সরকার আদালত ব্যবস্থাকে মুজিবীকরণ করতে চায় : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

0
789

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর ২০১৭) সকাল ১১ টায় নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সুশাসন ও নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার যদি থাকে এবং সে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংবিধানকে যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় এবং আইনের শাসন যদি প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাহলে সেখানে সুশাসন থাকে। আর এ আইনের শাসনটাকে নিশ্চিত করে স্বাধীন বিচার বিভাগ। স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সরকার সেই বিচার বিভাগকেও মুজিবীকরণ করতে চায়।’ দেশের নাগরিকরা সরকারের ভোগান্তির শেষ প্রান্তে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের গোটা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে আমার কাছে মনে হয় সবকিছু শেষের আগে যেসব অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো ঘটে এই সরকার তেমনি আচরণ করছে। দেশের জনগণ তাদের ভোগান্তির শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকে না, সেখানে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আইনের শাসনের তোয়াক্কা করে না। এ জন্যই খুন, গুম আর জঙ্গিবাদের নাটকের মধ্য দিয়ে দেশ চলছে।’
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, ‘আজকে আদালতের পাশ দিয়ে আসার সময় লক্ষ করলাম রাস্তার দুইপাশে বড় বড় ফেস্টুন টানানো আর সেখানে লেখা আছে মাদার অব হিউম্যানেটি। মনে হল যারা এই শব্দটা যার বেলায় অবতারণা করেছেন, তারা জনগণের সাথে মসকরা করেছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দেশি এবং আন্তর্জাতিক প্রতি বছর রির্পোট ছাপে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। আর সেই দেশে অন্যায় ভাবে জনগণের সমর্থন ছাড়া পেশিশক্তির বলে প্রশাসনকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে কাজে লাগিয়ে যারা ক্ষমতায় আছেন সেই ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিকে যখন মাদার অব হিউম্যানেটি বলে- সেটা জনগণের সাথে মসকরা, ঠাট্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
প্রধান বিচারপতির ছুটির প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত ২ তারিখে যা ঘটে গেলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেলেন। এর আগেও কিন্তু তিনি এক মাসের ছুটিতে গিয়েছিলেন কিন্তু তখন তার ছুটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কোনও ধরনের কথা ওঠেনি। কারণ সেই ছুটিটা ছিলো যথারীতি এবং তার নিজের ইচ্ছায়। সেই ছুটির দরখাস্ত রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করছে কি করছে না সেটা কিন্তু পত্র-পত্রিকায় আসেনি। কারণ এটা একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নিজের ছুটি তিনি নিজেই নেন এবং বঙ্গভবনের রেজিস্ট্রার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ছুটিকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ দেন এবং অনুমোদন করেন। কিন্তু এবার যখন তিনি ছুটি নিলেন তারপরের দিন বিচারপতিদের সমন্বয়ে নৈশভোজের আয়োজন করলেন।’
শেখ হাসিনা নোবেল পাওয়ার যোগ্য! এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শান্তির জন্য নয়, অর্থনীতির জন্য নয়, গুমের জন্য তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য। এমনকি ৫ই জানুয়ারির অদ্ভূত নির্বাচনের জন্য তার নোবেল পাওয়া উচিত ছিল। যেহেতু নোবেল কমিটি তাকে দেয় নাই তাই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উচিত নীলখেত থেকে একটি নোবেল কিনে তাকে দেয়া। সেখানে অনেক নোবেল পাওয়া যায়।’
একই আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘এই সরকার থাকা অবস্থায় সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের কথা ভাবা ঠিক হবে না। বাংলাদেশে সুশাসন ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির সরকার, ৪ দলীয় জোটের সরকার। সেই গণতন্ত্রের নেত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন তিনি সাধারণত দেশের বাহিরে জান না ডাক্তারের পরামর্শে নিজেকে বাঁচানোর জন্য লন্ডনে গেছেন। সেখানে তাঁর পরিবার আছে। চিকিৎসা শেষ হয় নাই এটা আল্লাহ জানে কিন্তু কোর্ট তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে যাতে করে তিনি দেশে ঢুকতে ভয় পায়।’
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী তো আসবেই। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) বলবো আপনার পাশে আপনার একমাত্র বিশেষ দূত এরশাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন এই নেত্রী কোন নেত্রী, এটা আপোষহীন নেত্রী, জেল জুলুম ক্ষমতার লোভ কোন কিছু যাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করেনি। তাকে আপনি গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে দিলেন। ডাক্তার যদি আজকে বলেন কালকে তিনি চলে আসবেন। কি করবেন আপনি? গ্রেফতার করবেন। বুঝে শুনে করবেন। আপনি গায়ের জােরে ক্ষমতায় আছেন। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আছেন। আপনাকে রক্ষা করছে জনগণ না আইনশৃঙ্খলা বাহিনি।’
সরকারের উদ্দেশ্য শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘সামনে নির্বাচন আসছে এখনি ভয় পাইছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দিলেন? আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে। কিন্তু সত্যটা কি জানেন? শেখ হাসিনা সেই নির্বাচন পরিচালনার জন্য থাকবেন না। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। বিরোধী দলের নেত্রীর সমান সমান নেত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। আপনি মনে করছেন ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকবেন সে আশায় গুড়ে বালি। যে স্বপ্নই দেখেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। এবার নির্বাচন হবে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নিবে আর সেটা হবে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ২০ দল জয় লাভ করবে। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবে এটাই হল সত্য কথা।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব এ.কে.এম মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নাজিমউদ্দিন নাজিম মাস্টার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক এম.এ হান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বেলাল চেয়ারম্যান, বগুড়া জেলা বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী মোজাম্মেল হক মিন্টু, বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন খান, মৎস্যজীবী দল ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল ইসলাম সহ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 + two =