শীতের কবলে পড়েছে সারাদেশে

0
770

শীতে কাঁপছে বাংলাদেশ। পৌষের শেষ দিকে কনকনে শীতের কবলে পড়েছে সারাদেশের নিম্ন আয় ও মধ্যবৃত্ত মানুষ। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বইছে হাঁড় কাঁপানো হিমেল হাওয়া। হিমালয় থেকে নেমে আসা হিমেল বায়ু নামছে স্থলভাগের দিকে তীব্র বেগে। শীতের সঙ্গে ঘণকুয়াশা অচল করে

ফেলেছে জনজীবন। গতকাল (শুক্রবার) শৈত্যপ্রবাহের দ্বিতীয় দিনে শীতের দাপট আরও বেড়ে চলে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত শীত ও কুয়াশায় জবুথবু হয়ে পড়েছে সর্বত্র মানুষ। তীব্র শীত ও কুয়াশায় অচলদশা নেমে এসেছে জনজীবনে। দেশের উত্তরাঞ্চল জুড়ে শীতের কামড় বেড়েই চলেছে। শৈত্যপ্রবাহ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে। গরম কাপড়ের অভাবে কেউ জবুথবু হয়ে ঘরেই বসে দিন পার করছে; আবার কেউ কেউ শীতের প্রকোপ থেকে সাময়িক রক্ষার জন্য খড়ের আগুন পোহাচ্ছে। শীতের সকালে এ দৃশ্য এখন গ্রাম বাংলার সর্বত্রই। কিন্তু কোথাও শীতার্থদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করতে দেয়া যায়নি। প্রশাসন, রাজনৈতিক দল,সামাজিক সংগঠন কেউ গরীব শীতার্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন না। বাংলাদেশ ছাড়াও আশপাশের দেশসমূহ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান ও মিয়ানমারে ইতোমধ্যে বয়ে যাচ্ছে তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার বাধার কারণে প্রায় সারাদেশে নৌপথ ও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেড়েছে ঝুঁকি। শীতের তীব্রতায় ও কুয়াশার কারণে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া হতদরিদ্র জনগোষ্ঠি। বৈরী আবহাওয়ায় কাজের অভাব ও শীতকষ্টে দরিদ্রদের অশেষ কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কোথাও শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শীতজনিত বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে ভুগছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, আমাশয়ের প্রকোপ বেড়ে গেছে। হাসপাতালে বেড়ে গেছে রোগীর ভিড়। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বর্তমান সময়ে এই শীত মওসুমের স্বাভাবিক আবহাওয়া। আগামী ২ দিনে শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে ২৭ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২২.৫ এবং ১১.৫ ডিগ্রি সে.। অনেক জায়গায় রাতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেছে। এমনকি দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও অধিকাংশ স্থানে ২০ থেকে ২২ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। পারদ আরও নামতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নেত্রকোনা ও বরিশাল অঞ্চলসহ রংপুর রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আজ (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত চলমান থাকতে পারে। মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার কারণে মানুষের স্বাভাবিক কর্মঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে। হ্রাস পেয়েছে উৎপাদনশীলতা। দরিদ্র জনেগোষ্ঠির আয়-রোজগার কমে গেছে। গতকাল শুক্রবার উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, এখন উত্তরের হিমশীতল বায়ুমালা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। একই সাথে ঊর্ধ্বাকাশের জেটবায়ু নিচে স্থলভাগের দিকে নামছে। বঙ্গোপসাগরে অস্বাভাবিক কোনো চাপ নেই। এরফলে শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে একটি মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সময় তাপমাত্রার পারদ নেমে যাবে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সে.। তাছাড়া দেশের অন্যত্র ২-৩টি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বর্তমানে বয়ে চলেছে মাঝারি থেকে মৃদু ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। পুরো মাঘ মাস জুড়ে এবার চলতে পারে কনকনে শীতের দাপট।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × five =