বিন হুজুরই সব বলবেন। পুরুষ ও মহিলাদের যৌন রোগের সর্ব প্রকার চিকিৎসা করা হয়। গ্যাষ্ট্রিক, আলসার ও প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসা করা হয়।
আপনি পাথর ব্যবহার করে অনেক রোগ রাহুর গ্রাস, গ্রাহদোষ, ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকশান কাজের উন্নতি উদ্দেশ্য পূরণ আরো অনেক কিছু থেকে ইনশাআল্লাহ মুক্তি পেতে পারেন। শুধু আপনার অন্তিম বিশ্বাসই যথেষ্ট। লিফলেটে রবিবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয় বলে উল্লেখ করেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ওবায়েদুল্লাহ মানুষের সাথে প্রতারণা করে চলেছেন। অনেকের প্রশ্ন- ওবায়েদুল্লাহ দরবার শরীফে যদি সব রোগের চিকিৎসা হয়, তাহলে টাকা খরচ করে ডাক্তার হওয়ার দরকার কি। আর রোগীদেরও ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার কি।
এ ব্যাপারে কবিরাজ ওবায়েদুল্লাহর ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন ‘ভাই মিথ্যা নাটক করে কেউ এখানে আসার দরকার কি। যার স্ত্রী নিয়ে সমস্যা, সে বিয়ে করলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে’।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 + six =